অধিগ্রহণ নিয়ে অবস্থান বদলাচ্ছে না, ইঙ্গিত মুখ্যমন্ত্রীর
কাটোয়ায় জমি নেবে না রাজ্য, সংশয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র
কাটোয়ায় এনটিপিসি-র তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে তুঙ্গে জটিলতা। শুক্রবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “৫০০ একর জমি আছে। ওঁরা (এনটিপিসি কর্তৃপক্ষ) চাষিদের বুঝিয়ে জমি নিতে পারলে সরকার বাধা দেবে না।” অথচ এনটিপিসি কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি জানিয়ে দিয়েছেন, এই প্রকল্পের জন্য তাঁরা চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি জমি কিনবেন না। সম্প্রতি তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদের এক প্রশ্নের জবাবে সংসদে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক এই কথা জানিয়েছে। বিদ্যুৎ শিল্প বিশেষজ্ঞদেরও বক্তব্য, যে পরিমাণ জমি এনটিপিসি-র হাতে রয়েছে, তাতে ১৬০০ মেগাওয়াটের তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়া সম্ভব নয়।
সব দেখেশুনে সংশ্লিষ্ট অনেকেরই ধারণা, কাটোয়া তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে জট কাটার সম্ভাবনা আপাতত খুবই ক্ষীণ। রাজ্যের এক শিল্পকর্তা তো বলেই ফেলেছেন, “এটাই হওয়ার ছিল।” বিধানসভা অধিবেশনের পরে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র পুরো পরিস্থিতির জন্য রাজ্য সরকারকে দুষে বলেন, “বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রেল বা বিমানবন্দরের মতো প্রকল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলিকে অবহেলা করলে রাজ্য পিছিয়ে যাবে।”
কাটোয়ায় এনটিপিসি-র ১৬০০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ১০৭১ একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছিল। যার মধ্যে ৫৫৬ একরের মতো জমি বাম আমলেই অধিগ্রহণ করা হয়। প্রকল্পের জন্য প্রয়োজন আরও প্রায় ৫১৫ একর জমি। কিন্তু নতুন সরকার আসার পর থেকেই এই জমি পাওয়া নিয়েই যাবতীয় জট তৈরি হয়। প্রথম থেকেই সরকারের ঘোষিত অবস্থান হল, সরকারি-বেসরকারি কোনও প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হবে না। সেই নীতির ফাঁদে পড়েই কাটোয়ায় এনটিপিসি-র ৯ হাজার কোটি টাকার তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পটি এখন রাজ্যের হাতছাড়া হতে চলেছে।
অথচ প্রকল্পটি করার ব্যাপারে এনটিপিসি কর্তৃপক্ষের একাংশ দীর্ঘদিন ধরে যথেষ্ট উৎসাহ দেখিয়ে এসেছে। এনটিপিসি-র এক কর্মী বলেন, “রাজ্যকে চিঠি দিয়ে আরও ১৫০-২০০ একরের মতো জমি অধিগ্রহণ করে দিতে বলেছিলাম। যাতে ৭০০-৭৫০ একর জমিতে ৮০০ মেগাওয়াট করে দু’টি ইউনিট তৈরির চেষ্টা করতে পারি।” তাঁদের বক্তব্য, কিন্তু বাস্তবে তা-ও হয়নি। ফলে ক্রমে উৎসাহে ভাটা পড়ে এনটিপিসি-র। কয়েক মাস আগে পর্যন্ত কাটোয়ায় এনটিপিসি-র ১০ জন কর্মী প্রকল্পের কাজ দেখাশোনা করছিলেন। এখন সেখানে রয়েছেন মাত্র দু’জন। গত তিন মাস ধরে তাঁদেরও কোনও কাজ নেই। সরকারি সূত্রে খবর, ১৪ ওয়াই ধারায় জমির ঊর্ধ্বসীমায় ছাড় নিয়ে আলোচনা করতে কাটোয়া প্রকল্পের আধিকারিকদের শুনানির জন্য ডেকেছিলেন বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) সৈকত দত্ত। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ছিল সেই শুনানি। সেখানে যানইনি এনটিপিসি-র কেউ। তাঁদের যুক্তি, সংস্থা যেখানে চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি জমি কিনবেই না, তখন বৈঠকে যোগ দিয়ে লাভ কি! এনটিপিসি কর্তৃপক্ষের আরও যুক্তি, তাঁরা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি জমি কেনার অভিজ্ঞতাও তাঁদের নেই।
তা হলে কাটোয়া প্রকল্পের জন্য যে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল, তার এখন কী অবস্থা?
অধিগৃহীত জমিতে রীতিমতো চাষ শুরু হয়ে গিয়েছে। খরিফ মরসুমে এই চাষ চোখে পড়েনি। এখন বোরো মরসুমে কিন্তু দেবকুণ্ডু গ্রামের দিকের জমিতে রীতিমতো গভীর নলকূপ দিয়ে চাষ হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা প্রভাত ঘোষ, কার্তিক ঘোষদের বক্তব্য, “আপাতত প্রকল্পের কাজ হবে না বোঝার পরে সবাই চাষ করতে নেমে পড়েছে।” কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় জানান, চাষিরা জমি দিতে রাজি। কিন্তু সেই জমি জোগাড় করতে রাজ্যকেই মাঠে নামতে হবে। না হলে সমস্যা মিটবে না। আর রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন পর্ষদের এক কর্তার মত, “অন্যান্য বিষয় নিয়ে এনটিপিসি-র সঙ্গে আমাদের কথা হয়। তবে কাটোয়া নিয়ে এনটিপিসি কর্তৃপক্ষেরও কিছু বলার নেই। আমাদেরও কিছু বলার নেই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.