ব্লক অফিসে ঝামেলা করানোর অভিযোগে পুরুলিয়ার জয়পুর পঞ্চায়েত সমিতির কংগ্রেস সভাপতি শঙ্করনারায়ণ সিংহ দেওয়ের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করলেন জয়পুরের বিডিও মেঘনা পাল। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা প্রাপকদের সঙ্গে ব্লক অফিসে এসে বিক্ষোভ দেখানো ও সরকারি কাজকর্মে বাধা দেওয়ার অভিযোগে জয়পুরে কংগ্রেসের দুই গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধেও অভিযোগ হয়েছে।
শঙ্করনারায়ণবাবু অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেফতার করেনি। জেলার পুলিশ সুপার সি সুধাকর জানিয়েছেন, অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা শুরু করেছে পুলিশ। তদন্তও চলছে।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গত শুক্রবার সকালে জয়পুর ব্লক অফিস খোলার পরেই শ’খানেক গ্রামবাসী সেখানে জড়ো হন। পঞ্চায়েতের ভাতাপ্রাপক, প্রাণী পালনের জন্য সরকারি সাহায্য প্রাপক এবং ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পে যাঁরা সাহায্য পাবেন, এমন লোকজনই মূলত ছিলেন বিক্ষোভকারীদের মধ্যে। ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলার পরেও ইন্দিরা আবাস যোজনার টাকা মেলেনি বা পালনের জন্য মুরগি পাওয়া গেলেও সেগুলির খাবার কেনার টাকা পাওয়া যায়নি— এই সব অভিযোগে বিনা অনুমতিতে বিডিও-র ঘরে ঢুকে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ ওঠে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা অনুমতি ছাড়াই বিডিওর ঘরে ঢুকে গালিগালাজ করেন, ভাঙচুরের চেষ্টা চালান। বিডিও বলেন, “এই পরিস্থিতি দেখে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও পুলিশকে সব জানাই। আমার অফিসের কর্মীরা সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তাই আমাকে সব জানাতে হয়েছে।”
পুরুলিয়ার (পশ্চিম) মহকুমাশাসক নিমাইচাঁদ হালদার বলেন, “বিডিও-র সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি আমাকে জানিয়েছেন, ওই দিন তাঁর সঙ্গে কোনও কথা না বলে প্রচুর লোক আচমকা তাঁর ঘরে ঢুকে বিক্ষোভ দেখায়।” মহকুমাশাসকের দাবি, বিক্ষোভকারীদের ইন্দিরা আবাস যোজনা নিয়ে কিছু অভিযোগ ছিল। কিন্তু জয়পুর ব্লকে এই মুহূর্তে ওই প্রকল্পে কোনও উপভোক্তা বা বেনিফিশিয়ারির তালিকা পড়ে নেই। ভাতার ক্ষেত্রে বরাদ্দ না আসায় কিছুটা সমস্যা হয়েছে। আর মুরগির খাবারের জন্য নগদের বদলে বিডিও-র প্রস্তাব ছিল চেকে টাকা দেওয়া হোক। মহকুমাশাসক বলেন, “বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে বিডিও জেনেছেন, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তাঁদের পাঠিয়েছেন। এত লোকের একই সঙ্গে আসা পূর্বপরিকল্পিত বলেই মনে হয়েছে। তাই থানায় অভিযোগ হয়েছে।”
জয়পুর ব্লক কংগ্রেস সভাপতি শঙ্করনারায়ণবাবুর দাবি, “ঘটনার দিন আমি অফিসে তো বটেই, জয়পুরেও ছিলাম না। অন্যত্র একটি বৈঠকে ছিলাম। পরে গোটা ঘটনা শুনি। আমার ও আমাদের দলের দুই পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে বিডিও অভিযোগ করেছেন জেনে আমি অবাক। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, কংগ্রেসের কোনও পঞ্চায়েত সদস্যও সেদিন বিডিওর কাছে যাননি।” তাঁর আরও বক্তব্য, “আমি খামোখা কেন বিডিও-র কাছে এত লোককে বিক্ষোভ করতে পাঠাব? যাঁরা ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পে সাহায্য পাবেন, তাঁদের অনেকেই জানতে চান অ্যাকাউন্ট করানো হয়ে গিয়েছে। কবে টাকা আসবে। অনেক সময় আমরা বিডিও- কাছে খোঁজ নিতে বলি। তার মানে তো এই নয় যে, আমি কাউকে বিক্ষোভ দেখাতে বলছি।” বিডিও-র দেহরক্ষী এক জনকে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়েছিলেন এবং তা ঢাকতেই তাঁদের নামে অভিযোগ করা হয়েছে বলে পাল্টা দাবি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির। |