|
|
|
|
আনন্দplus এক্সক্লুসিভ |
প্রত্যাশার চাপ তো সারা জীবন ঘাড়ের কাছেই রইল |
আবার নবরূপে! সরি ভুল লেখা হল। নবরূপে নয়। ফের নিজের ভূমিকায়।
‘দাদাগিরি’র দাদা হয়ে। মোহালি টেস্ট শুরুর আগে চণ্ডীগড় থেকে টেলিফোনে
অ্যাঙ্কর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার নিলেন গৌতম ভট্টাচার্য |
অনুভূতিটা কি পুরনো বাড়িতে ফিরে আসার মতো?
না ঠিক তেমন নয়। আমার শুধু একটাই কথা মনে হচ্ছে। আমরা যাতে ঠিক ভাবে শো-টা উতরে দিতে পারি। যাতে নানা রকম ভ্যারাইটি আনতে পারি। যেটা দেখে লোকের মনে না হয় যে আগের দু’বছর একই সব জিনিস দেখেছে।
কী বলছেন? কোনও তফাত নেই? ‘দাদাগিরি’র অ্যাঙ্কর হিসেবে ফেরায় কোনও অনুভূতি নেই?
সে রকম কোনও তফাত নেই। একই রকম। আসলে শো-টা কতটা বদলাবে সেটা প্রোডিউসারের ওপর নির্ভর করে। শো-র ফর্ম্যাটটা কেমন হবে সেটা তো প্রোডিউসারই ঠিক করেন। কাজেই গোটা ব্যাপারটা অনেকটা তাঁর দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়।
‘দাদাগিরি’র অভিজ্ঞতা আপনাকে জীবনে কী দিয়েছে?
দিয়েছে প্রচুর সুখের টুকরো টুকরো মুহূর্ত। আমি জীবনে কখনও ভাবতে পারিনি যে আমি একটা টিভি শো হোস্ট করব আর সেটা লোকের এত ভাল লাগবে। সে দিক থেকে বরবারই এটা প্লেজেন্ট সারপ্রাইজ।
‘দাদাগিরি’ হোস্ট করা আর আইপিএলে ব্যাট হাতে দাঁড়ানো, কোনটা বেশি কঠিন?
কোনও তুলনাই হয় নাআইপিএল। ওটা একটা ইন্টারন্যাশনাল কম্পিটিশন। নিজের ওপর প্রচণ্ড চাপ থাকে। ব্যাটসম্যান হলে একটাই সুযোগ। একটা ভুল করেছ কী গ্যাছো। সেখানে টিভি শো হল রিটেকের দুনিয়া। ভুল করলেও অনেক সুযোগ আছে।
সাবলীল পরিচালনায় টিভি শো-কে সুপারহিট পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া আপনাকে কি ক্রিকেট ভাষ্যকার হিসেবে বাড়তি সুবিধে দিয়েছে?
মনে হয় না। ভাষ্যকারের জীবন অন্য রকম। কমেন্টেটরের দরকার খেলাটা নিজে খুব ভাল ভাবে বোঝা আর ঠিকমতো লোককে বোঝানো। যে ভাষায় কমেন্ট্রি করছে সেই ভাষার ওপর দখলটা দরকার। অর্থাৎ আমি যদি ইংলিশ কমেন্টেটর হই, ইংলিশটা গুছিয়ে বলা আমায় জানতেই হবে।
কিন্তু এই যে আবার হোস্ট হিসেবে আসছেন। প্রচুর প্রত্যাশার চাপ তো আপনাকে ঘিরে থাকবে।
আমার সারা জীবন ধরেই তো প্রত্যাশার চাপ ঘাড়ের ওপর থাকল। চাপটা আর সরল কোথায়? আর আমি এখন শিখেও গিয়েছি এটার সঙ্গে কী ভাবে মানিয়ে চলতে হয়।
কী ভাবে মানাতে হবে?
মানাতে হবে এটা ভেবে যে, আশেপাশের প্রত্যাশা আপনি কখনও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। ওটা নিয়ে যত চিন্তা করবেন তত সমস্যা আরও বাড়বে। তার চেয়ে নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী যেটা করতে পারেন, সেটাতে যত মন দেবেন তত ভাল।
ওই যে গানটা যখনই শুরু হয়, দা-দ্দা-গিরি... বাঙালির ড্রইংরুমে কোথাও ঢুকে পড়েন তার ভালবাসার রাজপুত্রআপনি।
সত্যি বলতে কী, ‘দাদাগিরি’তে আসার পর আমি যে পৃথিবীটা পেয়েছি সেটা আমার কাছে সম্পূর্ণ অচেনা ছিল। আমার অবশ্যই মানুষের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় ছিল কিন্তু এত বিশাল সংখ্যক মানুষের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ হওয়ার উপায় ছিল না। তা ছাড়া আমি এমন একটা জীবনের মধ্যে ছিলাম যেখানে প্রতি মুহূর্তটাই চাপ। যেখানে প্রতিটা ডেলিভারি আমার পেশাদার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। অসম্ভব কাঠিন্যের পৃথিবী। সেখান থেকে এই ভালবাসার জগতে নেমে আসাটা আমার কাছেও খুব মধুর।
অমিতাভ কেবিসি পরিচালনার সময় বারবার করে কমন ম্যানের সঙ্গে মেশার অপূর্ব অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। ‘দাদাগিরি’ করতে গিয়ে আপনার কখনও সে রকম মনে হয়েছে?
এটা সত্যিই চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা। আমার বারবার মনে হত, চোখের সামনে অনেকগুলো মুখ দেখছি যাদের জীবনে সুযোগ হয়তো খুব সংক্ষিপ্ত। যারা কোনও দিন কোনও পুরস্কার পায়নি। যারা কোনও দিন টিভির সামনে আসেনি। আজকে তারা হঠাৎ করে একটা বিশাল মঞ্চে চলে এসেছে। যেখানে এত দিনের আন্ডারডগ তাদের কিনা সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখছে। জীবনে এই যে কয়েক ঘণ্টার একটা সুখের অভিজ্ঞতার সামনে ওরা দাঁড়িয়ে, ওটা দেখে আমার দুর্ধর্ষ লাগত। আর মনে হত এর পর যদি ওরা প্রাইজ পেয়ে যায় তা হলে তো সোনায় সোহাগা। আমি তাই সব সময় চেষ্টা করেছি। এ বারও করব এই কমন ম্যানকে নানা রকম সাহায্য করতে। ওদের জিততে সাহায্য করে যে আনন্দটা পাওয়া যায় সেটা অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
অতিথি হিসেবে আপনি অনেককে ডেকেছেন। এমনকী শাহরুখকেও। ধোনিকে আসতে বলবেন?
(একটু থমকে গিয়ে) কেন নয়? ও যদি সময় পায়, নিশ্চয়ই।
দশ-এগারো মাস আগে কাছাকাছি সময়ে কলকাতা আলোড়িত ছিল ইডেনে খান ভার্সেস দাদা নিয়ে। দিনটা ছিল ৫ মে। আসছে এপ্রিল মাস। আইপিএল মাস। অথচ আপনাকে জিজ্ঞেস করতে হচ্ছে শুধু ‘দাদাগিরি’র ওপর।
(কিছুটা উদাসীন গলা) খেলার জীবন তো একটা সময় শেষ হয়েই যায়। ক্রিকেটার জীবনও একটা জায়গায় এসে দাঁড়ি পড়তে বাধ্য।
তা হলে এ বছর আইপিএলে আপনি কোনও ভাবেই জড়িত নেই?
নাহ্। পরের বছর থেকে অন্য ক্যাপাসিটিতে ফিরব।
এই এক বছর কি তা হলে বিজ্ঞাপন বিরতি?
বলতে পারেন।
‘দাদাগিরি’র আপনার এ বারের প্রথম শো টেলিকাস্ট হলেই মিঠুন চক্রবর্তীর গত বছরের করা ‘দাদাগিরি’র সঙ্গে একটা তুলনা চলে আসবে।
হুঁ।
হুঁ নয়। জানতে চাইছি মিঠুনের ‘দাদাগিরি’ আপনার কেমন লাগত?
দেখুন মিঠুনদার একটা নিজস্ব স্টাইল ছিল। প্রোডিউসাররা ওর বেলা অনুষ্ঠানটা কিছুটা আলাদা সাজিয়েছিলেন। আমার বেলা যেমন এক-একটা রাউন্ডের নাম ক্রিকেটিং টার্মস থাকত। ওর বেলা সেটা থাকত ফিল্মের নাম। |
|
এত সেফ না খেলে বলুন না মিঠুনের ‘দাদাগিরি’ কেমন লাগত?
সেফ খেলছি না তো। এটা তো সেফ খেলাই হল। সরাসরি বলুন মিঠুনের ‘দাদাগিরি’র কোনটা শক্তি ছিল। কোনটা দুর্বলতা ছিল।
মিঠুনদার পারফরম্যান্স বিচার করার জায়গায় আমি নেই। পারফর্মার হিসেবে ওঁকে আমি ভীষণ শ্রদ্ধা করি। উনি প্রথম যিনি বলিউডে বাঙালিকে এক নম্বর জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিলেন। আমি খুব ভাল বুঝতে পারি কাজটা কত শক্ত। তাই মিঠুনদার প্রতি আমার অসম্ভব শ্রদ্ধা আছে। উনি যা-ই করুন না কেন আমি সেটা দেখব।
আপনি তো আজকে হাঁটুর ওপরে ওঠা ডেলিভারি খেলছেনই না।
না না হাঁটুর ওপর বা নীচে নয়। এটা মন থেকে বলছি।
জুলাইতে যে দিন ‘দাদাগিরি’ প্রথম দেখানো হবে, আপনার বাবার কথা কি আরও বেশি মনে পড়বে?
না, শোয়ের জন্য আলাদা করে কিছু মনে পড়বে না।
কেন? উনি ‘দাদগিরি’ দেখতেন না?
দেখতেন। কিন্তু বাবা অনেক বেশি উৎসাহী ছিলেন আমার ক্রিকেট দেখতে।
চণ্ডী গঙ্গোপাধ্যায়-উত্তর তাঁর ছোট ছেলের জীবন কতটা বদলেছে?
জীবন বদলেছে বলতে কিছুটা নিঃসঙ্গ হয়েছে তো নিশ্চয়ই। অনেক কিছু জিনিস যেটা জানতাম সামলানোর জন্য ওপরে একটা লোক রয়েছে, সেই ছাতাটাই আজ আর নেই। বাড়ি ফেরার সময়ও মাঝে মাঝে মনে হয়, একটা লোক যে অপেক্ষা করে বসে থাকত তাকে গিয়ে আর দেখব না।
যত দিন যাচ্ছে সাংবাদিকরা আবিষ্কার করছেন দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে আপনার জনপ্রিয়তা আরও বাড়ছে। যে কোনও ক্রিকেট মাঠে আপনি ঢুকলেই আজও দাদা দাদা চিৎকার। যেটা পাঁচ বছর আগে অবসর নেওয়া লোকের জন্য হওয়ার কথা নয়। কিন্তু একই সঙ্গে ভাবমূর্তিতে কোথাও যেন আপনি হয়ে গিয়েছেন জঙ্গি ইউনিয়ন নেতা। যাকে মালিক পক্ষ একেবারেই পছন্দ করে না।
গ্রহণযোগ্যতার বিচারে এটা কি অদ্ভুত কন্ট্রাডিকশন নয়?
পৃথিবীতে অনেক লোক আছে। সবাই আপনাকে ভাল বলবে এর তো কোনও গ্যারান্টি নেই। শুধু আমি কেন। তেন্ডুলকর, দ্রাবিড়, কুম্বলেএদের সবাইকে প্রত্যেকের ভাল লাগবে এ রকম কোনও কথা নেই। হয়তো সাত জনের লাগবে, তিন জনের লাগবে না। এটা কী করা যাবে? এটা তো নিয়ন্ত্রণ করার কোনও উপায় নেই।
আপনার ক্ষেত্রে মাঝে মধ্যেই যেটা হচ্ছে, জনমত সঙ্গে থেকেও এমন কিছু প্রভাবশালী লোক রুষ্ট হয়ে থাকছেন যাঁরা ক্ষমতার দাঁড়িপাল্লায় অনেক শক্তিশালী। তাঁরা আইপিএল মালিক হতে পারেন। বিদেশি কোচ হতে পারেন। বোর্ডের সর্বময় কর্তা হতে পারেন।
(দীর্ঘশ্বাস) আমি কী করতে পারি? এতে তো আমার কোনও হাত নেই।
কোথাও কি ওদের মনে হয় যে আপনি খুব ক্ষমতাশালী? আপনার বাহ্যিক দাপট কোথাও গিয়ে কি ওঁদের মনে ইনসিকিওরিটি তৈরি করে দেয়?
জানি না। আমি তো পাওয়ারফুল নই। আর পাওয়ারফুলের মতো আচরণও করি না।
তা হলে ভ্রমাত্মক ইমেজারিটা কেন? এতে আপনার ক্ষতি হয় না?
ক্ষতি তো হয়েইছে। আজও হচ্ছে। তবে আমি তো এ সব ভেবে জীবন চালাতে পারি না। আমি আমার মতোই চলি। ওই যে বললাম, যাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না তার কথা ভেবে দুশ্চিন্তা করেই বা কী লাভ? ক্ষতি হলেও সেটা মেনে নিয়ে মনে লড়াই এনে আবার এগিয়ে যেতে হয়। |
|
|
|
|
|