এলাকা বদল |
একজন বেরোতে চান বাণিজ্যিক ছবির গণ্ডি থেকে। অন্য জন শহুরে-মাল্টিপ্লেক্স ছবির সংজ্ঞা
ভেঙে নিজেকে আবিষ্কার
করতে চাইছেন মূল ধারার ছবিতে। দেব ও আবির চট্টোপাধ্যায়ের স্ট্র্যাটেজি বদল। জানতে পারলেন ইন্দ্রনীল রায় |
টালিগঞ্জের দুই নায়কের হল কী?
হঠাৎ করে তাঁরা নিজেদের এলাকা ছেড়ে অন্যের এলাকায় ঢুকছেন কেন?
এক দিকে মূল ধারার বাণিজ্যিক বাংলা ছবির অসম্ভব জনপ্রিয় এক নায়ক নিজের চেনা জগৎ ছেড়ে শহুরে, মাল্টিপ্লেক্সে ভাল চলে এমন ছবি সই করছেন পরপর।
অন্য দিকে ‘মিডল অব দ্য রোড’, ‘অন্য রকম’ ছবির এক নায়ক ধীরে ধীরে মূল ধারার বাণিজ্যিক বাংলা ছবির দিকে ঝুঁকছেন।
দেব ও আবির চট্টোপাধ্যায়।
দুই নায়কের এই ‘এলাকা দখল’ নিয়ে এখন তোলপাড় টলিউড। |
|
সব দেওয়াল ভেঙে যাচ্ছে |
টালিগঞ্জের অনেকেই বলছেন এত দিন বাণিজ্যিক আর শহুরে মাল্টিপ্লেক্স ছবির মধ্যে একটি অদৃশ্য দেওয়াল ছিল। সেই দেওয়ালটাই না কি ২০১৩-র টলিউডে ভেঙে যাচ্ছে। দেব আর আবিরের এলাকা দখল তারই প্রতীক।
“দেওয়াল ভাঙছে তো বটেই। ইন্ডাস্ট্রির পক্ষে এর থেকে ভাল কোনও খবর হতেই পারে না। আজ যদি চিত্রনাট্য দাবি করে, আমি দেবের সঙ্গে কাজ করতে পারি, আবিরের সঙ্গেও কাজ করতে পারি। এর থেকে সুখের কী হতে পারে,” বলছিলেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়।
|
আবির আর দেবের সুবিধা হবে |
তবে তাঁরা কিন্তু প্রথম নন। বহু দিন আগেই টালিগঞ্জে এমনটা করেছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
“আমি হার্ডকোর বাণিজ্যিক সিনেমা করতে করতে ‘উনিশে এপ্রিল’ করেছিলাম, ‘চোখের বালি’ করেছিলাম। এই চ্যালেঞ্জ নেওয়াটা ভীষণ দরকার একজন অভিনেতার। আজ যে আবির বা দেব করছে, এতে ওদের সুবিধেই হবে,” বললেন প্রসেনজিৎ।
প্রসেনজিৎ এটাও মনে করছেন যে যত ঘন ঘন এটা হবে, টালিগঞ্জও ততটাই পরিণত হয়ে উঠবে। “মুম্বইতে নাসিরুদ্দিন শাহ শুরু করেছিলেন শ্যাম বেনেগালদের ছবিতে। তার পর ‘ত্রিদেব’-এ ‘তিরচি টোপিওয়ালে’-তে নাচলেন। মিঠুনদাও ‘মৃগয়া’ দিয়ে শুরু করে ‘ডিস্কো ডান্সার’ করলেন। তার পর আবার বুদ্ধবাবুর (বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত) ছবি করলেন। এতে অভিনয়ের ‘রেঞ্জ’টা বাড়ে,” খোলাখুলি বলছেন প্রসেনজিৎ।
|
নায়ক নায়িকাদের ‘ভোল’বদল |
|
দেব: সাত বছর ইন্ডাস্ট্রিতে
কাজ করছি। রিস্ক নেওয়ার
এটাই তো সময়। তবে আমি
দু’ধরনের ছবিই করতে চাই। |
শ্রাবন্তী: আমি ‘কানামাছি’-তে
যতটা স্বচ্ছন্দ ততটাই স্বচ্ছন্দ অপর্ণা
সেনের‘গয়নার বাক্স’-তে। ভবিষ্যতে দুই
ধরনের ছবিতেই ভাল কাজ করতে চাই। |
আবির চট্টোপাধ্যায়: এটুকু বুঝেছি বেশি
সংখ্যক
মানুষের কাছে পৌঁছনো যায়
মূল ধারার বাণিজ্যিক ছবি করলে।
সে রকম ছবি আরও করে যেতে চাই। |
|
কাস্টিং এর অপশন বেড়ে গিয়েছে |
আজ এই রেঞ্জ বাড়াতেই বোধহয় দেব কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের ‘চাঁদের পাহাড়’-এ অভিনয় করছেন, যে ছবিটির শুটিং আগামী মাস থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় শুরু। অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর পরের ছবিও করছেন তিনি।
একই রকম ভাবে গত সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া ‘কানামাছি’ ছবিতে সব চেয়ে প্রশংসিত অভিনেতার নাম আবির চট্টোপাধ্যায়। কিছু দিন আগে মুক্তি পাওয়া ‘বোঝে না সে বোঝে না’ ছবিতেও আবির সব চেয়ে বেশি প্রশংসিত হয়েছিলেন।
এ রকম একটা ট্রেন্ড চালু হওয়ায় খুশি প্রযোজকরাও। “আমাদের কাছে কাস্টিং-এর অপশন বেড়ে গিয়েছে। এই রকম ফ্লেক্সিবিলিটি থাকলে পরিচালকেরা নতুন ভাবনা ভাবতে পারবেন। উন্নতি হবে গোটা টালিগঞ্জের,” বলছিলেন প্রযোজক মহেন্দ্র সোনি।
|
দেবের ইনভলভমেন্টটা বুঝলাম |
উন্নতি হবে মনে করছেন অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীও। “একই রকম ছবিতে একই হিরোকে দেখে দর্শক থেকে প্রযোজক, সবার মধ্যেই একটা একঘেয়েমি এসে যায়। নতুন এই ট্রেন্ড কৌতূহলটা জাগিয়ে রাখবে,” বলছেন অনিরুদ্ধ।
দেবের সঙ্গে কাজ করতে পেরে খুশি তিনি। “দেব যে কী ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে যায় একটা ছবির সঙ্গে, ওর সঙ্গে মিটিং করতে বসে বুঝলাম। এই ইনভলভমেন্টটা যখন থাকে তখন ভাল কাজ হতে বাধ্য,” বলছিলেন টোনি।
|
শোতেও আবিরকে চাই |
প্রযোজক-পরিচালকরা খুশি হওয়ার পাশাপাশি দেবের ঘনিষ্ঠ মহল থেকে জানা যাচ্ছে তাঁর এই অন্য ধরনের ছবি করার সিদ্ধান্তটা কিন্তু হঠাৎ নেওয়া নয়। অনেক দিন ধরেই বাণিজ্যিক ছবির পাশাপাশি এমন ছবি করতে চাইছিলেন দেব। তার অন্যতম কারণ শহরে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করা।
“সাত বছর ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি। রিস্ক নেওয়ার এটাই তো সময়। তবে আমি দু’ধরনের ছবিই করতে চাই,” বলছিলেন দেব।
দেব যদিও সচেতন ভাবে অন্য ছবি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, আবির কিন্তু বলছেন তিনি মূল ধারার ছবি করার সিদ্ধান্ত মোটেই সচেতন ভাবে নেননি। “আমি সচেতন ভাবে মোটেও মূল ধারার বাণিজ্যিক ছবি করছি না। তবে এটা ঠিক বাণিজ্যিক ছবির দর্শকদের নিজেদের কাজ দেখাতে পারার ইচ্ছে আমার অনেক দিনের। আমি তাঁদের কাছে যে সাড়া পাচ্ছি তা অকল্পনীয়,” বলছেন আবির। আবিরের জনপ্রিয়তা এখন কলকাতা ছেড়ে জেলাতেও এত বেশি যে শো-এর ব্যবস্থাপকরাও চাইছেন আবিরকে।
|
বদলাচ্ছেন শ্রাবন্তীও |
‘‘আমার কাছে শো-এর প্রচুর অফার আসছে। এবং পুরোটাই আসছে আমি মূল ধারার বাণিজ্যিক ছবি করছি বলে,” অকপটে বলছেন আবির।
তাঁর কাছ থেকেই জানা গেল শো-এর মরসুম ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ শেষ হয়। কিন্তু আজকে তাঁর জনপ্রিয়তার জন্য মার্চ মাস অবধি তাঁর কাছে শো করার অনুরোধ আসছে।
এবং আবির আর দেব কিন্তু একা নন। আজ টলিউডের নায়িকারাও নিজেদের বদলাচ্ছেন।
এত দিন ধরে শুধু বাণিজ্যিক বাংলা ছবিতেই কাজ করেছেন শ্রাবন্তী। কিন্তু ১২ এপ্রিল তাঁকে দেখা যাবে অপর্ণা সেনের ‘গয়নার বাক্স’ ছবিতে। “আমি ভাল ছবি করতে চাই। আর এখন শুধু নিজেকে এক রকম ছবিতে আটকে রাখা হয়তো ঠিক নয়,” বলছিলেন শ্রাবন্তীও। |
এলাকা দখল নায়ক-নায়িকা সবাই শুরু করে দিয়েছেন। ২০১৩-র টালিগঞ্জে এটাই হয়তো নতুন গেম প্ল্যান। কে জিতবে? ‘ব্যোমকেশ’ না ‘পাগলু’? সেটা সময়ই বলবে।
|
|
রাজ চক্রবর্তী: ‘চাঁদের পাহাড়’-এ দেবকে কাস্ট করা কমলেশ্বরদার ‘বাপি বাড়ি যা’ শট।
|
কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়: দুই নায়কের এই অদলবদলটা ইন্ডাস্ট্রির পক্ষে ভীষণ ইতিবাচক। এতে লাভ আমাদের সবার। |
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়: বালিগঞ্জের ড্রইংরুমের শেল্ফে নিজের ছবির ডিভিডিটা রাখতে চাইছে দেব। সেটার জন্যই বোধহয় নিজেকে বদলাচ্ছে। |
|
|