টিম ইন্ডিয়ার ফার্স্ট স্লিপ এখন ভূতের বাড়ি
ফার্স্ট স্লিপ পজিশনটা টিম ইন্ডিয়ায় এখন ভূতের বাড়ি হয়ে গেছে। যে সেই বাড়িতে থাকতে যায়, সে-ই যেন ভূত দেখে। বীরেন্দ্র সহবাগ প্রথম দু’টো টেস্টে ওখানে দাঁড়িয়ে অনবরত ক্যাচ গলানোর পর মধ্যিখানে পূজারাকে ট্রাই করা হয়েছিল। তা, স্বল্প সময় সেখানে দাঁড়ানোর মধ্যেই তিনি ক্যাচ ফেলেন। তৃতীয় টেস্টে ব্র্যান্ড নিউ প্রথম স্লিপ রাখা হয়েছে বিরাট কোহলিকে। এমন নয় যে কোহলি অনভিজ্ঞ। দিল্লির হয়ে তো অনেক সময়ই তাঁকে ফার্স্ট স্লিপে দেখা যায়। অথচ তিনটে এমন ক্যাচ শুক্রবার কোহলি ফেললেন যা আজ থেকে ঠিক একশো ছত্রিশ বছর আগে এই দিনটায় ছাড়লেও সহজ ক্যাচ হিসেবেই গণ্য হত। কী ছিল দিনটায়? ক্রিকেট ওই দিনই মেলবোর্নে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল আনুষ্ঠানিক ভাবে!
প্রতিবার কোহলির দিকে শার্প ক্যাচ এলেই তাঁর ভূত দেখার মতো চমকে ওঠা দেখে অবশ্য মেলবোর্ন নয়, সিডনি মাঠের কথা মনে পড়ছিল। ব্র্যাডম্যানের দেশে ভারতের ২০০৮-এর সফর। প্রথম ইনিংসে তারা পাঁচশোর ওপর করে ফেলেছে। লক্ষ্মণ সেঞ্চুরি। সচিন সেঞ্চুরি। স্লিপ থেকে পন্টিং এগিয়ে এলেন মোহালিতে যিনি টিভি ধারাভাষ্য দিচ্ছেন সেই ম্যাথু হেডেনের দিকে। হেডেন তখন গালিতে। ভাবলেন, কোনও স্ট্র্যাটেজি টকফক বোধহয়। না। পন্টিং বললেন, “শেন ওয়ার্ন ছাড়া জীবনটা কেমন করুণ হয়ে গেল বুঝতে পারছ?” ঠিক তার আগের বছরে অবসর নিয়েছেন ওয়ার্ন।
এ দিন মিড উইকেট থেকে যখন তেন্ডুলকর দৌড়ে এলেন ধোনির কাছে। নিশ্চয়ই কোনও বোলিং পরিবর্তনের সুপারিশ করলেন। কিন্তু এমনও তো হতে পারে এসে বললেন, “স্লিপে রাহুল ছাড়া জীবনটা কেমন করুণ হতে যাচ্ছে বুঝতে পারছ?” এই সিরিজ হয়ে গেলে আগামী দু’বছর ভারতের তো দেশে টেস্ট সিরিজ নেই। অনবরত বিদেশে খেলা। গতিশীল পিচে ফার্স্ট স্লিপের গুরুত্ব আরও বাড়বে। কে দাঁড়াবে তখন?
ক্যাচ ফেলার সিরিয়াল
অবশ্য প্রথম দিন তিনটে স্লিপ ক্যাচ ছাড়লে যে ডিপ্রেশনের নেটওয়ার্কে গোটা টিমের আচ্ছন্ন থাকা উচিত, চণ্ডীগড়ের ম্যারিয়ট হোটেলে তা নিয়ে ফেরেনি ধোনির ভারত। তাদের এতগুলো ক্যাচ পড়া, টস জেতা এবং বিনা উইকেটে ১৩৯ রানে পৌঁছে যাওয়ার ত্রিমুখী সুবিধে যে উড়িয়ে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া! অন্তত অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পারফরম্যান্স বিচারে সৌরভ-ধোনির মধ্যে তুলনাই হয় না। এই দলটা যদি বা ভারত সফরে আসা তাদের দুর্বলতম না হয়! ব্যাটিং লাইন আপ স্পিন খেলতে সর্বকালের সবচেয়ে অপটু তো নিশ্চয়ই। শুরুতে যদিও মনে হচ্ছিল এরা স্পিন খেলার সদর্থক মনোভাব নিয়েই নেমেছে। ধার করেছে ম্যাথু হেডেনের এ দেশে ব্যাটিং সাফল্যের মূল দর্শন: ক্রিজে দাঁড়িয়ে থেকে ভারতীয় স্পিনার খেলো না। তা হলে নিজের ট্রেঞ্চে গুমরে মরতে হবে। বিপক্ষ টুক করে গ্রেনেডটা ঢুকিয়ে দেবে।
ওয়ার্নার আর কাওয়ানে কোনও সদ্ভাব নেই। ক্রিজে ব্যাটিং ছাড়া দু’জনে নাকি কথাও বলেন না। কিন্তু আজ মুখের ভাষা অবিকল একযা ব্যাটে শোনা যাচ্ছিল। যথাসম্ভব সামনে খেলো আর অশ্বিনকে জাদু বিস্তার করতেই দিও না। অশ্বিনের ব্যবহারে আজ কাজ হচ্ছে না দেখে কার্তিক মাসের নতুন পরিধেয়র মতো প্রজ্ঞান ওঝাকে পেশ করেন ভারত অধিনায়ক। খেলা তখন সবে প্রথম ঘণ্টা ছাড়িয়েছে।
এমনিতে উইনিং কম্বিনেশন চট করে বদলান না ধোনি। সহবাগকে বাদ দেওয়াটাই ব্যতিক্রম। তার সঙ্গে যে ঘরের মাঠে দলে রেখেও হরভজনকে খেলানো হবে না কেউ আঁচ করেনি। এটা কিন্তু ধোনির ধূর্ত চাল যে মধ্যিখানের সময়ে বিপক্ষ যখন দু’টো অফস্পিনারকে খেলার জন্য প্ল্যানিং আরও নিখুঁত করছে, তখন ঝট করে আরও একটা ন্যাটা স্পিনার খেলিয়ে দাও। প্রজ্ঞান ইংল্যান্ড সিরিজের সফলতম বোলারও। কিন্তু অ্যাদ্দিন বাদে হঠাৎ আবির্ভাবে তিনি লাইন পাচ্ছিলেন না। এমনিতেই ক্রিজে থাকা দুই ওপেনারই বাঁ হাতি! অস্বস্তিতে তাঁর লাইন আরও লেগ স্টাম্পের বাইরে বাইরে পরিভ্রমণ করছে তখন। আর মনে হচ্ছে ভাজ্জিকে গিলোটিনের দিকে তা হলে ঠেলে দেওয়াই হল? ‘টেল অব টু সিটিজ’-এর মহিলারা উল বুনতে বুনতে গুনবেচার। যুবরাজ, গম্ভীর, সহবাগ, হরভজন!
ঠিক এই সময় ম্যাচটা খুলে দিলেন রবীন্দ্র জাডেজা? নাহ, পুরো ভুল। ম্যাচটা খুলে দিলেন মাইকেল ক্লার্ক। ওয়ার্নারের বিদায়ে খেলায় প্রভাব পড়েনি। কিন্তু এই ধাক্কাটা যে প্রকাণ্ড।
চারটে প্লেয়ারকে সাসপেন্ড করে উঠে অধিনায়ক কিনা নিজেই প্রথম বলে স্টাম্পড! প্রেসবক্সের অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকদের মধ্যে দেখা গেল জগঝম্প পড়ে গিয়েছে। সবাই দেশে ফোন করছেন। এক জন শেন ওয়াটসনকে টেক্সট করে চাতক পাখির মতো মোবাইলের দিকে তাকিয়ে। অন্য দু’জন ফেসবুক-টুইটার দেখছেন। রেকর্ডে না হোন গুরুত্বে-তাৎপর্যে এই মুহূর্তে স্টিভ+পন্টিং=মাইকেল ক্লার্ক।
ইশান্ত শর্মা বনাম পন্টিং মুখোমুখি হলে যা ঘটত, অবিকল যেন তাই ঘটছে। জাডেজার মতো অজ্ঞাতকুলশীল স্পিনারের বলে সিরিজে মোট চার বার তিনি আউট! তার চেয়েও আশ্চর্য, প্রথম বলে সামনে খেলবেন ঠিক আছে। এতটা আগে চলে গেলেন কী করে? জুনিয়র প্লেয়ার এই ভঙ্গিতে আউট হলে কোচ তো জবাবদিহি চাইতেন, কী করার চেষ্টা করছিলে ভাই একটু বুঝিয়ে বলবে?
স্টিভের অস্ট্রেলিয়া বিশ্ব ক্রিকেটে প্রথম দিনে তিনশো-সাড়ে তিনশো রান করার কনসেপ্ট চালু করেছিল। আজ তারাই কিনা ভারতীয় বোলিংয়ের মোটামুটি সন্তোষজনক এবং ফিল্ডিংয়ের লজ্জাকর দিনে ১০৪ ওভারে করল মাত্র ২৭৩। রান রেট আড়াইয়ের সামান্য বেশি।
তা-ও স্টিভ স্মিথ শেষ দিকটা মেরেছেন বলে। নইলে মনে হত ব্যাগি গ্রিন একই সঙ্গে বোধহয় বিপক্ষ এবং নিজেদের রান চোক করার নীতি নিয়ে এসেছে। বৃষ্টি যখন খেলাটা এমনিই এক দিন ছোট করে দিয়েছে, তখন জিতে সিরিজে ফিরতে হলে তো আরও তাড়াতাড়ি রান চাই।
স্টিভ স্মিথকে যদিও সৌরভের পুণের হয়ে খেলার সময় যেমন আইপিএল-ঝকঝকে দেখাত, তেমনই লাগছে। দেখে আশ্চর্য লাগল, টি-টোয়েন্টির জন্য তাঁর স্টান্স এবং ব্যাক লিফটের কোনও পরিমার্জনই টেস্টে করেননি। তবু নামের পাশে যেহেতু অপরাজিত ৫৮ লেখা। ধরে নিতে হবে ওটাই ঠিক এবং সেরা টেকনিক! সাফল্যের বিরুদ্ধে কে আর কবে কথা বলেছে! যেমন সিরিজে জলছবি হয়ে থাকা ইশান্ত শর্মা। শেষ দিকটায় একটা রিভার্স সুইংয়ে ভারতকে তিনি ম্যাচে ফেরত এনেছেন। তার পর শনিবার সকালে স্টিভ আর টেলএন্ডারদের দ্রুত মুড়িয়ে দিতে পারার অপেক্ষা। এর পর উইকএন্ডে চুটিয়ে ব্যাট করে নাও। দর্শক খুশি হবে। টিমও খুশি হবে।
ভারতীয় ব্যাটিং এবং বিশেষ কারও জন্য ১৬ মার্চ শুভদিন হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। আসলে কালকের দিনটাতেই যে এ দেশের ব্যাটিং মহাপুরুষের অনন্য কীর্তির এক বছর পূর্তি। ঢাকাতে তেন্ডুলকরের শততম সেঞ্চুরি ১৬ মার্চ ঘটেছিল এত শিগগির ভুলে গেলেন?
যেমন ভারত সিরিজ জিতে যাওয়ার আগেই বেমালুম ভুলে যাওয়া হয়েছে মাত্র ক’দিন আগে কোচ ডানকান ফ্লেচারকে সরানো নিয়ে কত আলোচনা চলছিল। অবশ্যই সেটা এমনি এমনি নয়। যাক, বিসিসিআই এ দিন ফ্লেচারের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে দিল।
অর্থাৎ সেই ধোনি-সেই শ্রীনি-সেই ফ্লেচার!
একটাই প্রশ্ন কেবল খচখচ করছে, ফার্স্ট স্লিপ যাতে ভূতের বাড়ি না হয়ে ওঠে, সেই দায়িত্বটা কি কোচের ছিল না?

মোহালির সব ছবি তুলেছেন উৎপল সরকার

অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস
কাওয়ান ক কোহলি বো অশ্বিন ৮৬
ওয়ার্নার ক ধোনি বো জাডেজা ৭১
ক্লার্ক স্টাঃ ধোনি বো জাডেজা ০
হিউজ ক ধোনি বো প্রজ্ঞান ২
স্মিথ ব্যাটিং ৫৮
হাডিন বো ইশান্ত ২১
এনরিকে বো ইশান্ত ০
সিডল এলবিডব্লিউ জাডেজা ০
স্টার্ক ব্যাটিং ২০
অতিরিক্ত ১৫
মোট ২৭৩-৭
পতন: ১৩৯, ১৩৯, ১৫১, ১৯৮, ২৪৪, ২৪৪, ২৫১।
বোলিং: ভুবনেশ্বর ৭-০-৩৮-০, ইশান্ত ২১-৭-৪১-২, অশ্বিন ৩৩-৮-৬৪-১,
প্রজ্ঞান ২১-৪-৬২-১, জাডেজা ২২-৬-৫৬-৩।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.