পরপর দুই কন্যাসন্তান জন্মানোয় স্ত্রীর উপর অত্যাচার বেড়েছিল। ফের বিয়েও করেছিলেন মালদহের হবিবপুরের বাসিন্দা মিলন ঘোষ। মানতে না পেরে প্রতিবাদ করেন প্রথম স্ত্রী তিথিরানি। সেই ‘অপরাধে’ বছর কুড়ির তিথির গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠল
মিলন ও তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী পল্লবী দাসের বিরুদ্ধে। দু’জনকেই পুলিশে দিয়েছেন বাসিন্দারা। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দোপাধ্যায় বলেন, “মেয়ে হওয়ায় স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগে এক যুবক ও তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীকে জনতা মারধর করে। পুলিশ ওই দুজনকে গ্রেফতার করেছে।”
গার্হস্থ্য হিংসা প্রতিরোধে আইন রয়েছে। পুলিশ-প্রশাসন থেকে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এ নিয়ে প্রচারও চালায়। তারপরেও কেন আটকানো যাচ্ছে না এমন ঘটনা? রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, “আসলে অধিকাংশ মেয়েই প্রথম বার মার খেয়ে চুপ করে থাকে। এতে ছেলেরা প্রশ্রয় পায়। অত্যাচারের মাত্রা বাড়তে থাকে।” সুনন্দাদেবীর মতে, “প্রথম থেকেই মেয়েদের রুখে দাঁড়াতে হবে। না হলে অবস্থা পাল্টাবে না।”
বছর পাঁচেক আগে হবিবপুরের আইহো গ্রাম পঞ্চায়েতের রতিরাম পাড়ার রণজিৎ ঘোষের মেয়ের তিথিরানির সঙ্গে মিলনের বিয়ে হয়। ওই দম্পতি স্থানীয় গোলারানিগঞ্জ পাড়ায় ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন। বিয়ের তিন বছরের মাথায়
তিথির প্রথম মেয়ে জন্মায়। প্রতিবেশীরা জানান, অত্যাচারের সেই শুরু।
মেয়ের মুখ চেয়ে তিথি চুপ করে থাকতেন। মাস দুয়েক আগে ফের ওই তরুণী কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। এরপর মিলনের অত্যাচারের মাত্রা বাড়ে। এ দিন সকাল দশটা নাগাদ
মিলন দ্বিতীয় বার বিয়ে করে নতুন স্ত্রী পল্লবীকে নিয়ে বাড়িতে আসেন। তিথি এই ঘটনার প্রতিবাদ করেন। তিনি প্রতিবাদ করায় তাঁর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তিথির বাবা রণজিৎবাবু বলেন, “দুটি কন্যাসন্তান হওয়ায় জামাই আবার বিয়ে করে। জামাই ও তার নতুন স্ত্রী মিলেই আমার মেয়েকে পুড়িয়ে মেরেছে।”
প্রতিবেশীরাই তিথিকে হাসপাতালে নিয়ে যান। ইতিমধ্যে পালানোর চেষ্টা করেন মিলন ও পল্লবী। গ্রামবাসীরা ধাওয়া করে দুজনকে ধরে ফেলেন। গাছে বেঁধে তাঁদের মারধর করা হয়। পঞ্চায়েতের কংগ্রেস প্রধান প্রতাপ দাস বলেন, “অভিযুক্ত দুজনকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি। তিথিকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়েছিল। তবে বাঁচানো যায়নি।” |