বিনপুরের পরে তৎপরতা, রানিবাঁধের ভরা মাঠে খুশি মমতা
মুখ রাখল রানিবাঁধ। ভিড়ের নিরিখে জঙ্গলমহলের বিনপুরকে টেক্কা দিল রানিবাঁধের রাউতোড়া মাঠ। বুধবার দুপুর ২টোর ঠা ঠা রোদ্দুরেও বাঁকুড়ার এই এলাকায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক জনসভায় অনেক বেশি লোক হল।
কত লোক? এ দিন সন্ধ্যায় বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার দাবি করলেন, “প্রায় ৫০ হাজার লোক এসেছিলেন।” জেলা প্রশাসন সূত্রে অবশ্য জানা যাচ্ছে, অত না হলেও দশ থেকে বারো হাজার লোক হয়েছিল। যা দেখে দৃশ্যতই খুশি মমতা বিনপুরের তুলনা টেনে বললেন, “বিনপুরের সভা দু’ঘণ্টা আগে হওয়ায় মানুষ সে ভাবে আসতে পারেননি। তাতেই কিছু মিডিয়া বলে দিল, জঙ্গলমহলের মানুষ আমাদের পাশে নেই। আজকে এত মানুষের সমাবেশ ফের প্রমাণ করল জঙ্গলমহলের বাসিন্দারা আমাদের পাশেই রয়েছেন।”
মঙ্গলবার বিনপুরে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় মেরেকেটে হাজার পাঁচেক লোক হয়েছিল। শাসকদলের একাধিক রাজ্য নেতার যুক্তি ছিল, বিনপুরে লোকবসতি কম। রানিবাঁধের রাউতোড়া কিন্তু জনবসতির নিরিখে বিনপুরের থেকেও পিছিয়ে। জঙ্গলঘেরা মাঠের চারপাশে হাতেগোনা কিছু আদিবাসী গ্রাম ছাড়া বসতি তেমন একটা নেই।
তা হলে ভিড় হওয়ার রহস্য কী?
বুধবারের জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী। অভিজিৎ সিংহের তোলা ছবি।
ঘটনা হল, এই ভিড়ের বেশির ভাগটাই সংগঠিত। সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক তথা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্রের কটাক্ষ, “মুখ্যমন্ত্রীর মিথ্যা প্রতিশ্রুতি শুনে শুনে মানুষ ক্লান্ত হয়ে তাঁর সভায় যাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। গত ডিসেম্বরে এই জেলারই ওন্দায় তাঁর সভায় ভাল ভিড় হয়েছিল। কিন্তু, এ দিন মাঠ ভরাতে জেলার অন্য প্রান্ত তো বটেই, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর থেকেও লোক আনতে হয়েছে তৃণমূলকে।”
তৃণমূল সূত্রের খবর, বিনপুরের সভায় লোক না হওয়ায় খোদ মুখ্যমন্ত্রী ক্ষুব্ধ বুঝতে পেরে রানিবাঁধে ভিড় বাড়াতে দলীয় তরফে তৎপরতা শুরু হয়েছিল মঙ্গলবার বিকেল থেকেই। আগে ঠিক ছিল, সভার জন্য প্রায় ৯০টা বাস নেবেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত বাস চেয়ে চাপ দেওয়া শুরু হয় জেলা বাস মালিকদের একাংশকে। তবে, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলায় পরীক্ষার্থীদের স্বার্থে সভার জন্য আর বাস ছাড়তে রাজি হননি বাস মালিকেরা। বাঁকুড়া শহরে বাস মালিকদের অফিসে অনেক রাত পর্যন্ত দু’পক্ষের বৈঠক চলার পরে অতিরিক্ত বাস সভার জন্য পাওয়া যায়।
জেলার এক তৃণমূল নেতার কথায়, “দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে রানিবাঁধের সভায় বেশি লোক নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ এসেছিল। কিন্তু, বাস কম পাওয়ায় ট্রেকার, মিনিট্রাক, ট্রাক্টরও ভাড়া নেওয়া হয়। এ ছাড়া দলের নেতারাও নিজেদের গাড়িতে কর্মীদের চাপিয়ে সভায় নিয়ে যান।” বুধবার সকালে খাতড়া শহরে তৃণমূলের এক জেলা নেতার বাড়িতে বৈঠক করেও সভায় বেশি করে লোক নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ দিন সভায় দেখা গেল, খাতড়া তো বটেই, সোনামুখী, বড়জোড়া, কোতুলপুর, বাঁকুড়া শহর, ছাতনা ব্লক থেকে প্রচুর তৃণমূল কর্মী-সমর্থককে আনা হয়েছে। পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের লোক ছিলেন।
মুখ্যমন্ত্রীর সভার জন্য আনা বাস। ছবি: উমাকান্ত ধর
এ সবের মিলিত ফল, মুখ্যমন্ত্রীর সভায় ভিড়। এটাও ঠিক, বিনপুরের মতো রানিবাঁধে রোদের মধ্যে সকলকে দাঁড়াতে হয়নি। ছাউনির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। দুপুর ২টোয় সভা শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে থেকেই মাঠে ভিড় বাড়তে থাকে। মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় সভায় আসতেই তাঁকে দেখার জন্য দর্শকদের মধ্যে হট্টগোলও শুরু হয়। বাঁকুড়ায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয়, বারিকুলে ডিগ্রি কলেজ, খাতড়ায় মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল-সহ একগুচ্ছ ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। জঙ্গলমহলে এ বার ২৫ হাজার পরিবার ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে ১০০ দিনই কাজ পেয়েছেন বলে ফের দাবি করেন মমতা। রাউতোড়াকেই সভাস্থল হিসাবে কেন বেছেছেন, তার ব্যাখ্যাও এ দিন দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দারুণ। আগে এখানে মাওবাদীদের উপদ্রবে লোকে আসতে ভয় পেতেন। সভা-সমিতিও হত না। এখন জঙ্গলমহল শান্ত। তাই এখানেই সভা করলাম।” জঙ্গলমহলের কিছু এলাকায় মাওবাদীরা নতুন করে সংগঠন গড়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, “শান্তি বিঘ্নিত হলে জঙ্গলমহলের মানুষই তার প্রতিরোধ করবেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.