শুক্রবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “বন্যা বা ভাঙন হলে আমাদের জমি নিতে হবে মানবিক কারণে। সে ক্ষেত্রে মানুষকে সরে যেতে বলতে হবে।”
ক্ষমতায় আসার পরপরই আয়লার বাঁধের জন্য জমি অধিগ্রহণ ক্ষেত্রেও একই কথা বলেছিলেন তিনি। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, আয়লা ঝড়ের চার বছর পরেও প্রাথমিক ভাবে প্রয়োজনীয় ছ’হাজার একরের মাত্র ১০ শতাংশ জমিই অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে।
প্রশাসনিক সূত্রে বলা হচ্ছে, এই ক্ষেত্রে অধিগ্রহণের কাজে বাম এবং তৃণমূল জমানার যে বিশেষ ফারাক নেই, সেটা তথ্য-পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট। কী ভাবে? সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, ২০০৯ সালের ২৫ মে বিধ্বংসী আয়লার দাপটে ওলটপালট হয়ে যায় সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞ কমিটি বসিয়ে ওই এলাকায় মোট ৭৭৮ কিলোমিটার বাঁধ দেওয়ার পরিকল্পনা করে তদানীন্তন বামফ্রন্ট সরকার। দেখা যায়, এ জন্য জমি লাগবে ১৪ হাজার একর। ঠিক হয়, প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৬ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করে ২৬৩ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এ জন্য কেন্দ্র-রাজ্য মিলিয়ে ৬২৫ কোটি টাকা মঞ্জুরও হয়। |
তার পর প্রায় চার বছর অতিক্রান্ত। এর মধ্যে রাজ্যে সরকার বদল হয়েছে প্রায় দু’বছর আগে। কিন্তু ছবিটা বদলায়নি এতটুকু! না বাম জমানায়, না এই আমলে। সরকারি সূত্রে
জানা গিয়েছে, দুই জমানা মিলিয়ে প্রায় চার বছরে সরকারের হাতে এসেছে মাত্র ৭০০ একর জমি। এর প্রায় অর্ধেক এসেছে বামফ্রন্টের সময়ে। বাকিটা তৃণমূলের। সরকারি সূত্র আরও জানাচ্ছে, এই জমিতে জুন মাসের মধ্যে বাঁধ তৈরি হবে মোটে ২০ কিলোমিটার।
জমি অধিগ্রহণে কেন এত বিলম্ব হচ্ছে, তার কয়েকটি যুক্তি দিয়েছেন সেচ ও সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের কর্তারা। তাঁদের মতে, অধিগৃহীত এলাকায় বসত বাড়ি সরাতে দেরি হচ্ছে। সে জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে জমির মালিকদের নতুন বাড়ি তৈরি করে দিতে হচ্ছে। তাতে সময় লাগছে।
আবার সুন্দরবনের বেশির ভাগ জমির মালিক অন্যত্র থাকেন। তাঁদের সম্মতি আদায় করতেও অনেকটা সময় চলে যাচ্ছে।
এর সঙ্গে বেশ কিছু এলাকায় রয়েছে দখলদারের সমস্যাও। তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হলেও সরানোর কাজটা সহজ হচ্ছে না মোটেই। সব মিলিয়ে তাই অধিগ্রহণে গতি নেই।
নতুন সরকারের শপথ নেওয়ার দিন মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আয়লা-বাঁধের জন্য জমি দিলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। সেই কথা মাথায় রেখে অনেকে আবার জমির দেওয়ার বদলে পরিবার পিছু এক জনের সরকারি চাকরি দেওয়ার দাবি তুলছেন। সরকারি কর্তারা অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, যে ৭০০ একর জমি নেওয়া হয়েছে, তার জন্য কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি।
সরকারের যে এমন কোনও পরিকল্পনাও নেই, এ দিন তা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছেন, “চাকরির কোনও ব্যাপার নেই।”
জমি অধিগ্রহণে দেরি হচ্ছে কেন জানতে চাইলে তিন মাস আগে সেচমন্ত্রীর চেয়ারে বসা রাজীববাবু দায় চাপিয়ে দিয়েছেন বাম আমলের উপরে। তাঁর কথায়, “বাম আমলে তো কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এই সরকারই যা করার করছে। কাজের অগ্রগতি নিয়ে আমি মাসে দু’টো
বৈঠক করছি।” বাঁধ নির্মাণের কাজের জন্য তিনি বিদেশি প্রযুক্তি আনানোর কথাও ভাবছেন।
প্রশাসনের একটি অংশ বলছে, প্রযুক্তি আসুক। কিন্তু জমি নেওয়ার কাজে গতি না এলে তো সে সব বিশেষ কাজে লাগবে না। মুখ্যমন্ত্রীর মানবিক কারণও ডুবে যাবে হতাশায়। প্রশ্ন উঠেছে, ৭০০ একর হাতে আসতে চার বছর লেগে গেলে প্রথম পর্যায়ের জমি নিতে কত দিন লাগবে?
উত্তর কেউ জানে না। যা দেখেশুনে বিভাগীয় এক কর্তার সরস মন্তব্য, “আর একটা আয়লা হলে হয়তো জমি অধিগ্রহণের কাজে গতি আসবে।” |