সম্পাদকীয় ১...
অপরাধ করিলে
বশেষে ১৯৯২ সালের মুম্বই বিস্ফোরণে জড়িত অপরাধীদের শাস্তি ঘোষিত হইয়াছে। বাবরি মসজিদ ধ্বংসকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বইয়ে যে সন্ত্রাসবাদী হামলায় ২৫৭ জন নিরীহ, নিরপরাধ মানুষের অকালমৃত্যু ঘটানো হয়, দীর্ঘ কুড়ি বছর পর সেই হত্যাকাণ্ডে জড়িত অপরাধীদের দণ্ডাদেশ ঘোষণা করিল সুপ্রিম কোর্ট। ওই বিস্ফোরণকাণ্ডের পাণ্ডা বলিয়া গণ্য অনেককেই সরকার গ্রেফতার করিতে পারে নাই, তাহারা সম্ভবত প্রতিবেশী পাকিস্তান কিংবা পশ্চিম এশিয়ার কোনও না কোনও শহরে আত্মগোপন করিয়া রহিয়াছে। যাহাদের ধরা গিয়াছে, তাহাদের মধ্যে কেবল একজনকেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হইয়াছে। ইতিপূর্বে টাডা আদালত যে ডজনখানেক অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়াছিল, তাহাদের মধ্যে কেবল ইয়াকুব মেমনই সর্বোচ্চ সাজায় দণ্ডিত, বাকিরা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আসামি। এমন একটি গুরুতর মামলার বিচার ও শাস্তি ঘোষণায় দুই দশক লাগিয়া যাওয়া অবশ্যই অতি-বিলম্ব। ইহা সত্য যে, বিচারপ্রক্রিয়াটি যথেষ্ট জটিল ছিল, পদে-পদে তাহা লইয়া নূতন-নূতন প্রশ্ন ও সংশয়ও উত্থাপিত হইয়াছিল, কিন্তু আরও বড় সত্য ইহাই যে, বিলম্বিত বিচার অবিচারের শামিল হইয়া উঠিতে পারে।
সরাসরি বিস্ফোরণ ঘটানোয় যুক্ত না থাকিলেও ষড়যন্ত্রকারীদের সহিত ঘনিষ্ঠ যোগসাজশের দায়ে মুম্বই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় তারকা সঞ্জয় দত্তও শীর্ষ আদালতের রায়ে কারাদণ্ডে দণ্ডিত। তাঁহার শাস্তি লইয়া নানা মহলে, বিশেষত বলিউডের চলচ্চিত্র দুনিয়ায় হতাশা, ক্ষোভ, সমালোচনাও দেখা দিয়াছে। তাঁহার বেলায় আদালত আর একটু নমনীয় হইলে পারিত, তিনি ‘ভাল মানুষ’, ভুলক্রমে এ-কে ৫৬ বাড়িতে রাখিয়াছিলেন, তাঁহার অপরিণতবুদ্ধিই এ জন্য দায়ী, কোনও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার তাগিদ নয় ইত্যাকার নানা সহানুভূতিসূচক কথাবার্তাও প্রসঙ্গত শুনা যাইতেছে। কিন্তু শীর্ষ আদালত জনপ্রিয় চলচ্চিত্র তারকার জন্য আলাদা কোনও আইন প্রয়োগ করে নাই। দেশের যে প্রচলিত আইনে অন্যান্য অভিযুক্তের বিচার হইয়াছে, সঞ্জয়ের বেলাতেও তাহাই প্রযুক্ত হয়। তিনি বা সেই অর্থে অন্য কেহই যে আইনের ঊর্ধ্বে নন, এই বার্তাটি সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছনোও জরুরি। নায়ক বা খলনায়কের ভূমিকায় ক্রমাগত অভিনয় করিতে-করিতে তারকারা এমন বিভ্রমে পতিত হইতেই পারেন যে, রূপালি পর্দার কল্পলোকে তিনি যে অনাক্রম্যতা উপভোগ করিয়া থাকেন, বাস্তবের রুক্ষ, কঠোর জমিতেও বুঝি-বা তাহাই করিবেন। মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র বা বিস্ফোরক বাড়িতে লুকাইয়া রাখা কিংবা ব্যক্তিগত বা পারিবারিক নিরাপত্তার দোহাই দিয়া অননুমোদিত আগ্নেয়াস্ত্র মজুত করা যে অপরাধ, ইহা না বুঝিবার মতো অপ্রাপ্তবয়স্ক তো সঞ্জয় দত্ত ছিলেন না!
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে স্পষ্ট, মুম্বই বিস্ফোরণকাণ্ডে পাক সামরিক গোয়েন্দাচক্র আইএসআইয়ের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল। তা ছাড়া, মূল চক্রীরা যে প্রায় সকলেই পাকিস্তানে আশ্রিত, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং সেই দেশ হইতেই রসদ আনিয়া এখানে মজুত করিয়াছিল, আসামিদের জবানবন্দিতেই তাহার নিঃসংশয় প্রমাণ মিলিয়াছে। স্বভাবতই পাকিস্তানের তরফে ভালমানুষের মতো মুখ করিয়া ঘুরিয়া বেড়ানো কঠিন। তবে ইসলামাবাদের পক্ষে কিছুই অসম্ভব নয়। মুম্বই হামলায় প্রেরিত লস্কর-এ-তইবার জঙ্গিদের যেমন সে নিজ নাগরিক বলিয়া স্বীকার করে নাই, দাউদ ইব্রাহিম কিংবা টাইগার মেমনদের পাক আশ্রয়ের কথাও তেমন ভাবেই অস্বীকার করিতে তাহার দ্বিধা হইবে না। তবে আন্তর্জাতিক বিশ্বে জেহাদি জঙ্গিপনা ও সন্ত্রাসের এশীয় আঁতুড়ঘর বা ধাত্রী হিসাবে তাহার অনন্য ভূমিকা এই সব ঘটনায় আরও প্রকট হইবে। লস্কর-এ-তইবার প্রধান হাফিজ সইদের পাক আশ্রয়, মার্কিন হানায় নিহত ওসামা বিন লাদেনের ছয় বছরের নিরাপদ আবাসন হিসাবে অ্যাবটাবাদের সুরক্ষিত আশ্রয়, পাক তালিবান ও হক্কানি গোষ্ঠীর নিয়মিত মানববোমারু আক্রমণ গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধ পরীক্ষাকেন্দ্র হিসাবে পাকিস্তানের বিশ্বাসযোগ্যতা ধ্বংস করিয়া দিয়াছে। সর্বোচ্চ আদালতের রায় এবং মন্তব্য তাহাতেই এক নূতন মাত্রা যোগ করিল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.