শুধু বোরো ধান চাষি নয়। মার্চ মাসের মাঝামাঝিতেও বৃষ্টির দেখা না মেলায় মালদহের আম চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। এ বছর জেলার প্রায় প্রতি গাছে মুকুল এসেছে। বেশিরভাগ গাছের মুকুল থেকে মটর দানার মতো গুটি বের হয়েছে। চাষিরা জানান, আগামী তিনদিনের মধ্যে সমস্ত গাছে ফল দেখা যাবে। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে তা টিকবে না বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
জেলা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন দফতরে মালদহের উপঅধিকর্তা প্রিয়রঞ্জন সানিগ্রাহী বলেন, “জেলার ২৯ হাজার হেক্টর আম বাগানের মধ্যে মাত্র ৪০ শতাংশ বাগানে সেচের ব্যবস্থা আছে। বাকি ৬০ শতাংশ বাগান বৃষ্টির জলের উপরে নির্ভরশীল। এবার জেলার ১৫টি ব্লকে প্রতিটি বাগানে মুকুল ও পরে গুটি এসেছে। কিন্তু ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে আমের গুটি ঝরতে শুরু করবে।”
আমের মুকুল দেখে উদ্যানপালন দফতরের কর্তারা মনে করেছিলেন এ বার জেলায় রেকর্ড ফলন হবে। উৎপাদন ৩ লক্ষ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু মুকুল থেকে গুটি বের হওয়ার পরেও বৃষ্টি না হওয়ায় তাঁরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের আশঙ্কা, একটানা বৃষ্টিহীন অবস্থা চলতে থাকলে বেশিরভাগ গাছের আম ঝরে পড়বে।
শুধুই কী আম! বছরের শুরুতে শীতের জন্য বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় জেলার চাষিরা ৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করতে পারেনি। জেলায় যে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে বৃষ্টির অভাবে চারার বৃদ্ধি কমে গিয়েছে। হবিবপুর, বামনগোলা, গাজল, পুরাতন মালদহে জলস্তর নেমে যাওয়ায় অনেক নলকূপ অকেজো হয়েছে। নদী পুকুর শুকিয়ে যাওয়ায় জলের সমস্যা দেখা দিয়েছে।
জেলা কৃষি দফতরের উপ অধিকর্তা সজল ঘোষ বলেন, “কম বৃষ্টির জন্য এখনও বোরো, ভুট্টা, মুগ ডাল চাষের বিশেষ ক্ষতি হয়নি। তবে এ ভাবে কিছুদিন চললে সমস্ত চাষে ক্ষতি হবে।” কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর জেলার ১৫টি ব্লকের ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান, আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা, দুশো হেক্টর জমিতে মুগ ডালের চাষ হয়েছে। নদী পুকুরের জলের ভরসায় যে চাষিরা বোরো চাষ করেছে তাঁদের মাথায় হাত। জেলা পরিষদের কৃষি, সেচ ও সমবায় স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ দূর্গেশ সরকার বলেছেন, “জলের অভাবে যাতে চাষের কাজ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য নদী সংস্কারের একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরির চেষ্টা চলছে। কিন্তু কেউ আগ্রহ দেখাচ্ছে না। নদী সংস্কার হলে এ সময় নদীতে প্রচুর জল থাকত। বসে থাকতে হত না। বৃষ্টি না হওয়ায় চাষের কাজ মার খেতে বসেছে।” |