সম্পাদকীয় ১...
সেই চিন সমানে...
চিনের নবীন নেতৃত্বের হস্তে ক্ষমতা অন্তরিত হইয়াছে। প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং এবং প্রধানমন্ত্রী লি কে কিয়াং কার্যভার বুঝিয়া লইয়াছেন। চিন এক্ষণে বিশ্বের অগ্রগামী দেশ। অর্থনীতিতে, সামরিক শক্তিতে, রাজনৈতিক প্রভাবে তাহাকে চ্যালেঞ্জ জানাইবার মতো শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া আর কাহারও নাই। চ্যালেঞ্জ যদি কিছু থাকে, তবে সেটা ভিতর হইতে, চিনা সমাজ হইতে আসিতেছে। এক দিকে সরকারি ও পার্টি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, অন্য দিকে ধনী-দরিদ্রের বর্ধমান ব্যবধানকেই গত নভেম্বরে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট হু জিন তাও দুই প্রধান সমস্যা রূপে শনাক্ত করিয়াছিলেন। দুর্নীতি এমনকী কমিউনিস্ট পার্টির অস্তিত্বও বিপন্ন করিয়া তুলিতে পারে, এমন হুঁশিয়ারিও উচ্চারিত হয়। নবীন নেতৃত্ব কেমন করিয়া এই দুই সমস্যার সমাধান করিবেন, তাহা ভবিষ্যৎই বলিতে পারে। তবে বিদেশ নীতিতেও চিন প্রতিবেশী ক্ষুদ্র ও দুর্বল রাষ্ট্রগুলির দ্বারা দাদাগিরি চালাইবার দায়ে অভিযুক্ত। বিশেষত পূর্ব ও দক্ষিণ চিন সাগর এবং তথায় অবস্থিত দ্বীপগুলির অধিকার লইয়া বিভিন্ন প্রতিবেশী দেশের সহিত তাহার কাজিয়া আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ছায়া ফেলিতেছে।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও শি জিন পিং শাসিত চিন কোনও অভিনব ব্যতিক্রম ঘটায় নাই। বরং দুই দেশের সীমান্ত-বিরোধ মীমাংসার যে আশু সম্ভাবনা নাই, তাহা কবুল করিয়াছে। তথাপি এই বিরোধ যাহাতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অন্যান্য ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব না ফেলে, সে বিষয়েও চিন সতর্ক। এ জন্য দুই দেশের নেতৃত্বের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ স্থাপন করা, পরস্পরের তুলনামূলক শক্তির ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করিয়া পরিকাঠামোগত সহযোগিতা বাড়াইয়া তোলা, সাংস্কৃতিক বিনিময় নিবিড়তর করিয়া দুই দেশের জনসাধারণের মধ্যে বোঝাপড়া ও বন্ধুত্ব বিকশিত করা, তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলির অভিন্ন স্বার্থরক্ষায় আন্তর্জাতিক মঞ্চে বহুপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সচেষ্ট হওয়া এবং পরস্পরের সমস্যা, দায় ও বাধ্যবাধকতাগুলি উপলব্ধি করার উপর তিনি জোর দিয়াছেন। সবই খুব ভাল-ভাল কথা। বলিতে ভাল, শুনিতে আরও ভাল। কিন্তু এ ধরনের কথার চাষ দীর্ঘ কাল ধরিয়াই হইয়া আসিতেছে। তাহাতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে অনাস্থা দূর হয় নাই। এখনও সীমান্তে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর অনুপ্রবেশের ঘটনা নিয়মিত। পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে চিনা লগ্নি ও সহযোগিতায় নির্মীয়মাণ প্রকল্পগুলিও নয়াদিল্লির আপত্তি অগ্রাহ্য করিয়া চালু। তিব্বতের ভিতর দিয়া প্রবাহিত সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্র নদের উপর একের পর এক সুবৃহৎ বাঁধ ও জলাধার নির্মাণ করিয়া ভারতে ওই দুই জীবনদায়ী জলধারার গতিপ্রকৃতি একতরফা ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার অপপ্রয়াসও অব্যাহত। এই সমস্যাগুলি কিন্তু সীমান্তসমস্যার সহিত যুক্ত নয়, বরং এগুলি নূতন করিয়া সৃষ্ট বাড়তি সমস্যা, যাহা ভারতের স্বার্থকে ক্ষুণ্ণ করিয়া চিনের আধিপত্যকামিতাকে প্রতিষ্ঠা দেয়। চিনের নয়া নেতৃত্ব ভারত সংক্রান্ত বক্তব্যে এই বিষয়গুলি লইয়া নীরব। নীরবতা তাৎপর্যপূর্ণ।
হু জিন তাও-এর আমলে চিন যে পথে হাঁটিয়াছিল, সেই পথ হইতে সরিয়া আসার কোনও লক্ষণ অতএব নাই। ইতিমধ্যে চিন বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহৎ অস্ত্র রফতানিকারক দেশ হইয়াছে। প্রধানত আফ্রিকা এবং পশ্চিম এশিয়ায় চিনা অস্ত্রসম্ভার রফতানি হইতেছে। এই দুই অঞ্চলই অস্থিরতা ও উত্তেজনায় পরিপূর্ণ। চিন সেখানে নির্ধারক শক্তি হইয়া উঠিতে চায়। পাকিস্তানকে পরমাণু মারণাস্ত্র নির্মাণে সাহায্য করার সন্দেহ চিন সম্পর্কে দীর্ঘ কালের। সেই সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে উস্কানি না হউক, অন্তত প্রশ্রয় দিবার দায়ও শেষাবধি বেজিংয়ের উপরেই বর্তায়, যেহেতু আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় পিয়ংইয়ংয়ের একমাত্র মিত্রদেশ চিনই। উপরন্তু চিনের আধিপত্য বিস্তারের অভিপ্রায় তাহাকে মায়ানমার, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মালডিভস ও পাকিস্তানে অর্থাৎ সমুদ্রপথে ভারতকে তিন দিক দিয়া বেষ্টন করার মতো স্থানগুলিতে বন্দরনগরী নির্মাণে পরিকাঠামো বিকাশে নিয়োজিত করিয়াছে। অথচ ভারতীয় তৈলনিষ্কাশন সংস্থা ভিয়েতনামের আমন্ত্রণে দক্ষিণ চিন সাগরে হাজির হইলে চিন তাহাকে হুমকি দিতেছে। আধিপত্যকামিতা কিন্তু শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও বিকাশের শর্ত নয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.