প্রণবের সফরে মিলল আশ্বাস
কর ফাঁকি রুখতে ভারতের পাশেই মরিশাস
য়তো কোনও দিনই মৃত্যু হবে না ‘মরিশাস মিথ’-এর। তবু একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে যখন মনমোহন সিংহের সরকার জেরবার, তখন নয়াদিল্লির মাথাব্যথা কমাতে আজ ইতিবাচক ইঙ্গিত দিল ভারত মহাসাগরের বুকে এই দ্বীপরাষ্ট্র। পোর্ট লুই জানাল, কর ফাঁকি রোধ ও বেআইনি আর্থিক লেনদেন রুখতে নয়াদিল্লির সঙ্গে শীঘ্রই যৌথ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে আগ্রহী মরিশাস।
কিন্তু ‘মরিশাস মিথ’টা কী?
মরিশাসকে বলা হয় ‘করের স্বর্গরাজ্য’ (ট্যাক্স হেভেন)। এখানে কোনও কোম্পানি পত্তন করে মুনাফা করলে মুলধনী আয়ের ওপর কর (ক্যাপিটাল গেন ট্যাক্স) দিতে হয় না। দ্বীপরাষ্ট্রের সেই কর ব্যবস্থার সুযোগ নিয়েই গত দশ বছরে ভারতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে প্রায় ৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা ভারতে বিদেশি বিনিয়োগের ৪২ শতাংশ!
অথচ মুক্ত অর্থনীতিতে যে পথ ধরে বিনিয়োগের আগমন একদা নয়াদিল্লির হাসি ফুটিয়েছিল, সেই মরিশাস পথেই কলঙ্কের দাগ লেগেছে। স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি থেকে সম্প্রতি অগস্ত্য হেলিকপ্টার দুর্নীতি সবেতেই মরিশাস পথের ছায়া দেখা গিয়েছে। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, বিভিন্ন ভারতীয় সংস্থা তাদের কালো টাকা প্রথমে হাওয়ালা মারফৎ এই দ্বীপরাষ্ট্রে এনেছে। তার পর এখানে ভুইফোঁড় সংস্থা পত্তন করে সেই টাকা বিনিয়োগ করেছে ভারতে। এবং তাতে করও দিতে হচ্ছে না তাদের। শুধু বিভিন্ন সংস্থা নয়, অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জগন্মোহন রেড্ডি থেকে শুরু করে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা অনেক রাজনীতিকেরই কালো টাকা মরিশাস পথ ধরে ভারতে ফিরেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা গিয়েছে, মরিশাসের সংস্থা ‘ইন্টারস্টেলার টেকনোলজি’র মাধ্যমে হেলিকপ্টার কেলেঙ্কারির ঘুষের টাকা দেওয়া হয়েছে ভারতে কারবারিদের। পোর্ট লুইতে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত টি আর সীতারামের কথায়, “হয়তো তদন্তে দেখা যাবে, সাম্প্রতিক কালে ভারতে সব দুর্নীতির ঘটনার শিকড় কোনও না কোনও ভাবে এই দ্বীপরাষ্ট্রে রয়েছে।”

নবীনচন্দ্র রামগুলামের সঙ্গে প্রণব মুখোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই
স্বাভাবিক ভাবেই দুর্নীতির প্রশ্নে সমালোচনার মুখে পড়ে ঘরোয়া রাজনীতিতে চাপ তৈরি হয়েছে মনমোহন-সরকারের ওপর। আর সেই কারণেই মরিশাসের সঙ্গে কর ফাঁকি রোধে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার সংস্কার চাইছে নয়াদিল্লি। যাতে ভারতে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রচুর মুনাফা করে কোনও সংস্থা কর ফাঁকি দিতে না পারে। এবং দুই, কালো টাকা উদ্ধার সম্ভব হয়।
কর ফাঁকি রুখতে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যেই ভারত-মরিশাস জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের দু’টি বৈঠক হয়েছে। আজ ভারতীয় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পর সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী নবীনচন্দ্র রামগুলাম বলেন, “আশা করি খুব শীঘ্রই এ ব্যাপারে সুষ্ঠ সমাধান সূত্র বেরোবে। যাতে দু’দেশই উপকৃত হবে।” প্রণববাবু বলেন, “মরিশাসের সঙ্গে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পরবর্তী বৈঠক হবে নয়াদিল্লিতে। ভারত সেই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।”
তবে কূটনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, ঐতিহাসিক ভাবে নয়াদিল্লির প্রতি মরিশাস আকণ্ঠ ঋণী ঠিকই। কিন্তু কর ফাঁকি ব্যবস্থাপনা নিয়ে নয়াদিল্লিকে সুবিধা করে দিতে তাদের পক্ষেও বেশি দূর এগোনো সম্ভব নয়। কেন না এই দ্বীপরাষ্ট্রে মূলধনী খাতে আয়ের ওপর কর না থাকার জন্যই এখানে গোটা পৃথিবী থেকে বিনিয়োগ আসে। কোম্পানি পত্তন হয়। এ দেশের অর্থনীতির সেটাই মেরুদণ্ড। সুতরাং কঠোর ব্যবস্থা নিতে গেলে আর কেউ বিনিয়োগই করবে না। তাতে ধস নামবে মরিশাসের অর্থনীতিতেই। পোর্ট লুইতে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের কথায়, “নিজেদের কর ব্যবস্থা নিয়ে কিন্তু কোনও গ্লানি নেই মরিশাসের। বরং বিষয়টি নিয়ে এই দ্বীপরাষ্ট্রকে যে ভাবে তুলে ধরা হয়, তাতে বিলক্ষণ আপত্তি রয়েছে এদের।”
মরিশাসের অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতা যে নয়াদিল্লি বোঝে না, তা নয়। তা ছাড়া নর্থব্লকের কর্তারা এ-ও জানেন, কর ব্যবস্থা ফাঁকি নিয়ে নয়াদিল্লিও বাড়াবাড়ি করলে ভারতে বিনিয়োগে ভাটা পড়বে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় বাজেটে অর্থমন্ত্রী চিদম্বরম জানিয়েছিলেন, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কর চুক্তির আওতায় কর ছাড় পেতে গেলে ‘ট্যাক্স রেসিডেন্সি’ সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। তাঁর সেই ঘোষণাতেই ধস নামে শেয়ার বাজারে। ফলে পর দিনই চিদম্বরমকে সাংবাদিক বৈঠক করে বলতে হয় যে, মরিশাসের সঙ্গে নতুন কর চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত পুরনো ব্যবস্থাই বহাল থাকবে!
প্রশ্ন হল, শেষ পর্যন্ত ভারত-মরিশাস কর চুক্তির কী হবে? এক ভারতীয় কূটনৈতিকের জবাব, “দুই রাষ্ট্রনেতা যে বার্তা দিলেন, তা অনেকটাই রাজনৈতিক। প্রণব-রামগুলামের বার্তা ভারতের ঘরোয়া রাজনীতির জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। এর পর মনমোহন-সরকার বলতে পারবে যে, কর ফাঁকি, কালো টাকা উদ্ধার ও দুর্নীতি রুখতে নয়াদিল্লি চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না। কিন্তু কর ব্যবস্থার বিপুল সংস্কারের সম্ভবনা নেই।”
দু’দেশের মধ্যে যে চুক্তির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, তাতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত এবং কালো টাকা উদ্ধারের প্রশ্নে নয়াদিল্লিকে সাহায্য করবে মরিশাস। কোনও ভারতীয় সংস্থা বা ব্যক্তি এ দেশে ভুইফোঁড় সংস্থার পত্তন করলে সে ব্যাপারে তথ্য জানাবে নয়াদিল্লিকে। যাতে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু মরিশাসের মাধ্যমে ভারতে বিনিয়োগ ও কর সুবিধার সুযোগ থাকবেই। তাই বেঁচে থাকবে ‘মরিশাস মিথ’ও!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.