খাট থেকে পড়ে জখম শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও সময় মতো চিকিৎসা শুরু না-হওয়ায় মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠল কর্তৃপক্ষের নামে। মঙ্গলবার রাতে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ওই ঘটনাটি ঘটেছে। জরুরি বিভাগে চিকিৎসক ঠিক মতো চিকিৎসা করেননি এবং ভর্তির পর চিকিৎসক সময় মতো ওয়ার্ডে যাননি অভিযোগ তুলে মৃতের বাড়ির লোকেরা পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে এই দিন শিশুটির ময়না তদন্তও হয়েছে। অন্য দিকে, শিলিগুড়ির তিলক রোডে একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসার গাফিলতিতে রোগিণী মৃত্যুর অভিযোগ তুলেছেন পরিবারের লোকেরা। ক্ষুব্ধ পরিবারের কয়েক জন এই দিন নার্সিংহোমে ভাঙচুরও করে। রোগীর লোকেরা চিকিৎসায় গাফিলতিতে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ জানান। পরে পুলিশের কাছে পাল্টা নার্সিংহোম ভাঙচুরের অভিযোগ করেন কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত শিশুর নাম নন্দ দাস (৩)। তার বাড়ি ফকদইবাড়িতে। মঙ্গলবার রাতে বাড়িতে খাট থেকে পড়ে গেলে তার মাথায় চোট লাগে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, খাটের ধারে রাখা শিলনোড়ায় মাথা গুঁতো লেগে গুরুতর আঘাত পায় শিশুটি। বুধবার সাড়ে ৭টা নাগাদ তাকে জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তখন চিকিৎসক ছিলেন না। ডাকাডাকির পর চিকিৎসক এসে পরীক্ষা করেই ভর্তির জন্য ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেন। দ্রুত অক্সিজেন দেওয়ার দরকার বলে জানান। অভিযোগ, শল্য বিভাগে ভর্তি করানোর পর সেখানে শিশুকে দেখতে আসেননি কোনও চিকিৎসক। নার্স এবং চতুর্থ শ্রেণির অস্থায়ী কর্মীরা অক্সিজেন লাগাতে চেষ্টা করেন। গ্যাস সিলিন্ডারের ঢাকনা খুলে সেটি লাগাতে পারছিলেন না। রোগীর পড়শি নয়ন মুখোপাধ্যায়, বাবলু দাসরা জানান, তাঁরা সিলিন্ডারের ঢাকনা খুলে দিলে স্বাস্থ্যকর্মীরা ফের গড়িমসি করেন। অন্তত আধ ঘণ্টা পর যখন চিকিৎসক পৌঁছন বলে তাঁদের অভিযোগ। ততক্ষণে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।
রোগীর বাবা পেশায় দিনমজুর সুকুমার দাস বলেন, “সময় মতো চিকিৎসা শুরু হলে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হলে হয়ত বাঁচানো যেত।” হাসপাতালের সুপার সঞ্জীব মজুমদার জানান, কেন চিকিৎসকরা দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেননি তা দেখা হবে। তা ছাড়া অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা জরুরি বিভাগেই থাকা উচিত। সেখানেই কেন সেই ব্যবস্থা হয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবীর ভৌমিক বলেন, “হাসপাতালের জরুরি বিভাগেই ভাল করে রোগী দেখা দরকার। তা কেন হয়নি খোঁজ নেব। প্রয়োজনে তদন্ত কমিটি গড়ে খতিয়ে দেখা হবে।” এর পাশাপাশি, নার্সিংহোমে মৃতের পরিবার চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তোলার পরে মৃতদেহটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।
অন্য দিকে তিলক রোডের নার্সিংহোমে যে রোগীর মৃত্যু হয়েছে তার নাম পার্বতী বিশ্বাস (৪৭)। বাড়ি একতিয়াশালে। চিকিৎসক শ্যামাপদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধীনে ভর্তি ছিলেন। মৃতের ছেলে দেবদাসের অভিযোগ, চিকিৎসক প্রথমে জানান খাদ্যনালীতে ফুটো রয়েছে। সে কারণে অস্ত্রোপচার করেন। কয়েক দিন পরে কোনও আলট্রাসোনোগ্রাফি না করে জানান খাদ্যনালীতে আরও একটি ফুটে রয়েছে। অন্যত্র নিয়ে যেতে চাইলেও বলেন এ বার অস্ত্রোপচার হলেই ভাল হয়ে যাবে। ৯ মার্চ ফের অস্ত্রোপচার করেন। এর পর জানান, রোগী সুস্থ হয়ে গিয়েছে। দেবদাস বলেন, “চিকিৎসায় গাফিলতি আছে। সে কারণে মা মারা গেলেন। পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছি।” পরিবারের লোকেরা অবশ্য ভাঙচুরের অভিযোগ অস্বীকার করেন। শ্যামাপদবাবুর দাবি, “অভিযোগ ঠিক নয়। ভর্তির দিন অস্ত্রোপচার করা হয়। এ দিন কাশি উঠলে শ্বাসনালীতে কফ আটকে মৃত্যু হয়।” |