দমকল ডাকতে বলছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। বিধায়কের ‘বিধান’ ধোঁয়া দেওয়া হোক। ‘শত্রু’ তাড়াতে দলীয় কর্মীরা পটকা ফাটাচ্ছেন। কিন্তু বুলেটের মতো ধেয়ে আসা মৌমাছির ঝাঁককে বাগে আনা যাচ্ছে না কিছুতেই। হুলের আঘাতে কারও চোখের তলা ফুলে গিয়েছে। কারও পিঠ লাল। কার্যত জামা-কাপড় খুলেই রাস্তায় দৌড়চ্ছেন কেউ। আজ এমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়েই ঝাড়খণ্ড বিজেপি-র নতুন রাজ্য সভাপতি হিসেবে রবীন্দ্র রাইয়ের প্রথম দিনটি শুরু হল।
রাঁচির হরমুতে। রাজ্য পার্টির দফতরে নতুন সভাপতিকে স্বাগত জানাতে মাদল-বাদ্যি, মোটর বাইক র্যালি সবেরই আয়োজন ছিল। নতুন সভাপতির জন্য পার্টি অফিসের তিন তলায় অপেক্ষা করছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুণ্ডা, বিদায়ী রাজ্য সভাপতি দীনেশানন্দ গোস্বামী, ঝাড়খণ্ডের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় নেতা ধর্মেন্দ্র প্রধান-সহ অন্যান্য নেতৃত্ব। কথা ছিল নতুন সভাপতি পার্টি অফিসে ঢুকলে তাঁকে সঙ্গে নিয়েই অনুষ্ঠান মঞ্চে উঠবেন অন্যান্য নেতৃত্ব।
ইতিমধ্যেই হইচই।
তিন তলায় বসা দলীয় নেতৃত্ব ধরে নিয়েছেন নতুন সভাপতি পার্টি অফিসে চলে এসেছেন। ভুল ভাঙল দলের এক কর্মীর কথায়। তিনি খবর দিলেন, পার্টি অফিসের পিছনের অনুষ্ঠান মঞ্চের আশপাশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসছে মৌমাছি। আর তাতেই সব লন্ডভন্ড। উদ্বিগ্ন অর্জুন মুণ্ডা তাই শুনে বললেন, “দমকল ডাকুন।”
মৌমাছির হুল এড়িয়ে প্রাণে বাঁচতে অনুষ্ঠানস্থল ছেড়ে আড়াইশো-তিনশো নেতা-কর্মী তত ক্ষণে পার্টি অফিসের ভিতরে ঢুকে পড়েছেন। যাঁরা সেখানে জায়গা পাননি তাঁরা পার্টি অফিসের সামনে হরমু বাইপাস ধরে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়চ্ছেন। যাঁরা পার্টি অফিসের বাইরে মাদল বাজিয়ে নাচছিলেন তাঁদের অনেকেই মৌমাছির কামড়ে ক্ষতবিক্ষত। জামা খুলে আদুর গায়ে তখন তাঁরা ঠাণ্ডা জল ঢালছেন।
এমন পরিস্থিতিতে পার্টি অফিসে ঢুকে বিভ্রান্ত হয়ে যান নতুন সভাপতি রবীন্দ্র। সভাপতি হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা নিয়ে যশবন্ত সিনহা, সরযূ রাই, সুনীল সিংহের মতো প্রবীণ নেতারা বিরোধিতা করেছেন। এ দিনের অনুষ্ঠানেও তাঁরা আসেননি। সেই প্রসঙ্গ টেনে ঠাট্টার ছলে জামশেদপুরের এক বিজেপি নেতার বক্তব্য, “ভুমিহার গোষ্ঠীর সভাপতিকে কাবু করতে রাজপুতরা মৌমাছি পাঠিয়েছে।
বেচারা নতুন সভাপতির সময়টা ভালো যাবে তো?”
এভাবে প্রায় এক ঘন্টা মানুষে আর মৌমাছিতে লড়াই চলার পরে শেষ পর্যন্ত দুপুর দেড়টা নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তারপরে কার্যভার গ্রহণ অনুষ্ঠান শুরু হয়। বিদায়ী সভাপতি দীনেশানন্দ গোস্বামী মঞ্চে স্বাগত জানান নতুন সভাপতি রবীন্দ্র রাইকে। কেন্দ্রীয় নেতা ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেন, “চালাকি করে ঝাড়খণ্ড দখল করে রেখেছে কংগ্রেস। রাজ্যে নির্বাচন করানোর দাবিতে আমরা রাজ্যপালকে ঘেরাও করব।” প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুণ্ডা পরে বলেন, “দলের সব স্তরের নেতা-কর্মীদের নিয়েই নতুন সভাপতিকে চলতে হবে। আমাদের লক্ষ্য হবে এ রাজ্যে আগের তুলনায় আরও বেশি আসন জেতা।” |