রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমানোর রাস্তা খুলে দিলেও এখনই সে পথে হাঁটছেন না অধিকাংশ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। তাঁদের মতে, মঙ্গলবার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তার ঋণনীতিতে ২৫ বেসিস পয়েন্ট রেপো এবং রিভার্স রেপো রেট কমিয়েছে ঠিকই। কিন্তু সার্বিক ভাবে সুদ কমানোর মতো উপযুক্ত চওড়া রাস্তা খুলে দিতে পারেনি। যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়াও একই সুরে বলেছেন, আর্থিক বৃদ্ধিকে টেনে তুলতে শীর্ষ ব্যাঙ্ক আরও একটু উদার হতেই পারত। তবে সুদ কমানোটা তাঁর মতে সঠিক পদক্ষেপ।
বিশেষজ্ঞদের একাংশ অবশ্য মনে করছেন, গাড়ি বা গৃহঋণে সুদ সামান্য হলেও কমতে পারে। তবে এখন কমানো না-হলেও, এপ্রিলে নতুন অর্থবর্ষ শুরু হলে যে ব্যাঙ্কগুলি ঋণে সুদ কমানোর কথা ভাবতে পারে, সেই আশাও প্রকাশ করেছেন অনেকেই। এবং সেটা হলে ঋণনীতির টানা দু’টি পর্যালোচনায় মোট ৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমানোর সুফল পাবে আর্থিক ব্যবস্থা। রেপো রেট এখন কমে হল ৭.৫%, রিভার্স রেপো ৬.৫%।
এর আগের বারও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ২৫ বেসিস পয়েন্ট রেপো (যে-হারে ব্যাঙ্কগুলি আরবিআইয়ের কাছ থেকে স্বল্প মেয়াদে ধার নেয়) এবং রিভার্স রেপো (যে-হারে আরবিআই ব্যাঙ্কগুলির কাছ থেকে স্বল্প মেয়াদে ধার নেয়) কমিয়ে সুদ কমানোর রাস্তা কিছুটা প্রশস্ত করেছিল। কিন্তু তখনও ব্যাঙ্কগুলি সুদের হার তেমন কমায়নি। |
মঙ্গলবার বেশ কিছু ব্যাঙ্ক সরাসরিই জানিয়ে দিয়েছে, তারা এখনই সুদ কমানোর কথা ভাবছে না। অনেকে আবার বলেছে, সুদ কমানোর বিষয়টি বিচার করে দেখবে এ সংক্রান্ত তাদের বিশেষ কমিটি (অ্যাসেট লায়াবিলিটি কমিটি)।
যেমন, এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের সিএমডি শুভলক্ষ্মী পানসে বলেন, “রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এ বার সুদ কিছুটা কমাতে পারে, এটা আন্দাজ করেই সস্প্রতি ঋণে কিছুটা সুদ কমিয়েছি আমরা। এখনই আর কমানোর কথা ভাবছি না।” সুদ কমানো হবে, এ কথা সরাসরি না-বললেও স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান প্রতীপ চৌধুরীর মন্তব্য, “আমরা সব সময়েই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সিদ্ধান্তের ফলে তৈরি হওয়া সুবিধা গ্রাহকের দিয়ে থাকি।”
কেন ব্যাঙ্কগুলি এখনই সুদ কমানোর পথে হাঁটবে না?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর কারণ দু’টি। প্রথমত, ২০১২-’১৩ অর্থবর্ষ প্রায় শেষের মুখে। অধিকাংশ ব্যাঙ্কেরই আশঙ্কা, অনুৎপাদক সম্পদ বাড়বে এই অর্থবর্ষে। ফলে বাড়বে ওই খাতে আর্থিক সংস্থানও। যা কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে মুনাফা বাড়ানোর রাস্তায়। বাঙ্কিং বিশেষজ্ঞ এবং ইউকো ব্যাঙ্কের প্রাক্তন এগ্জিকউটিভ ডিরেক্টর বি কে দত্ত বলেন, “এই পরিস্থিতিতে সুদ কমিয়ে আয় বাড়ানোর পরিসর আরও ছোট করে আনার ঝুঁকি কোনও ব্যাঙ্ক নিতে চাইবে না।” দ্বিতীয়ত, বাজারে নগদ জোগানের অভাব। এই কারণেই ব্যাঙ্কগুলিকে আমানত সংগ্রহে জোর দিতে হচ্ছে। বহু ব্যাঙ্কই বড় অঙ্কের থোক আমানত (বাল্ক ডিপজিট) তুলনায় বেশি সুদে তুলছে। ফলে বাড়ছে খরচ। এ অবস্থায় ঋণে সুদ কমানো ওই সব ব্যাঙ্কের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।
তবে বি কে দত্তের মতো বিশেষজ্ঞের ধারণা, বছর শেষে কর জমা, বিমার প্রিমিয়াম দেওয়া-সহ নানা খাতে আমজনতার খরচের বহর বাড়ে। তাই গাড়ি বা গৃহঋণের চাহিদা কমে। তাই ওই দু’ধরনের ঋণে সুদ কিছুটা কমাতে পারে কয়েকটি ব্যাঙ্ক। |