অনুদানের দীর্ঘ তালিকায় নতুন সংযোজন। রাজ্যের ১০০টি নাট্যদল এবং সেই সঙ্গে দুঃস্থ যাত্রাশিল্পী, লোকশিল্পী, লোকসঙ্গীতের দল এবং অভাবী কবি-সাহিত্যিকেরাও এ বছর সরকারি অনুদান পাবেন।
শুক্রবার মহাকরণে এক সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তথা নাট্য অ্যাকাডেমির উপদেষ্টা ব্রাত্য বসু এ কথা জানিয়ে বলেন, “মা-মাটি-মানুষের সরকারের মাথায় রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশেই রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের এই আন্তরিক প্রচেষ্টা।”
কারা এলেন এই অনুদানের আওতায়? শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, এই প্রকল্পে দুঃস্থ সাহিত্যিকরা আজীবন মাসিক পেনশন পাবেন। এ ছাড়া ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে দুঃস্থ যাত্রাশিল্পী ও লোকশিল্পীদের এককালীন ৭ হাজার টাকা দেওয়া হবে। লোকসঙ্গীতের দলগুলি পাবে ৫ হাজার টাকা এবং নাট্যদলগুলির জন্য এককালীন ৩৫ হাজার টাকা অনুদান ধার্য করা হয়েছে।
বিরোধীরা অবশ্য এই অনুদান প্রকল্পের উদ্দেশ্য এবং বিধেয় নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তাঁদের একাংশের মতে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কথায় কথায় রাজ্যের ঘাড়ে ঋণের বোঝা এবং কোষাগারে অর্থাভাব নিয়ে সরব হন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে অজস্র খাতে দেদার টাকা বিলোনো চলছে। সম্প্রতি রাজ্যের ক্লাবগুলিকে যে ভাবে দান-খয়রাতি করা হয়েছে, নাট্যদল-শিল্পী-সাহিত্যিকদের জন্য অনুদানও সেই রাস্তায় আরও একটি পদক্ষেপ বলে মনে করছেন তাঁরা। শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য এই অনুদানকে খয়রাতি বলে মানতে রাজি নন। এ বারের বাজেটেই তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের খাতে অনুদান বাবদ বাড়তি অর্থ মঞ্জুর করা হয়েছিল বলে জানান ব্রাত্যবাবু। |
শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, “বহু বছর ধরেই নাট্যদলগুলি সরকারি কোনও অনুদান পাচ্ছিল না। খুব কষ্ট করেই জেলার বহু দল নাট্যচর্চা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই কারণেই তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি আমরা।” কিন্তু বিরোধীদের আশঙ্কা, পুরো বিষয়টিই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন বলেন, “সামনে পঞ্চায়েত ভোট। প্রচারের জন্য অনেক নাট্যদল লাগবে। সে কারণেই হয়তো নাটকের দলগুলিকে টাকা দেওয়া হচ্ছে।” কীসের ভিত্তিতে নাট্যদলগুলিকে বাছাই করা হল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। সূর্যবাবুর কথায়, “সরকার কোনও বিজ্ঞাপন দিয়েছে বলে তো শুনিনি। তা হলে কী করে বাছাই করা হল?” সম্প্রতি শাসক দলের বিধায়কদের সুপারিশ মেনে ক্লাবগুলিকে অনুদান দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ এসেছিল। এ বার নাট্যদল বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠদের পরামর্শ মতো কাজ হয়েছে কি না, সে প্রশ্ন উঠছে। ব্রাত্যবাবু অবশ্য দাবি করেন, রাজনৈতিক রং দেখে কোনও নাট্যদল বা শিল্পীকে বেছে নেওয়া হয়নি। তৃণমূলের এখনও পর্যন্ত কোনও দলীয় সাংস্কৃতিক মঞ্চও নেই।
শিক্ষামন্ত্রী জানাচ্ছেন, কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে দুঃস্থ শিল্পী ও নাট্যদলগুলির কাছ থেকে আবেদনপত্র চাওয়া হয়েছিল। সেই আবেদনের ভিত্তিতেই প্রাপকদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। কবে এই বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়? একাংশ দাবি করছেন, নাট্য অ্যাকাডেমি গত বছর একটি বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। তার ভিত্তিতেই তালিকা তৈরি হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, নাট্য অ্যাকাডেমির দফতরে বহু আবেদনপত্র অনেক দিন ধরে জমা পড়ে ছিল। তা থেকে ঝাড়াইবাছাই করেই নামগুলো ঠিক করা হয়েছে। কিন্তু নাট্য অ্যাকাডেমির কর্তারা জানাচ্ছেন, নাট্যদল বাছাইয়ের বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানেন না। পুরো বিষয়টিই সরকারের উপরমহল থেকে ঠিক হয়েছে বলে তাঁদের দাবি।
বামফ্রন্ট সরকারের আমলে নাট্যদলগুলির জন্য প্রকল্পভিত্তিক অনুদান বন্ধ রাখা হয়েছিল। কিন্তু নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে গত বছর জুন-জুলাই মাসে নাট্য অ্যাকাডেমি বিজ্ঞাপন দিয়ে ২০১২-১৩ অর্থবর্ষের জন্য দুঃস্থ নাট্যকর্মীদের আর্থিক অনুদান এবং সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পভিত্তিক কাজের জন্য নাট্যদলগুলির কাছে আবেদন চায়। অ্যাকাডেমি সূত্রের খবর, বেশ কিছু আবেদনপত্র জমাও পড়েছিল। কিন্তু কারা কারা অনুদান পাওয়ার যোগ্য, সেই তালিকা চূড়ান্ত হয়নি। তথ্য-সংস্কৃতি দফতরে নাট্য অ্যাকাডেমির তরফে অন্তত কোনও নামের তালিকা পাঠানো হয়নি বলেই ওই কর্তাদের দাবি। তা হলে তথ্য-সংস্কৃতি দফতর ঠিক কীসের ভিত্তিতে অনুদানপ্রাপকদের নাম চূড়ান্ত করল, সে বিষয়ে ধোঁয়াশা থেকে যাচ্ছে।
শুধু অনুদান নয়। মমতার নির্দেশে সরকারের প্রচারের কাজেও এ বার লোকশিল্পীদের সরাসরি মাঠে নামানো হবে বলে জানা গিয়েছে। গ্রামে-গ্রামে ওই শিল্পীরাই পারিশ্রমিকের বিনিময়ে রাজ্যের বিভিন্ন দফতরের প্রচারের মুখ হয়ে উঠবেন। এ দিন তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের সচিব অত্রি ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, মূলত অভিজ্ঞ এবং দুঃস্থ লোকশিল্পীদেরই নিয়েই জেলায়-জেলায় দল গড়ে প্রচারের কাজে নামানো হবে। জেলাগুলি থেকে এই ধরনের শিল্পীদের নামের তালিকাও সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। অত্রিবাবু বলেন, “বছরে যাতে ২৪ বার ওই শিল্পীরা প্রচারের কাজ পান সে দিকে লক্ষ্য রেখেই কাজের পরিকল্পনা করা হবে। প্রথম ধাপে লোকশিল্পীদের দিয়ে মহিলা ও শিশু কল্যাণ দফতরের প্রচারের কাজ শুরু হবে।” |