রাত দেড়টা। কুঁড়ে ঘরের ভিতর থেকে ভেসে আসছে তার গর্জন। কখনও সখনও অন্ধকার কুঁড়ে ঘরের ছোট্ট জানলার ভিতর থেকে তার জ্বলন্ত দুটো চোখ আর চেহারাটা আবছাভাবে ভেসে ভেসে উঠছে। সন্ধ্যা গড়িয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত সে পায়চারি করছিল ওই টালির চালের বাড়িটির ভিতরে। শেষ পর্যন্ত ভোরের দিকে তখন বনকর্মীদের কয়েকজনের চেষ্টায় খাঁচাবন্দি করা সম্ভব হল গ্রামে ঢুকে পড়া চিতাবাঘটিকে।
রাজধানী রাঁচি থেকে চল্লিশ কিলোমিটার দুরে মান্ডার ব্লকের একটি গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে। বন দফতরের কর্মীরা জানিয়েছেন, দুপুরের দিকে চিতাবাঘটি গ্রামে ঢুকে পড়ে। কিন্তু কেউ টের পায়নি। বিকেলের দিকে খেতে কর্মরত শিব গোপ নামে স্থানীয় এক যুবককে চিতাবাঘটি আক্রমণ করে।
ঘটনার পরেই চিৎকার করতে থাকে গ্রামবাসীরা। কয়েকটি কুকুরও সেটির দিকে তেড়ে যায়। চিতাবাঘটিকে তাড়াতে গ্রামবাসীরাও সেটিকে ধাওয়া করে। কিন্তু গ্রাম থেকে না বেরিয়ে সে একটি তালাবন্ধ মাটির বাড়ুর পিছনের ফাটল দিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ে। গ্রামবাসীরা বন দফতরকে খবর দেয়। বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও চিতাবাঘটিকে খাঁচাবন্দি করতে তাঁদের কালঘাম ছুটে যায়। |
বনকর্তারা জানিয়েছেন, দু’টি কারণে ঘুম পাড়ানি গুলি চালানো যায়নি। ওষুধের ডোজ কম হলে চিতাবাঘটি পাল্টা আক্রমণ করতে পারত। তাতে আশপাশে ভিড় করা গ্রামবাসীদের ক্ষতি হতে পারত। আর ওষুধের ডোজ বেশি হলে চিতাবাঘটির ঝিমিয়ে পড়ে মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। ফলে বাঘটি ধরতে বনকর্মীরা ঘরের সামনের দরজাটি খুলে তার সামনে ফাঁদের মতো একটি খাঁচা বসান। কিন্তু কিছুতেই চিতাবাঘটিকে খাচার কাছে আনা যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত ইটওয়া ওঁরাও, ধুমা রাম এবং ব্রিজেন্দ্র সিংহ নামে তিন বনকর্মী লাঠি হাতে নিয়ে ঘরের ভিতর ঢুকে পড়েন। আর কয়েকজন বনকর্মী উঠে পড়েন ঘরের টালির চালের উপরে। চালের উপর থেকে বনকর্মীরা ঘরের ভিতরে পটকা ফেলতে থাকেন। আর একইসঙ্গে সেটিকে খাঁচার দিকে তাড়িয়ে নিয়ে আসারও চেষ্টা করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত চিতাবাঘটি খাঁচায় ঢোকে। পড়ে যায় খাঁচার ঝাঁপ। |