আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাম শরিকদের মধ্যে আসন ভাগাভাগি হয়ে গিয়েছে। এ বার প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পালা। তার আগে জেলার বিভিন্ন এলাকায় জল মেপে নিতে চাইছে সিপিএম।
এখনও পর্যন্ত যা হিসেব, তাতে বর্ধমানের গ্রামীণ এলাকায় ভাল ফল করার ব্যাপারে সংশয়ে বামফ্রন্টের বড় শরিক। বরং তাদের আশা, তুলনায় ভাল ফল হবে শিল্পাঞ্চলে। এর কারণ হিসেবে সিপিএম নেতারা গ্রামীণ এলাকায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলছেন। দলের জেলা সম্পাদক অমল হালদারের দাবি, “যাঁকেই প্রার্থী করার কথা ভাবছি, তাঁকেই ফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। শিল্পাঞ্চলে অবশ্য সন্ত্রাস -ভীতি এতটা গ্রাস করেনি।
বর্ধমানে ২৭৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ২০০টিই রয়েছে গ্রামীণ এলাকায়। স্বাভাবিক ভাবেই, পঞ্চায়েত সমিতির সংখ্যা এবং জেলা পরিষদের আসনও গ্রামীণ এলাকাতেই বেশি। তাই পঞ্চায়েত ভোটে সার্বিক ভাবে জেলায় ভাল ফল কে করবে, তা নির্ধারিত হবে গ্রামীণ এলাকা থেকেই। এখন ২৭৭টি পঞ্চায়েতের ২০৭টি এবং ৩১টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ২৬টি বামেদের দখলে রয়েছে। জেলা পরিষদে বিরোধীদের হাতে রয়েছে মাত্র তিনটি আসন।
সিপিএমের দাবি, ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটের পর থেকেই তাদের পরিচালিত বহু পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির আসল নিয়ন্ত্রণ চলে গিয়েছে তৃণমূলের হাতে। তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা পঞ্চায়েতের কাজে হস্তক্ষেপ করছে। প্রধান বা সভাপতিরা প্রাণভয়ে ওই দুষ্কৃতীদের কথা শুনতে বাধ্য হচ্ছেন। গত ১৯ মার্চ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক প্রতিনিধি দল গ্রামীণ এলাকার দশটি ঘটনা তুলে ধরে পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দেয়। কাটোয়া, কেতুগ্রাম ও মঙ্গলকোটে অনবরত তৃণমূল হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ জানানো হয়েছে। |
অমলবাবুর অভিযোগ, “পঞ্চায়েত নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে -সঙ্গে জেলার গ্রামীণ এলাকায় বিরোধীদের সন্ত্রাস বেড়েই চলেছে। পুলিশ -প্রশাসনও নিরপেক্ষ থাকতে পারছে না। বামেরা যাতে প্রার্থী দিতে না পারে, তার জন্য ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, বুধবার মাধবডিহিতে তফসিলি জাতির শংসাপত্র তুলতে গেলে তাঁদের দু’জন সম্ভাব্য প্রার্থীকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয় তৃণমূলের লোকজন। সে দিনই গলসির চান্না, হিষা, খালো ইত্যাদি গ্রামে হামলা চালানো হয়। বৃহস্পতিবার বর্ধমানের সুকুর গ্রামেও তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা আক্রমণ করেছে। তাঁর অভিযোগ, “পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করতেই তৃণমূল আক্রমণ করছে।”
সিপিএম নেতাদের আরও অভিযোগ, সন্ত্রাসের কারণে জেলার গ্রামীণ এলাকায় তাঁদের অন্তত ২১টি কার্যালয় তালাবন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। রাজনৈতিক কার্যকলাপও বন্ধ হতে বসেছে। তাঁদের আশঙ্কা, ভোট এগিয়ে এলে সন্ত্রাস আরও বাড়বে। অমলবাবু বলেন, “এর মধ্যেও দলের নেতা -কর্মীরা রাজনৈতিক কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন।” এর পরেও কিন্তু জেলার কুড়িটি পঞ্চায়েত এলাকায়, বিশেষত গ্রামীণ এলাকায় প্রার্থী দেওয়া নিয়ে চিন্তা থেকেই যাচ্ছে সিপিএম নেতাদের।
তবে তুলনায় শিল্পাঞ্চলে তাঁদের ফল ভাল হবে বলে মনে করছেন অমলবাবু। তাঁর যুক্তি, “গ্রামীণ এলাকায় পুলিশ যে রকম খোলাখুলি ভাবে তৃণমূলের হয়ে মাঠে নেমে পড়েছে, শিল্পাঞ্চলে তা চোখে পড়েনি। সব জায়গায় প্রার্থী দিতে পারব।” এ ছাড়াও অসংগঠিত, কোলিয়ারি এলাকায় সিটুর দাপট থাকায় পঞ্চায়েত ভোটে তার প্রভাব পড়বে বলেও মনে করছেন তিনি। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের পাশাপাশি কংগ্রেস এবং বিজেপি -র প্রার্থী দেওয়াও ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।
পুলিশ অবশ্য তৃণমূলকে মদত দেওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, “পুলিশ নিরপেক্ষতার সঙ্গেই কাজ করে চলেছে।” তৃণমূলের জেলা (গ্রামীণ ) সভাপতি তথা রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী স্বপন দেবনাথের প্রতিক্রিয়া, “পুরো জেলা থেকে সিপিএম ধুয়ে -মুছে যাবে। সে কথা বুঝতে পেরেই সন্ত্রাসের বুলি আওড়াচ্ছে। শিল্পাঞ্চলেও আমরাই ভাল ফল করব।” |