সোনার কয়েন কেনা বন্ধ করে দিচ্ছেন গয়না ব্যবসায়ীরা। তাঁদের দাবি, সোনার চাহিদা কমাতেই এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, এটা আসলে কেন্দ্রকে চাপে ফেলার পাল্টা কৌশল। কারণ, সোনার গয়নায় নতুন করে উৎপাদন শুল্ক বসাতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। ফলে প্রবল অসন্তোষ দেখা দিয়েছে গয়না ব্যবসায়ী মহলে। তাদের সংগঠন স্বর্ণ শিল্প বাঁচাও কমিটি জানিয়ে দিয়েছে, আগামী সোমবার থেকেই সোনার কয়েন আর না-কেনার সিদ্ধান্ত কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। সব মহলেরই আশঙ্কা, এর ফলে যে সমস্ত সাধারণ লগ্নিকারী সোনার কয়েনে ইতিমধ্যেই বিনিয়োগ করেছেন, তাঁরা ঘোরতর সমস্যায় পড়বেন। লগ্নির মাধ্যম হিসাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে সোনার কয়েনের ভবিষ্যৎ-ও।
এ দেশে সোনার কয়েন বিক্রি করে প্রধানত ব্যাঙ্ক, ডাকঘর, কিছু বেসরকারি ও গয়না প্রস্তুতকারক সংস্থা। কিন্তু সাধারণ মানুষ কয়েন বিক্রি করতে গেলে, তা কেনে না তারা। ফলে কয়েন কেনার পর যদি লগ্নিকারী সেগুলি বেচতে চান, তা হলে যেতে হয় গয়না ব্যবসায়ীর দরজাতেই। এখন প্রশ্ন, ব্যবসায়ীরা আর কয়েন না কিনলে, কার কাছে সেগুলি বেচবে সাধারণ মানুষ? এবং সে ক্ষেত্রে যাঁরা ইতিমধ্যেই কয়েন কিনে লগ্নি করেছেন, তাঁরাই বা কতটা লাভ করতে পারবেন? |
শুধু তা-ই নয়, সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, বিক্রির জায়গা না পেলে কেউ কয়েন কিনবেনই বা কেন? ফলে বড়সড় কোপ পড়বে বিক্রিতেও। সমস্যায় পড়বে ব্যাঙ্ক, ডাকঘর-সহ কয়েন বিক্রেতা সংস্থাগুলি। কারণ অনেকেরই, বিশেষত বেশ কিছু ব্যাঙ্কের মোট ব্যবসার একটা বড় অংশ আসে কয়েন বিক্রি থেকে। এমনকী পরিসংখ্যান বলছে, দেশে মোট যত সোনা বিক্রি হয়, তার ৪০ শতাংশেরও বেশি কয়েন, বিস্কুট ও বাট (এক কথায় বুলিয়ন)। যেমন, ২০১২ সালে দেশে ৮৬৫ টন সোনা আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬৫ টনই বুলিয়ন। যার আবার ৬০ শতাংশই শুধু কয়েন।
অল ইন্ডিয়া জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ফেডারেশনের সভাপতি বাছরাজ বামালুয়ার অবশ্য দাবি, “আসলে এ ভাবে আমরা নিজেরাই সোনার চাহিদা কমাতে উদ্যোগী হয়েছি। কারণ, চাহিদা কমাতে কেন্দ্র যে ভাবে নানান শুল্ক চাপাচ্ছে, তাতে সমস্যায় পড়ছে গয়না শিল্প। আমরা কয়েন না কিনলে কাঁচা সোনার বিক্রি অনেকটাই কমবে। সরকারি চাপ থেকে বাঁচবে শিল্প।” তবে গয়না শিল্পমহল এতে ব্যবসায়ীদের ‘পাল্টা চাপের’ কৌশলই দেখতে পাচ্ছে। তারা মনে করছে, সম্প্রতি গয়নায় উৎপাদন শুল্ক বসাতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। ব্যবসায়ীরা কয়েন কেনা বন্ধ করে দিলে দেশ জুড়ে তীব্র সমস্যা তৈরি হবে। এটাই উল্টে চাপে ফেলবে সরকারকে। যা গয়না ব্যবসায়ীদের মূল উদ্দেশ্য।
তবে কয়েন নিয়ে কেউ গয়না গড়াতে এলে কী করবেন ব্যবসায়ীরা? স্বর্ণ শিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি বাবলু দে বলেন, “সাধারণত কয়েন তৈরি হয় ২৪ ক্যারাট পাকা সোনা দিয়ে। কিন্তু গয়না তৈরিতে চাই ২২ ক্যারাট। তাই ওই ২৪ ক্যারাটকে ২২ ক্যারাটে বদলে আনতে হবে। তবেই গয়না গড়ে দেব। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই সরাসরি কয়েন কিনব না।” আর এর ফলেই প্রভূত লোকসানের আশঙ্কা সাধারণ লগ্নিকারীদের। ওই রূপান্তর করাতে কয়েন নিয়ে যেতে হবে রিফাইনারিতে। সেখানে রূপান্তর করতে কয়েন গলানোর সময় সামান্য হলেও কিছু সোনা নষ্ট হবে। এর উপর আছে প্রক্রিয়াকরণ খরচ। সেই সঙ্গে কয়েনের মালিককে ঝক্কিও পোহাতে হবে। তাই সব মিলিয়ে যাঁরা শুধু লগ্নির লক্ষ্যেই কয়েন কেনেন, তাঁদের হাতে শেষমেষ কতটা মুনাফা আসবে বা আদৌ আসবে কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকে যাচ্ছে যথেষ্ট। |