নদী ভাঙনে কপাল পুড়েছে লালগোলার চর গয়েশপুর গ্রামের। এক সময় গ্রাম ছিল ভাগীরথীর পূর্বপাড়ে। প্রায় ছয় দশক আগের নদী ভাঙনের ফলে গ্রামটি এখন চলে গিয়েছে নদীর পশ্চিমপাড়ে।
পঞ্চায়েত ভবন, থানা, ব্লক অফিস, কৃষি দফতর, ব্লক ভূমি সংস্কার দফতর, খাদ্য দফতর-সহ যাবতীয় সরকারি কার্যালয় রয়েছে নদীর পূর্বপাড়ে। গ্রাম থেকে ওই সব কার্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ১৮ কিলোমিটার। সাগরদিঘির সীমান্ত লাগোয়া চর গয়েশপুরের বাসিন্দাদের কোনও সরকারি দফতরে যেতে প্রথমে পেরোতে হয় ভগবানগোলার ফেরিঘাট। তার পর ৩ কিলোমিটার হাঁটলে মেলে যশোইতলা বাসস্টপ। সেখান থেকে রাজ্য সড়ক ধরে অবশেষে পৌঁছনো যায় ব্লক বা থানা কার্যালয়ে।
অথচ এ সবই এক সময়ে গয়েশপুরের হাতের নাগালে ছিল। সে সমস্যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সয়ে গেলেও রেশন দোকান ‘হারিয়ে’ যাওয়ায় গ্রামের হাড় হাভাতে মানুষগুলোকে এখন নদী, ভ্যান রিকশা উজিয়ে রেশন তুলতে হচ্ছে। চর গয়েশপুর গ্রামের রেশন দোকানটি এখন নদীর পূর্বপাড়ে ৪ কিলোমিটার দূরে জগন্নাথপুর গ্রামে। গ্রামের বাসিন্দা জানমহম্মদ শেখ বলেন, “এ এক ঝক্কি। এই পথ পেরিয়ে রেশন তুলতে সপ্তাহে এক দিন জগন্নাথপুর যাওয়া কী চাট্টিখানি কথা। তার খরচ যে রেশন তুলে পোষায় না গো!” আর তাই গয়েশপুরের অনেকেই এখন রেশন দোকানমুখো হন না। ইচ্ছে থাকলেও গ্রামের অনেকেই সাপ্তাহিক রেশন দ্রব্যের সুবিধা নিতে পারেন না। তাঁদের দাবি, অন্তত রেশন দোকানটি গয়েশপুরে ফিরিয়ে আনা হোক। তবে সে দাবি জেলা প্রশাসনের কানে ওঠেনি আজও।
খাদ্য ও সরবরাহ বিভাগের লালবাগ মহকুমা নিয়ামক অনিল রায় বলেন, “ওই গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। দু’আড়াই হাজার জনসংখ্যা না হলে সচরাচর নতুন রেশন দোকানের অনুমোদন দেওয়া হয় না। ওই গ্রামটি ভৌগলিক অবস্থানগত ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। তার দায় রেশন দফতর কী করে নেয়?” তবে ভরসার কথা, আশ্বাস। খাদ্য নিয়ামকও তা দিচ্ছেন, “চর গয়েসপুরে নতুন রেশন দোকানের অনুমোদন দেওয়ার জন্য সুপারিশ রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। জেলা খাদ্য ও সরবরাহ বিভাগের নিয়ামক তা নিয়ে বাবনা চিন্তা করছেন। এখন দেখা যাক।”
গ্রামের ইলিয়াস মণ্ডল বলেন, “প্রায় চার দশক আগের কথা। তখন লালগোলার বিধায়ক সাত্তার সাহেব মন্ত্রী। তিনিই আমাদের গ্রামে ভোটের বুথ করে দেন।” ওই গ্রামে আর রয়েছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ব্যাস। ওই টুকুই। গ্রামের বুক চিরে চলে যাওয়া দেড় কিলোমিটার রাস্তার পুরোটাতে আজও মোরাম বিছানো হয়নি, আংশিক হয়েছে। লালগোলা ব্লকের ওই গ্রামের ছেলেমেয়েরা পড়তে যায় ৪ কিলোমিটার দূরে সাগরদিঘি থানার কাবিলপুর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। জন্ম-মৃত্যু-বসবাস-সহ অনান্য বিষয়ের শংসাপত্রের জন্য নদীপার হয়ে ৮ কিলোমিটার দূরে দেওয়ানসরাই গ্রামের পঞ্চায়েত ভবনে তাঁদের ছুটতে হয়।
চর গয়েসপুর থেকে লালগোলা ব্লক কার্যালয়ের দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার, ভগবানগোলা ব্লক কার্যালয়ের দূরত্ব ১২ কিলোমিটার, সাগরদিঘি ব্লক কার্যালয়ের দূরত্ব ১৯ কিলোমিটার। ওই গ্রাম থেকে নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য সিপিএমের মহম্মদ জাকারিয়া বলেন, “কিলোমিটারের হিসাবে সাগরদিঘির দূরত্ব সামান্য বেশি হলেও নদী পারের ঝমেলা নেই। ফলে চর গয়েসপুরকে লালগোলা থেকে বিচ্ছিন্ন করে সাগরদিঘির অর্ন্তভূক্ত করা হলে হাজার দেড়েক মানুষের প্রতিদিনের অনেক সমস্যা থেকে রেহাই মিলবে। এ বিষয়ে গ্রামের সবাই মিলে মিটিং করে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
লালগোলার বিডিও প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, “হয় রাজ্য সরকারকে এ ব্যাপারে নোটিফিকশন জারি করতে হবে, নয়তো বিধানসভা থেকে প্রস্তাব পাশ করাতে হবে। তবেই লালগোলা থেকে বিচ্ছিন্ন করে চর গয়েসপুরকে সাগরিদিঘির অন্তর্ভূক্ত করা যাবে। এ ব্যাপারে গ্রামের লোকজন লিখিত আবেদন করলে সুপারিশ-সহ ওই আবেদনপত্র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছেও পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”
কিন্তু তাঁদের আর্জি পাশ হবে তো? |