স্কুলের ছাদ থেকে এক পড়ুয়া পড়ল অন্যের ঘাড়ে
ঙ্গলবার ছিল স্কুলে তার দ্বিতীয় দিন। আর এ দিনই যে এত বড় বিপদ অপেক্ষা করে রয়েছে, তা ভাবতেও পারেননি চার বছরের জেডেন ডেনিসের মা শ্যারন ডেনিস। স্কুলে ঢোকার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সেখানকার তিনতলার ছাদ থেকে নীচে আছড়ে পড়ে জেডেন। তবে মাটি ছোঁয়ার আগে সে পড়ে আট বছরের আর এক স্কুলছাত্রের উপরে। ওই দুই শিশুই বিস্ময়কর ভাবে বেঁচে গিয়েছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ মধ্যমগ্রামের গঙ্গানগরে জুলিয়েন ডে স্কুলের অভিভাবক ও খুদে ছাত্র-ছাত্রীদের চোখের সামনে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার পরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায়। জেডেন যার উপরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে, তার নাম মহম্মদ সোহেল। এই ঘটনার পরে অভিভাবকেরা স্কুলের নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে বিক্ষোভ দেখান। বিমানবন্দর থানায় ওই স্কুল-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন তাঁরা।
চোখেমুখে তখনও আতঙ্ক। মঙ্গলবার নিজের বাড়িতে জেডেন ডেনিস।—নিজস্ব চিত্র
এ দিন শ্যারন বলেন, “আমি বাড়ি ফিরব ভাবছি, ঠিক তখনই শুনতে পেলাম ‘পড়ে গেল’ বলে সবাই চিৎকার করে উঠছে। প্রথমে বুঝতে পারিনি। কী পড়ে গেল, জানতে গিয়ে দেখি, আমার ছেলে মুখ থুবড়ে নিস্তেজ অবস্থায় মাটিতে পড়ে রয়েছে। পড়ে আছে আর একটি ছেলেও।”
আহত শিশু দু’টিকে এক অভিভাবকের গাড়িতে স্থানীয় মধ্যমগ্রাম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। নানা রকম ডাক্তারি পরীক্ষার পরে ছেড়ে দেওয়া হয় জেডেনকে। মহম্মদ সোহেলকে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় বিসি রায় শিশু হাসপাতালে।
কিন্তু তিনতলার ছাদ থেকে পড়েও কী ভাবে অক্ষত অবস্থায় থাকল জেডেন? রূপক দাস নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “দেখলাম, তিনতলা থেকে পড়ার সময়ে ছেলেটি একটি একতলা উঁচু ইলেকট্রিক তারের উপরে পাক খেয়ে পড়ে। ওর স্কুলব্যাগ তারে আটকে যায়। তার পরে সেখান থেকে মাটিতে আছড়ে পড়ে। ইলেকট্রিক তারে পাক খেয়ে পড়ায় ওর গতিবেগ কিছুটা কমে যায়।” আর এক প্রত্যক্ষদর্শী নরেন্দ্রনারায়ণ রায় বলেন, “কোনও শিক্ষক-শিক্ষিকা এগিয়ে আসেননি। আমরাই ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।”
এ দিকে প্রশ্ন উঠেছে, কী ভাবে তিনতলার ওই ছাদে উঠল শিশুটি? একটি তিনতলা বাড়ির দোতলায় জুলিয়েন ডে স্কুলের নার্সারি বিভাগটি চলে। যে সিঁড়ি দিয়ে ওই নার্সারি ক্লাসে যাওয়া যায়, সেটিই উঠে গিয়েছে তিনতলার ছাদে। প্রশ্ন উঠেছে, কী ভাবে শিক্ষিক-শিক্ষিকাদের চোখের আড়ালে ওই সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেল জেডেন? অভিযোগ, প্রথমে অভিভাবকদের এ সব প্রশ্নের কোনও উত্তরই দিতে চাননি স্কুল-কর্তৃপক্ষ। উল্টে শিক্ষিকারা অভিভাবকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। সুস্মিতা রায় নামে এক অভিভাবকের অভিযোগ, “এক শিক্ষিকা আমাদের বলেন, একটি বাচ্চার মাথায় এত দুর্বুদ্ধি এল কী ভাবে যে, ছাদে উঠে গেল? ফাঁক দিয়ে কোনও ছেলে উপরে উঠে গেলে আমাদের কী করার আছে? নিরাপত্তা নেই মনে করলে বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাবেন না।” আর এক অভিভাবক পৃথ্বীশপ্রতিম দে-র অভিযোগ, “এই যদি স্কুলের নিরাপত্তা হয়, তা হলে কী ভরসায় ছেলেকে স্কুলে পাঠাব?” ওই নার্সারি বিভাগের প্রধান শিক্ষিকা সুসি পল বলেন, “রোজের মতোই সিঁড়ির দরজায় এক জন শিক্ষিকা ছিলেন। তাঁর চোখ এড়িয়ে কোনও ভাবেই ছাত্রদের ছাদে ওঠার কথা নয়। কী ভাবে ঘটনাটি ঘটল, আমরাও বুঝতে পারছি না।”
আরও প্রশ্ন উঠেছে ছাদে উঁচু প্রাচীর থাকা সত্ত্বেও চার বছরের ওই শিশু পড়ে গেল কী ভাবে? কেনই বা ছাদে দরজা লাগানো ছিল না? ছাদে গিয়ে দেখা গেল, দরজার কোনও পাল্লা নেই। যে কেউ সেখানে চলে যেতে পারে। ছাদের প্রাচীরের ঠিক ধারেই আড়াই-তিন ফুট উচ্চতার দু’টি তক্তপোশ রাখা। পুলিশের অনুমান, ওই তক্তপোশে উঠে ঝুঁকতে গিয়েই জেডেন পড়ে গিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ছাদে রয়েছে বিদ্যুতের তারও। রয়েছে খাড়া লোহার সিঁড়ি। ওই সিঁড়ি দিয়ে চারতলায় উঠলে আবার খোলা পাম্পঘর। সেখানেও বিপজ্জনক ভাবে বিদ্যুতের তার বেরিয়ে রয়েছে। ছাদের এই অবস্থার কথা অবশ্য জানেনই না ওই স্কুলের অ্যাকাডেমিক প্রধান ক্রেগ লুইস। তিনি বললেন, “নার্সারি বিভাগে আমি এই প্রথম এলাম। এই বিভাগের প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে কথা বলে যা বলার বলব।” পরে স্কুল-কর্তৃপক্ষ জানান, তিনতলায় অন্যান্য অফিসও রয়েছে। তাদেরই ছাদ দেখভাল করার কথা। তবে দিন কয়েকের মধ্যেই ছাদের দরজা লাগানো ও অন্যান্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেন ওই শিশুটি ছাদে উঠেছিল, তার জবাব অবশ্য পাওয়া গেল ছোট্ট জেডেনের কাছেই। মধ্যমগ্রামে নিজের বাড়িতে শুয়ে সে জানায়, মাকে দেখতেই ছাদে উঠে পড়েছিল সে।

বিস্তারিত...



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.