উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টরের দায়িত্ব থেকে সি মুরুগনকে সরিয়ে দিল রাজ্য সরকার। তাঁর জায়গায় পুরুলিয়া জেলা গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রজেক্ট ডিরেক্টর নবকুমার বর্মনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সোমবার রাজ্য সরকারের তরফে ওই নির্দেশ কোচবিহার জেলা প্রশাসনের কাছে পৌঁছয়। যদিও মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ওই নির্দেশিকার কথা নিগমের চেয়ারম্যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব জানেন না বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, “আমার কাছে ওই ব্যাপারে কোনও চিঠি আসেনি। এ বিষয়ে খোঁজ নেব। ও সব প্রশাসনিক বিষয়। ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে রদবদল হয়ে থাকলে তা রুটিন মাফিক ব্যাপার।” পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্রের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি
এনবিএসটিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পর তৃণমূল কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা সভাপতি তথা নাটাবাড়ির বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ নিগমের চেয়ারম্যান হন। তারপরেই অতিরিক্ত জেলাশাসক সি মুরুগন ম্যানেজিং ডিরেক্টরের দায়িত্ব নেন। কয়েক মাসের মধ্যেই কর্মী বদলি নিয়ে নিগমের ওই দুই শীর্ষ কর্তার বিরোধ চরমে ওঠে। নিগম চেয়ারম্যানের পদ থেকে রবীন্দ্রনাথবাবুকে সরিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, নিগমের প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ কয়েকমাস ধরেই নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুরুগনের বিরুদ্ধে সরব হন। গত ফেব্রুয়ারিতে আইএনটিটিইউসির সম্মেলনে শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর সামনেও নিগমের কর্মীদের বদলির নামে হয়রান করার অভিযোগে ম্যানেজিং ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানান রবীন্দ্রনাথবাবু। ডিসেম্বর মাসে কোচবিহারের কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা এক নিগম কর্মী লোকনাথ দের আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে কাঠগড়ায় তুলে প্রকাশ্যে বিবৃতি দেন তিনি।
তৃণমূলের অন্দরে এমডির বিরুদ্ধে দলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে মদত দেওয়ার অভিযোগও তোলা হয়। কয়েক মাস আগে নিগমের নতুন কেনা একাধিক বাস পরপর বিকল হয়ে পড়া সংক্রাম্ত বিতর্কে এমডির পাশে দাঁড়ান দলে রবীন্দ্রনাথবাবুর বিরোধী বলে পরিচিত মিহির গোস্বামীর অনুগামীরা। আইএনটিটিইউসির জেলা সম্মেলনে প্রকাশ্যেই মুরুগনের বিরুদ্ধে সরব হন রবীন্দ্রনাথবাবু। কয়েক মাস আগে মুরুগনের বদলে নিবিল ইশ্বরারীকে এমডি করার নির্দেশ রবীন্দ্রনাথবাবুর বিরোধী শিবিরের চেষ্টায় আটকে যায়। এ বার তাই এমডি বদল করার বিষয়টি খোদ নিগম চেয়ারম্যানকেও জানানো হয়নি বলে সূত্রের দাবি।
এনবিএসটিসি সূত্রের খবর, রবীন্দ্রনাথবাবু সমস্ত ঘটনা নিয়ে পরিবহণ মন্ত্রীকে রিপোর্ট দেন। তার ভিত্তিতে রাজ্য পরিবহণ দফতর পরিস্থিতি পর্যালোচনার পর পরিবহণমন্ত্রীর সবুজ সংকেত নিয়ে বিকল্প বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করে। শেষ পর্যন্ত নয়া ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে নবকুমার বর্মনের নাম চূড়ান্ত করে সরকারি নির্দেশিকা জারি হয়।
মুরুগন অবশ্য এই প্রসঙ্গে বলেন, “২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে তিন মাসের জন্য আমাকে ওই অতিরিক্ত দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছিল। তার পরে ইতিমধ্যে ১৫ মাস হয়ে গিয়েছে। কিছু দিন ধরে নিজেই এই কাজ থেকে অব্যাহতি চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আর্জি জানিয়েছিলাম। সেটা মঞ্জুর করা হয়েছে। নির্দেশিকা মেনে নতুন এমডিকে সমস্ত সাহায্য করব। তাছাড়া অতিরিক্ত জেলাশাসক জেনারেল হিসাবে আমি নিগমের পরিচালন বোর্ডের সদস্য হিসাবে থাকছি।”
রবীন্দ্রনাথবাবু এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “ওই ব্যাপারে সংস্থার স্বার্থে পরিবহণ দফতর যথাযথ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” তবে মিহির গোস্বামীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আইএনটিটিইউসি-র কোচবিহার জেলা সভাপতি প্রাণেশ ধর বলেন, “এমডি ভাল কাজ করছিলেন। ওঁকে আরও কিছু দিন দায়িত্বে রাখার জন্য সংগঠনের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে দাবি জানাব।” মোবাইল না তোলায় নিগমের বোর্ড সদস্য মিহির গোস্বামীর বক্তব্য জানা যায়নি। অপর বোর্ড সদস্য আবদুল জলিল আহমেদ এ দিন বলেন, “পূর্ণ সময়ের এমডি দরকার ছিল। নির্দেশ জারির পরে বিষয়টি জানতে পেরেছি।” |