বিধানসভাতেও নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন আনিসুর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করে জনসভায় ‘অশ্লীল’ মন্তব্যের জন্য ফের ক্ষমা চাইলেন প্রাক্তন মন্ত্রী আনিসুর রহমান। এ বার বিধানসভায়। তাঁর মন্তব্য নিয়ে সরকার পক্ষের আনা স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিসের জবাবে ‘নিঃশর্ত ক্ষমা’ চেয়ে নিয়েছেন সিপিএম বিধায়ক আনিসুর। তবে প্রবল হইচইয়ের মধ্যে।
বিধানসভার বাইরে তাঁর মন্তব্যের জন্য আনিসুর সভায় ক্ষমা চাইলেও একটি সভায় বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রকে নিয়ে মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের মন্তব্য নিয়ে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস কেন খারিজ হয়ে গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএম বিধায়ক রামেশ্বর দলুই, শাজাহান চৌধুরীরা। ওই নোটিস জমা দিয়েছিলেন সিপিএম বিধায়ক মমতা রায়। নোটিস দানের প্রসঙ্গটি এড়িয়ে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেছেন, “চন্দ্রিমার বক্তব্যের ব্যাপারে কোনও স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস এলে নিশ্চয়ই বিবেচনা করে দেখতাম। কারও বক্তব্য অসাংবিধানিক হলে বিধানসভার কার্যপ্রণালী অনুযায়ী যে কেউ ব্যবস্থা নিতে পারতেন!” |
মঙ্গলবার প্রশ্নোত্তর পর্বের পরে পার্থবাবুই আনিসুরের বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের প্রস্তাবটি পাঠ করেন। তিনি বলেন, “এত দিনের এক জন বিধায়ক রাজ্যের মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর সম্পর্কে কী ভাষা ব্যবহার করেছেন! আমাদেরই মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে!” জবাবে আনিসুর বলেন, “ডিসেম্বরে উত্তর দিনাজপুরের ওই জনসভায় যা বলেছি, সে ব্যাপারে আমি নির্দ্বিধায় স্বীকার করছি আমার বক্তব্যের মধ্যে ডেলিভারি খারাপ হতে পারে। যে মূহুর্তে তা বুঝেছি, তখনই সাংবাদিকদের ডেকে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি।” পাশাপাশি তিনি এ-ও দাবি করেন, পুরো বক্তব্যের একাংশ তুলে নিয়ে হইচই করা হচ্ছে। পুরো বক্তৃতা শুনতে অনুরোধ জানান তিনি। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সরকার পক্ষের সদস্যেরা প্রবল হইচই শুরু করে দেন। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জিজ্ঞাসা করেন, “বাইরে ক্ষমা চেয়েছেন কি না, সেটা প্রসঙ্গ নয়। এখানে ক্ষমাপ্রার্থনা করছেন কি না বলুন।” শেষ পর্যন্ত স্পিকারের দিকে তাকিয়ে আনিসুর বলেন, “ওই কথা বলার জন্য আমি বাইরে ক্ষমা চেয়েছি। আপনার কাছেও ক্ষমা চেয়েছি। আজ সদনেও নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।”
পরে সভার বাইরে পার্থবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীকে যে ভাষায় আনিসুর আক্রমণ করেছিলেন, তা ক্ষমার অযোগ্য। তাঁর আরও বেশি শাস্তি পাওয়া দরকার ছিল। কিন্তু সভায় ক্ষমা চাওয়ায় বিষয়টি আর বাড়াতে চাই না।” আনিসুরও বলেন, “ভুল বুঝতে পেরে আমি তো বারেবারেই নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।” তবে রামেশ্বরবাবুদের অভিযোগ, মাঠে-ময়দানে প্রতিদিন তৃণমূল নেতারা সিপিএম নেতৃত্বকে নিয়ে যা বলেন, তার জন্য রোজই গণ্ডায় গণ্ডায় স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস দেওয়া যায়! কিন্তু সেই ভাবে কি বিধানসভা চলে?
কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্র এ দিন উল্লেখ পর্বে দাবি তোলেন, গার্ডেনরিচ-কাণ্ডে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে জেরা করতে হবে। বিচারাধীন বিষয় বলে স্পিকার সেই বক্তব্য কার্যবিবরণী থেকে বাদ দিতে বলেন। পরে পার্থবাবু বলেন, “বিচারাধীন বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না।” বিধানসভার অন্দরের বিষয় বলে বাইরে মুখ খুলতে চাননি ফিরহাদ হাকিমও। |