এক নামী বেসরকারি হাসপাতাল সংস্থার ঘোষিত মেডিক্যাল শিবিরকে কেন্দ্র করে নীতিগত প্রশ্নের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। প্রশ্নটি হল স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি ছাড়া কোনও বেসরকারি সংস্থা বা হাসপাতাল হেপাটাইটিস বি টিকাকরণ শিবির করতে পারবে কি? এ সংক্রান্ত অনুমতি চাইলেও তা কি স্বাস্থ্য দফতর তাদের দেবে?
এর আগে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়, একাধিক বার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বা সংস্থা আয়োজিত হেপাটাইটিস বি টিকাকরণ শিবিরে টিকা নিয়ে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। তার পর থেকে স্বাস্থ্য দফতর এই ধরনের শিবিরের অনুমোদনের ব্যাপারে কড়া অবস্থান নেয়। রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের কার্যনির্বাহী কমিশনার পার্থসারথী চৌধুরী স্পষ্ট বলে দেন, “সরকারি ভাবে এই ধরনের শিবিরের অনুমতি দেওয়া হয় না। তা ছাড়া, এই টিকা জাতীয় টিকাকরণ কর্মসূচিতে রয়েছে। সরকার থেকেই দেওয়া হয়। বেসরকারি জায়গা থেকে নেওয়ার প্রয়োজন
হয় না।”
কিন্তু এই কড়াকড়ির মধ্যেও যশোহর রোডে ওই নামী হাসপাতাল সংস্থার ক্লিনিকে ১৭ মার্চ, রবিবার, নিখরচায় হেপাটাইটিস স্ক্রিনিং ও টিকাকরণ শিবির আয়োজিত হবে বলে ঘোষণা করে দেওয়া হয়। এই মর্মে ছাপানো আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে যায় অতিথি-অভ্যাগত এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের অফিসে। ছাপার অক্ষরে জানানো হয়, শিবির উদ্বোধন করবেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও স্থানীয় বিধায়ক সুজিত বসু-র মতো জনপ্রতিনিধিরা। কিন্তু অভিযোগ, এত কিছু করার আগে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কোনও অনুমতিই নেননি ওই হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ।
গোটা বিষয়টি নিয়ে নীতিগত ভাবে দু’টি মতে ভাগ হয়ে যায় স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী ব্যাখ্যা দেন প্রথমত, হেপাটাইটিস-বি শিশুদের দেওয়ার কথা, কিন্তু এই প্রস্তাবিত শিবিরে বয়সের উল্লেখ নেই। বড়দের এই টিকা দেওয়া সরকার কিছুতেই সমর্থন করে না। দ্বিতীয়ত, টিকার মান, কোল্ড চেন ব্যবস্থা বা টিকা কর্মীদের যোগ্যতা ভাল ভাবে খতিয়ে দেখা উচিত। এগুলি খতিয়ে দেখে তবে স্বাস্থ্য দফতর অনুমতি দেবে ও নজরদারি চালাবে। কিন্তু প্রস্তাবিত শিবিরের এক দিন আগেও ওই সংস্থা স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি নেয়নি।
আবার কিছুটা নরমপন্থা নেন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছেন, “অনেক বেসরকারি ডাক্তার তো নিজেদের চেম্বারে এই টিকা দেন। ক্ষতি কী? উত্তর ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি থাকলে কোনও বেসরকারি সংস্থা এই টিকাকরণ শিবির করতেই পারে। ওরা শুক্রবার অনুমতি চেয়েছে।”
এর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে এই ক্লিনিককে অনুমতি দিলে যদি এর পর থেকে যে কোনও বেসরকারি সংস্থা বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হেপাটাইটিস বি টিকাকরণ শিবির করতে চায়, তা হলে কি স্বাস্থ্য দফতর তাদের অনুমতি দেবে? এদের প্রত্যেকের টিকার মান বা পরিকাঠামো যাচাই করা স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষে সম্ভব হবে তো?
রাজ্য টিকাকরণ আধিকারিক সুকান্ত শীল অবশ্য সোজাসুজি জানিয়ে দেন, এই ধরনের শিবিরের অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নই নেই। তাঁর বক্তব্য, “অনুমতি দিতে হলে স্বাস্থ্য দফতর টিকার মান ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করাবে, কোল্ড চেন দেখবে, যাঁরা টিকা দেবেন তাঁদের যোগ্যতা দেখবে, পরিকাঠামো দেখবে। প্রায় ৬ মাস আগে আবেদন করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, যে টিকা জাতীয় টিকাকরণ কর্মসূচিতে রয়েছে, তা বেসরকারি শিবিরে দেওয়ার ব্যাপারে অনুমতি দেওয়ার কথা নয়। কোনও ঝুঁকি সরকার নেবে কেন?”
তা হলে এ ক্ষেত্রে এবং ভবিষ্যতে এই রকম পরিস্থিতি আবার এলে স্বাস্থ্য দফতর ঠিক কী অবস্থান নেবে?
উত্তর ২৪ পরগনার মুখ্যস্বাস্থ্য অধিকর্তা প্রলয় আচার্য শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেন, “প্রথমে ভেবেছিলাম অনুমতি দেওয়া হবে। কিন্তু এখন বিষয়টা নিয়ে এত জলঘোলা হচ্ছে যে, স্বাস্থ্য দফতর এটা নিয়ে আলাদা ভাবে আলোচনা করে নীতি নির্ধারণ করতে চাইছে। দেখা যাক, কী হয়।” |