রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে আক্রমণে তীব্র প্রতিক্রিয়া
ক্ষুব্ধ কমিশন, মুখ খুললেন রাজ্যপালও
চাপ আসছিল মাসকয়েক ধরেই। রবিবার আসে সরাসরি রাজনৈতিক আক্রমণ। এবং সেই আক্রমণের প্রতিবাদে এবং সমালোচনায় এ বার প্রকাশ্যেই মুখ খুলতে হল রাজ্যের দুই সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষকে। রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্যপাল। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে বাম আমলে নিযুক্ত। সে জন্যই বামেদের পরাজয় বিলম্বিত করতে বারবার পঞ্চায়েত ভোট পিছিয়ে দিচ্ছেন বলে রবিবার অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। ঠারেঠোরে পক্ষপাতের প্রসঙ্গটা একাধিক বারই তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি দফতরে কাজ করা না-করার প্রসঙ্গে প্রকাশ্য সভাতেই তিনি বলেছেন, সব আমলা তো আমাদের নয়।.... তবে সরাসরি কোনও পদ বা ব্যক্তির নাম করেননি। রবিবার কিন্তু সেটাই করে বসেছেন তাঁর দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা। সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি সব ক’টি রাজনৈতিক দলের নেতা এর তীব্র সমালোচনায় মুখর হন সে দিনই। কিন্তু এ বার প্রতিক্রিয়া এল রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ স্তর ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে।
মুকুল রায়ের অভিযোগকে সোমবার ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মন্তব্য করল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট কবে, ক’দফায়, কেমন নিরাপত্তায় হবে, তা নিয়ে মাস কয়েক ধরেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে টানাপোড়েন চলছে কমিশনের। কিন্তু কমিশনের তরফে প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়া এল এই প্রথম। মুকুলবাবুর মন্তব্যকে ভাল চোখে দেখছেন না রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনও। সোমবার দক্ষিণ কলকাতায় এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অনুষ্ঠানের পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রাজ্যপাল বলেন, “সাংবিধানিক দ্বায়িত্বে আছেন, এমন কারও সম্পর্কে এ ধরনের অসহিষ্ণু মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক। এমন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা উচিত।” তৃণমূলের অভিযোগ নিয়ে এ দিন ক্ষোভ জানান প্রাক্তন আমলারাও।


বাম সুপারিশে নিযুক্ত হন। ফেব্রুয়ারিতে ভোট
হলে বামেদের হার নিশ্চিত ছিল। সেই হার
বিলম্বিত করতেই ভোট পিছোচ্ছেন।

রবিবার, ১০ মার্চ ২০১৩


সাংবিধানিক দায়িত্বে থাকা কারও সম্পর্কে এ
ধরনের অসহিষ্ণু মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক।
এ থেকে বিরত থাকা উচিত।

সোমবার, ১১ মার্চ ২০১৩


প্রাক্তন মুখ্যসচিব
যত দিন মীরা পাণ্ডেকে দেখেছি, মনে হয়েছে, উনি ভাল অফিসার।
কখনও রাজনৈতিক পক্ষ নিয়ে কাজ করতে দেখিনি।

রাজ্য সরকার বনাম কমিশনের মতবিরোধে অবশ্য ইতি পড়ছে না এতে। পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এ দিনই সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। রাজ্য নির্বাচন কমিশন তিন দিনে ভোট করানোর সুপারিশ করেছে। কমিশনকে বিঁধেই এ দিন সুব্রতবাবুর কটাক্ষ, “আট দফাতে হলেও কি নিশ্চিত ভাবে বলা যাবে, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে?” বিধানসভার লবিতে দাঁড়িয়ে তিনি যোগ করেন, “তবে আমরা মনে করি, রাজ্যে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার পরিস্থিতি রয়েছে।” তিনি জানান, বিধানসভায় বাজেট আলোচনা শেষ হলে আগামী শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজ্য সরকার কমিশনকে ফের চিঠি দেবে। তাতে দু’দিনে পঞ্চায়েত ভোট করার কথাই বলা হবে। পঞ্চায়েত মন্ত্রী বলেন, কমিশনকে ওই চিঠি দেওয়ার পরে দিন দুই অপেক্ষা করে রাজ্য সরকার পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে দেবে।” রাজ্য নির্বাচন কমিশনের এক আধিকারিকের ব্যাখ্যা, বিজ্ঞপ্তি জারির অধিকার রাজ্য সরকারের রয়েছে। কিন্তু তাতে কমিশন সন্তুষ্ট হতে না পারলে সরকারকে পুনর্বিবেচনা করতে বলতে পারে। কত বার রাজ্য চিঠি দিতে পারে, আর কত বার কমিশন পুনর্বিবেচনা করতে বলতে পারে আইনে সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই। কিন্তু আইন অনুযায়ী নির্বাচন যেহেতু কমিশনই পরিচালনা করবে, তাই তাদের সন্তুষ্টির বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে রাজ্য সরকারকে।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন সাধারণত রাজনৈতিক দল বা কোনও রাজনীতিকের মন্তব্য সম্পর্কে সরকারি ভাবে প্রতিক্রিয়া জানায় না। কিন্তু মুকুলবাবুর কটাক্ষের ব্যাপারে সোমবার কমিশনের তরফে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সচিব তাপস রায়। তিনি বলেন, “এটি দুর্ভাগ্যজনক। কমিশন অবাধ, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য আইন মেনে চলছে।” কমিশনের এক আধিকারিক জানান, দেশে ২৮টি রাজ্যে নির্বাচন কমিশন রয়েছে। প্রায় সব রাজ্যই নির্বাচনের দিন ঠিক দায়িত্ব কমিশনের হাতেই ছেড়ে দিয়েছে। সম্ভবত শুধু পশ্চিমবঙ্গ, কেরল এবং বিহারই এর ব্যতিক্রম। পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ঠিক করার অধিকার তারা সরকারের হাতে রেখেছে। মীরাদেবী সম্পর্কে মুকুলবাবুর মন্তব্যকে ভাল চোখে দেখছেন না রাজ্যের প্রাক্তন আমলাদের অনেকেই। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব সৌরীন রায় বলেন, “যত দিন মীরা পাণ্ডেকে দেখেছি, আমার মনে হয়েছে, খুব ভাল অফিসার। কখনও ওঁকে রাজনৈতিক পক্ষ নিয়ে কাজ করতে দেখিনি।” সৌরীনবাবু বর্তমানে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের সদস্য। বর্তমান বিতর্কের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আমি বিচার বিভাগীয় একটি পদে রয়েছি। তাই সম্প্রতি যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে, তা নিয়ে কিছু বলতে চাই না।”
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেবের কথায়, “মীরা পাণ্ডে বামফ্রন্টের আমলে নিযুক্ত হলেও কখনও বামফ্রন্টের দ্বারা প্রভাবিত হননি। আমরা তাঁকে পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু তিনি নিজের মতোই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর পরিচালনায় বহু নির্বাচনে বামফ্রন্ট পরাজিত হয়েছে। সে ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠে কী করে?” রবীনবাবুর অভিযোগ, মুকুলবাবুরা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের মতো স্বশাসিত সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন। মুকুলবাবুর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের সচিবের সঙ্গে ঘুরেছি, এটা মুকুল রায় প্রমাণ করতে পারলে যে কোনও শাস্তি মাথা পেতে নেব।”
মীরা পাণ্ডের কাজের প্রশংসা করেছেন রাজনাথ সিংহ। এ দিন কলকাতায় তিনি বলেন, “আমি যত দূর জানি, মীরা পাণ্ডে এক জন ভাল এবং দক্ষ আধিকারিক।” অবাধ এবং সুষ্ঠু পঞ্চায়েত ভোটের স্বার্থে রাজ্য নির্বাচন কমিশন সব রকম প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করুক এই দাবিতে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার মীরাদেবীর সঙ্গে দেখা করবে। একই দাবি নিয়ে সোমবারই তাঁর সঙ্গে দেখা করে সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের এক প্রতিনিধি দল। লিবারেশনের রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষের বক্তব্য, “তিন পর্যায়ে পঞ্চায়েত ভোট এবং আসন সংরক্ষণের অসম্পূর্ণ তালিকা সংশোধন করার আর্জি জানিয়েছি। পঞ্চায়েতগুলি বিরোধীশূন্য করার জন্য যে সন্ত্রাস হচ্ছে, তারও তথ্য কমিশনারকে জানিয়েছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.