|
|
|
|
এপ্রিলে কলকাতা আসছেন মোদী |
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • নয়াদিল্লি |
এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শহরে নিজের উন্নয়নের মডেল তুলে ধরতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এপ্রিলের গোড়ায় কলকাতায় পা রাখবেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। কথা বলবেন এ রাজ্যের শিল্প ও বণিক মহলের সঙ্গে।
বেশ কিছু দিন আগে গাঁধীনগরে মোদীর সঙ্গে দেখা করে কলকাতায় আসার জন্য তাঁকে আমন্ত্রণ জানায় ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের মহিলা-মঞ্চ ‘লেডিজ স্টাডি গ্রুপ’। গুজরাত সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল রাজ্যের উন্নয়ন, মহিলাদের ক্ষমতায়ন, যুব সম্প্রদায়ের দক্ষতা বৃদ্ধি, নারী ও শিশুদের উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে মোদী-প্রশাসনের কাজ খতিয়ে দেখেন। তাঁরা মোদীকে কলকাতায় গিয়ে উন্নয়নের মডেল ব্যাখ্যা করার অনুরোধ জানান।
এর পরেই শতাব্দী প্রাচীন বণিকসভা মার্চেন্টস চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিও (এমসিসিআই) মোদীকে কলকাতায় আসার আমন্ত্রণ জানায়। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়, ৩ এপ্রিল শহরের একটি পাঁচতারা হোটেলে শিল্পপতিদের সঙ্গে মিলিত হবেন মোদী। এমসিসিআই এবং আরও দুই বণিকসভা ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্স এবং ভারত চেম্বার অফ কমার্সের যৌথ উদ্যোগে এই সভা হওয়ার কথা।
বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ অবশ্য জানাচ্ছেন যে মোদীর কলকাতা সফরের দিনক্ষণ বদলে গিয়েছে। তাঁর কথায়, “আপাতত ৯ এপ্রিল মোদীর কলকাতা সফরের দিন ধার্য হয়েছে। সে দিন দলের পক্ষ থেকেও একটি অনুষ্ঠান করার কথা ভাবা হচ্ছে।” বণিকসভার একটি সূত্রও জানাচ্ছে, মোদী আসছেন ৯ তারিখেই। তবে ৩ হোক বা ৯, এপ্রিলের গোড়ায় মোদীর কলকাতা সফর একপ্রকার বাঁধা বলেই রাজ্য বিজেপি সূত্রের দাবি।
শিল্প-বাণিজ্যের নিরিখে মোদীর কলকাতা সফর যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন এ রাজ্যের শিল্প-বণিক মহলের কর্ণধারেরা। এ রাজ্যের শিল্পের গুজরাত যাত্রার অন্যতম দিকচিহ্ন হয়ে রয়েছে ‘ন্যানো’। তৃণমূলের বিরোধিতায় সিঙ্গুরের কারখানার ঝাঁপ বন্ধ করে সানন্দে পাড়ি দিয়েছিল টাটা মোটরস। তার পর গত চার বছরে পশ্চিমবঙ্গের শিল্পচিত্রে শুধুই খরা। গুজরাত যেখানে প্রতিদিনই নতুন নতুন শিল্প টেনে বিকাশের অন্যতম মডেলে পরিণত হচ্ছে, তখন এ রাজ্যের প্রতি শিল্পপতিদের আস্থা ক্রমেই তলানিতে গিয়ে ঠেকছে। মোদীর সফর থেকে রাজ্য সরকার কোনও শিক্ষা নেবে কিনা বলা কঠিন, তবে লগ্নির নতুন গন্তব্যের খোঁজে আপাতত তাঁর দিকেই তাকিয়ে পশ্চিমবঙ্গের শিল্পপতিরা।
রাজনীতির নিরিখেও মোদীর এই সফরের গুরুত্ব অনেক। সরকারি ভাবে না-হলেও আগামী লোকসভা নির্বাচনে দলের প্রধান মুখ হিসেবে তাঁর অভিষেক কার্যত হয়েই গিয়েছে। সর্বভারতীয় রাজনীতিতে ধীরে ধীরে নিজের প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। সপ্তাহ দুয়েক আগে দিল্লিতে বিজেপি-র জাতীয় পরিষদের বৈঠকে রাহুল সিংহের কাছে রাজ্যে বিজেপির হাল-হকিকত থেকে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ব্যাপারেও খোঁজখবর নিয়েছেন তিনি।
পশ্চিমবঙ্গে এখন বিজেপি-র এক জন বিধায়কও নেই ঠিকই, কিন্তু আগামী লোকসভা নির্বাচনে এই রাজ্যের উপর জোর দিতে চাইছেন দলীয় নেতৃত্ব। কারণ তাঁরা মনে করছেন, গো-বলয়ে দলের শক্তি আর বিশেষ বাড়ানো সম্ভব নয়। ফলে লোকসভায় আসন সংখ্যা বাড়ানোর জন্য পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যের দিকেই নজর দিতে হবে। সেই কারণে কেন্দ্রীয় নেতারা ঘন ঘন এ রাজ্যে আসছেন। দলের সভাপতি রাজনাথ সিংহ সদ্য কলকাতা ঘুরে এসেছেন। আগামিকাল রাজস্থানের দলীয় সভাপতি ও মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়াও কলকাতা যাচ্ছেন।
এই তালিকায় সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য সংযোজন অবশ্যই নরেন্দ্র মোদী। বিজেপি নেতাদের মতে, মোদীর এক অন্য আকর্ষণ রয়েছে। তিনি দলের কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা করতে পারবেন। মোদীর নামে সাধারণ মানুষের ভোটও আসবে বলে তাঁদের আশা। তবে এর আগে মোদী যখন কলকাতায় গিয়েছিলেন, তখন বিরোধের মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। এ বারেও সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিজেপি নেতারা। |
|
|
|
|
|