আজ শিল্ড ফাইনাল: চিডি না খেলতে পারলে হয়তো শুরুতেই বরিসিচ
‘হিরের’ দ্যুতিতে মর্গ্যানকে
ঝলসাতে চান এলকো
ব্রিটিশ ও ডাচ কোচের স্ট্র্যাটেজির লড়াই।
র‌্যান্টি মার্টিন্সের গোল খিদে বনাম উগা ওপারার জেদ।
ফ্রি কিকের ‘এশীয় জাদুকর’ কার্লোস হার্নান্ডেজ বনাম রোমিং মিডিও পেন ওরজির মাঝমাঠ দখলের যুদ্ধ।
ঝলমলে এবং চমকপ্রদ অনেক উপাদানই হাজির আজ বুধবার সন্ধ্যার আই এফ এ শিল্ড ফাইনালে। এবং তার মধ্যে হঠাৎ-ই ভেসে উঠেছে ডায়মন্ড সিস্টেম! স্মৃতিমেদুরতা আচ্ছন্ন করে।
প্রয়াগ ইউনাইটেডের ডাচ কোচ নাকি তাঁর মাঝমাঠকে সাজাচ্ছেন ডায়মন্ডের মতো করেই।
মাঝমাঠে সেই হীরক-জালেই পেন-মেহতাবদের ফাঁদে ফেলে বাজিমাত করতে চান এলকো সাতোরি!
‘‘তাই নাকি?’’ শুনে বেশ চমকেই যান কলকাতা ফুটবলে ডায়মন্ড সিস্টেমের জনক। “আরে বিশ্ব ফুটবলে ওটা তো এখন ব্যাক ডেটেড সিস্টেম। জার্মানিতে সেই ষাটের দশকে যখন গিয়েছিলাম তখন নিয়ে এসেছিলাম ওটা,” বলে দেন অমল দত্ত।
ময়দান থেকে দূরে জ্যাংড়ার বাড়িতে এখন টিভিতে খেলা দেখেই সময় কাটে প্রাক্তন কোচের। প্রয়াগ ইউনাইটেডের খেলাও দেখেছেন। তাঁর মনে হয়েছে, ডায়মন্ড নয়, ওটা কবাডি-সিস্টেম। “চু কিৎ কিৎ করতে করতে পেন বা চিডি যেই নিজেদের পেনিট্রেটিভ জোনে ঢুকবে তখন চারদিক থেকে ঘিরে ফেলবে জনা চারেক। এটাই ওদের স্ট্র্যাটেজি। কবাডি মাঠে যেমন হয়।”
ডায়মন্ড না, কবাডি—কোন ফর্মেশনে প্রয়াগ খেলবে তা নিয়ে অবশ্য মাথাব্যথা নেই ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের। দ্বিমুকুট জয়ের সামনে দাঁড়িয়েও তিনি চূড়ান্ত পেশাদার এবং অসম্ভব আত্মবিশ্বাসী। এতটাই যে, শিল্ড ফাইনালের আগের দিন ডার্বি ম্যাচে নব্বই মিনিট মাঠে থাকা কোনও ফুটবলারকেই মূল অনুশীলনে নামতে দেননি সাহেব কোচ। কাউকে পাঠালেন জিমে, কেউ মাঠের ভিতর সামান্য হেঁটে বা দৌড়ে ফিরে গেলেন তাঁবুতে!
সেমিফাইনালের দুই নায়ক বরিসিচ এবং গুরপ্রীত। মঙ্গলবার ইস্টবেঙ্গল অনুশীলনে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
লাল-হলুদ ড্রেসিংরুম থেকে যে আত্মবিশ্বাসই ঠিকরে বেরোক, বাইরে কিন্তু তা আসতে দিতে রাজি নন মর্গ্যান। বরং সাংবাদিক সম্মেলনে এসে ভাবখানা এমন করলেন যে, মোহনবাগানের চেয়েও প্রয়াগ যেন শক্তিশালী প্রতিপক্ষ! “ওদের দলে বিশ্বকাপার আছে, আই লিগের গত তিন বারের সর্বোচ্চ গোলদাতা খেলবে। দু’জনেই ম্যাচ উইনার। ওদের সমীহ করি। তবে ভয় পাই না,” বলে দেন মর্গ্যান। কিন্তু শিলিগুড়িতে তো কয়েক দিন আগেই এই টিমকে দু’গোল মেরেছিলেন? মনে হল প্রশ্নটা তার দিকে উড়ে আসবে জানতেন। “দুটো অন্য রকম মঞ্চ। ওটা লিগ ছিল, এটা নক আউট। আর সব ম্যাচ একই রকম হয় না।”
মর্গ্যান বনাম এলকো খেতাব যুদ্ধের আগে বর্তমান মরসুমে দু’দলের ফল সমান সমান। ১-১।
আই লিগে জিতেছিলেন র‌্যান্টি মার্টিন্সরা। শিল্ডের গ্রুপ লিগে জিতেছেন চিডিরা। ফলে যুবভারতীতে ধুন্ধুমার একটা লড়াই দেখার আবহ তৈরি।
ম্যাচ শুরুর চব্বিশ ঘণ্টা আগে ইস্টবেঙ্গলকে সমস্যায় ফেলেছে চিডি এডের পিঠের ব্যথা। রাত পর্যন্ত যা খবর তাতে চিডির খেলার সম্ভাবনা ক্রমশ কমছে। এ দিন অনুশীলনের পর মর্গ্যান দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন দলের নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকারের সঙ্গে। খেলার ব্যাপারটি তাঁর উপর পুরোপুরি ছেড়ে দিয়েছেন লাল-হলুদ কোচ। বলে দিয়েছেন, “ম্যাচের আগে তুমিই সিদ্ধান্ত নাও খেলতে পারবে কি না।”
চিডি না খেলতে পারলে ডার্বির হিরো অ্যান্ডু বরিসিচই দলে ঢুকবেন। মানসিক ভাবে তাঁকে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্যও বলে রেখেছেন মর্গ্যান। মোহনবাগানের বিরুদ্ধে বিশ্বমানের একটা গোল বরিসিচের পৃথিবীটাই বদলে দিয়েছে লাল-হলুদে। আগের দিন আগলে রাখলেও এ দিন বরিসিচকে কথা বলার অনুমতি দিয়েছিলেন মর্গ্যান। ভোরবেলাতেই চুলে জেল লাগিয়ে ঝকঝকে হয়ে অনুশীলনে আসা অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকার বলেও দিলেন, “সব স্ট্রাইকারই শুরু থেকে খেলতে চায়। কোচ খেলালে খেলব। সবে তো শুরু করেছি। সামনে অনেক ম্যাচ।”
মর্গ্যানের টিমের সবথেকে বড় অস্ত্র তাঁর রিজার্ভ বেঞ্চ। এবং ময়দানি কোচিংয়ে যা সাধারণত বিরল দৃশ্য অনুশীলনে তাই করেন হাল সিটির প্রাক্তন ডেভলপার কোচ। মূল দল নয়, রিজার্ভ বেঞ্চের ফুটবলারদের পিছনে বেশির ভাগ সময় পড়ে থাকেন মর্গ্যান। ফলে দলে অদলবদল ঘটাতে পারেন যে কোনও সময়। যেমন আজ চিডি বা বরিসিচের সঙ্গী হতে পারেন রিজার্ভে থাকা বলজিৎ সিংহ। রাইটব্যাকে নওবা সিংহকে এনে হরমনজিৎ খাবরাকে খেলানো হতে পারে মাঝমাঠে।
এলকো সাতোরির টিম এই জায়গাতেই অনেকটা পিছিয়ে। চোটের জন্য বিনীশ বালান নেই। দলের দুই ফুটবলার ধনচন্দ্র সিংহ এবং তপন মাইতিও কার্ডের জন্য বাইরে। সবথেকে বড় কথা ফাইনালের আগের দিন মাত্র একজন গোলকিপারকে নিয়ে অনুশীলন করতে হল প্রয়াগকে। যিনি ছিলেন সেই সুব্রত পালের আবার খেলার সম্ভাবনা কম প্রথম টিমে। চিত্তরঞ্জন থেকে অফিসের হয়ে খেলে এ দিনই ফেরা সংগ্রাম মুখোপাধ্যায় থাকবেন গোলে।
টোটাল ফুটবলের ভক্ত প্রয়াগের ডাচ কোচ ম্যাচের আগেই বলে দিয়েছেন, “ইস্টবেঙ্গল ফেভারিট।” তবে পাশাপাশি এলকোর তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, “ওরা পরপর ম্যাচ খেলছে। ক্নান্ত। ম্যাচ যদি ১২০ মিনিট পর্যন্ত গড়ায় তা হলে কিন্তু আমরা ফেভারিট।”
তা হলে কি প্রয়াগ কোচ ধরেই নিয়েছেন ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়াবে? সেট পিস অনুশীলনের পাশাপাশি সে জন্যই টাইব্রেকার অনুশীলন হল প্রয়াগে।
মর্গ্যান কিন্তু টাইব্রেকার অনুশীলন করিয়ে টিমের উপর চাপ তৈরি করতে চাননি। তবে এলকোর সেরা অস্ত্র র‌্যান্টি আর কার্লোসের মধ্যে যোগসূত্র ছিন্ন করার ছক তৈরি করে ফেলেছেন। আজ ম্যাচের আগের ক্লাসে তা প্রকাশ্যে আনবেন তিনি।
কিন্তু ময়দানে চালু মিথ ডার্বিতে যে দল জেতে পরের ম্যাচে তারা জেতে না। শুনে ধুরন্ধর মর্গ্যানের মুখের ভুগোলে কোনও পরিবর্তন হয় না। কপালে চিন্তার বলিরেখার সংখ্যাও বাড়ে না। বরং হো হো করে হেসে ফেলেন তিনি। বলে দেন, “কাল বিকেলের পর বোঝা যাবে মিথ ভাঙল কি না।”
পারফর্মারদের কাছে ‘মিথ’ শব্দটা আসলে ভাঙার জন্যই।

বুধবারে আইএফএ শিল্ড ফাইনাল

ইস্টবেঙ্গল : প্রয়াগ ইউনাইটেড (যুবভারতী ৫-৩০)।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.