সম্পাদকীয় ২...
কলিকাতা তো দিল্লি নয়
রিবর্তন শুনিলেই পশ্চিমবঙ্গের হাড়েমজ্জায় কেন যেন হৃৎকম্প ধরে: কী-যেন বিপদ চুপিসাড়ে অপেক্ষা করিতেছে সুমধুর শব্দটির অন্ধকার অভ্যন্তরে। কলিকাতা বিমানবন্দর নব পর্যায় খুলিবার পর কলিকাতা আরও এক বার হৃৎকম্পের ধাক্কা সামলাইতে ব্যস্ত। ইহা অন্যায়। সমাগত পরিবর্তনকে লইয়া না মাতিয়া সন্ধিৎসু সমীক্ষকের চোখে তাহাকে দেখা অন্যায়। অথচ কলিকাতা আবারও সমালোচনায় প্রবৃত্ত: টার্মিনাল পরিবর্তনের মাস পুরায় নাই তবু কেন ইহারই মধ্যে ঝনঝন-রবে ভাঙিয়া পড়িবে কাচের শার্সিসমূহ, ঘিনঘিন নোংরায় কেন আচ্ছন্ন হইবে বিমানবন্দরের শৌচাগার, কেনই-বা যাত্রীদের মালবাহী কনভেয়র বেল্ট কাজ করিবে না, কেন উড়ানের অবতরণ কিংবা উত্তরণ সংবাদ যে ডিজিটাল বোর্ডে শোভিত হয়, তাহা পড়া যাইবে না: ঘ্যানঘানানির অন্ত নাই। কলিকাতা ভুলিয়া যাইতেছে যে ভাঙা হউক চোরা হউক নূতনের আনন্দই আলাদা। একটি গোটা নূতন টার্মিনাল পাইবার আনন্দে মাতোয়ারা বোধ করাই অভিপ্রেত। চালু হওয়াই তো আসল কথা, চালু থাকা তো নহে। শহরের উড়ালপুল না হয় রাতের নিরালায় খেলনার মতো খসিয়াই পড়িল, বিমানবন্দরের একাংশ না হয় দিনদুপুরে সর্বসমক্ষে ভাঙিয়াই পড়িল, দুনিয়া তাহাতে রসাতলে যায় না। গৌরবের ধন লইয়া গরবি না হইয়া কাঁদুনি গাওয়া অতি দুরভ্যাস। উড়ালপুল বা বিমানবন্দর যে আদৌ মিলিয়াছে, ইহাই কি কম সৌভাগ্য?
আসলে দিল্লি প্রভৃতি দেখিয়াই কলিকাতাবাসীর এই সীমাহীন প্রত্যাশা। ওদের সব কাজ করে আমাদের করে না, ওদের নূতন বিমানবন্দর তকতকে আর আমাদের নূতনটি ভঙ্গুর পঙ্কিল, ওদের পরিবর্তন সয় আমাদের সয় না, এই সব আক্ষেপের বন্যা। ভুলিলে তো চলিবে না যে, দিল্লি বিমানবন্দরের পরিচ্ছন্নতা রক্ষার জন্য এক হাজার মানুষ নিযুক্ত, এখানে মাত্র একশত ছাব্বিশ জন। ওখানে চার-চারটি এজেন্সি কাজের ভার ভাগ করিয়া লইয়াছে, এখানে একা কুম্ভ এজেন্সি সব দিক সামলাইতেছে। ওখানে কেবল প্রস্থান-বিভাগের জন্যই কুড়িটি ব্যাটারি-চালিত গাড়ি, এখানে গোটা টার্মিনালের জন্য মাত্র আটটি। কেন? কেননা, যাহাদের এ কাজের ভার দেওয়া হইয়াছে, তাহারা কম পয়সায় কাজ হাসিল করিয়াছে, কম লোক নিয়োগ করিয়াছে, কম ভাল উপকরণে নির্মাণকাজ সারিয়াছে। কেন? কেননা, এ রাজ্যে ইহাই দস্তুর।
ইহাই দস্তুর কারণ পশ্চিমবঙ্গ মনে করে, কম পয়সায় মোটের উপর কাজ সারিতে পারাই সার কথা। সেই বামফ্রন্ট আমল হইতে প্রবহমান এই বঙ্গীয় মানসধারা। তৃণমূল সরকারও সেই ট্র্যাডিশন বহন করিতেছে। উড়ালপুল বা বিমানবন্দর নির্মাণের ভার, তাহাদের রক্ষণাবেক্ষণের ভার, সবই সেই সুবুদ্ধির পন্থা। পয়সা যেন কম লাগে, কাজ যেমনই হউক। টানিয়া-টুনিয়া পাশ নম্বর পাইলেই যদি চলে, বেশি পাইবার দরকার কী। বিমান তো উড়িতেছে, কাচ না হয় ভাঙিল, প্রস্রাবাগার না হয় ভাসিল। নিচু তলার শহরের জন্য নিচু তলার মানসিকতাই বাঞ্ছনীয়। কলিকাতা তো কলিকাতাই, কলিকাতা কি দিল্লি?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.