কূটনীতিতে চিনা মডেলই
শ্রেয় কি না, সংশয়ে দিল্লি
সীমান্ত সমস্যা নিয়ে চিনের সঙ্গে ভারতের যতই মতবিরোধ থাকুক না কেন, ভারতীয় বিদেশনীতির কিছু ক্ষেত্রে চিনা মডেল অনুসরণ করাই কাম্য বলে ইদানীং মনে করছেন কূটনীতিকদের একাংশ। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় তামিলদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের আঁচ যে ভাবে ভারতের কূটনীতি এবং ঘরোয়া রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছে, সেই পরিস্থিতিতে এই ভাবনা আরও জোরদার হচ্ছে।
কী এই ‘চিনা মডেল’? সেটা হচ্ছে জন্মসূত্রে এ দেশীয় যাঁরা অন্যান্য দেশে বসবাস করছেন, তাঁদের সমস্যা নিয়ে অতিরিক্ত স্পর্শকাতর হয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সংঘাতে না যাওয়া। জনসংখ্যায় বিশ্বের এক নম্বর চিন, এই নীতিই অনুসরণ করে। বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, চিনের ইতিহাসে গত অর্ধশতাব্দীর ইতিহাস খুঁজে এমন কোনও নজির পাওয়া যাচ্ছে না, যেখানে অন্য দেশে চিনা বংশোদ্ভূত নাগরিকের সমস্যার আঁচ নিজের দেশে পড়তে দিয়েছে বেজিং। ভারতের তামিল-রাজনীতির পাশে একটি ঘটনা রাখলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়। ২০০৮-এ মায়ানমারের সেনা হাজারো চিনা বংশোদ্ভূতকে বাধ্য করেছিল ইউনান প্রভিন্স-এ যেতে। এ নিয়ে মায়ানমারের সঙ্গে সংঘর্ষে যায়নি বেজিং। কূটনৈতিক সম্পর্কও ছিন্ন করেনি। শুধু সীমান্তে উদ্বাস্তুদের থাকার ব্যবস্থা করেই কাজ সেরেছিল। ১৯৬৫ সালে ইন্দোনেশিয়ার সুহার্তো সরকার চিনা বংশোদ্ভূত কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। মাও জে দং ছিলেন তাঁদের অঘোষিত নেতা। সে সময় বহু চিনা বংশোদ্ভূত নিহত হলেও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে সংঘাতে যায়নি চিন। রাষ্ট্রপুঞ্জে অভিযোগও জানানো হয়নি। সাময়িক ভাবে দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্কের কয়েকটি ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। বর্তমানে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ছাড়াও বটেই, খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন অসংখ্য চিনা বংশোদ্ভূত। কিন্তু গত ৪৭ বছরে চিনের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন কোনও বড় ঘটনা পাওয়া যাচ্ছে না, যেখানে বিশ্বের কোনও প্রান্তে চিনাদের নিয়ে মাথা ঘামিয়েছে চিন।
চিনের এই নীতি যথেষ্ট ‘পরিণত’ বলে মত বিশেষদেজ্ঞর। শ্রীলঙ্কায় সাম্প্রতিক ঘটনাবলির জেরে বিদেশ মন্ত্রকের একাংশের মত, নয়াদিল্লির এ বার মানসিকতার বদল করা প্রয়োজন। অনেকেই মনে করছেন, বিদেশনীতি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে ‘চিনা মডেল’ অনুসরণ করাই সুবিধাজনক। প্রাক্তন কূটনীতিক রণেন সেন অথবা চিন বিশেষজ্ঞ শ্রীকান্ত কোন্দাপল্লি মনে করেন, নানা দেশে ছড়িয়ে থাকা চিনাদের ব্যাপারে প্রকাশ্যে মাথা না ঘামালেও গোপনে তাদের ‘ব্যবহার’ করতে কসুর করে না চিন। বিশ্বের নানা প্রান্তে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত প্রভাব বাড়ানোর ক্ষেত্রে তাদের যথেষ্ট সাহায্য নেওয়া হয়। ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তির অন্যতম রূপকার রণেনবাবুর কথায়, “আমেরিকায় প্রায় চল্লিশ লক্ষ চিনা বসবাস করেন। বাইরে থেকে দেখে মনে হয়, বেজিং এদের ব্যাপারে খুবই উদাসীন। কিন্তু আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি, এঁদের মধ্যে উচ্চপ্রযুক্তি বিজ্ঞান এবং গবেষণার সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে গভীর যোগাযোগ রেখে চলছে চিন সরকার। অনেক টাকাও দিচ্ছে।” শ্রীকান্তের মতে, গত কয়েক বছরে বিভিন্ন দেশে চিনাদের উপস্থিতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সে দেশের সরকারও বিষয়টিতে গুরুত্ব বাড়াচ্ছে।
ভারতের পক্ষে চিনা মডেল অনুসরণ করা কঠিন বলেও মত বিদেশ মন্ত্রকের বড় অংশের। তাঁদের বক্তব্য, বহুদলীয় গণতন্ত্রে রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা অনেক বেশি। বিভিন্ন ধর্ম ও আঞ্চলিকতাকে গুরুত্ব দিতে হয় জোট রাজনীতিতে। চিনে তার বালাই কম। তাই মলদ্বীপের অনাবাসী ভারতীয়দের সমস্যা থেকে শুরু করে বাংলাদেশের অস্থিরতা, পাকিস্তানের সংখ্যালঘু সমস্যা থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ছাত্রদের উপর হামলার ঘটনায় কেঁপে যায় দিল্লির কূটনীতি। ঘরোয়া রাজনীতিতেও প্রভাব পড়ে। শ্রীলঙ্কার তামিল সমস্যার ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.