বোনকে কটূক্তি ও তার হাত ধরে টানার প্রতিবাদ করায় ইভটিজারদের হাতে প্রহৃত হলেন দাদা। ঘটনার প্রতিবাদ করায় ওই ইভটিজাররা রেহাই দেয়নি স্থানীয়এক চায়ের দোকানিকেও। তাঁকে এবং তাঁর স্বামী, ছেলেকেও মারধর করে ও ঘরে ভাঙচুর চালায় তারা। বসিরহাটের এসডিপিও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রবিবার রাতে বসিরহাটের বড় জিরাফপুর গ্রামে ওই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে আতাউর রহমান ও রাহুল অধিকারী নামে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বসিরহাটের উত্তর বাগুন্ডি গ্রামের বাসিন্দা ওই কিশোরী একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। রবিবার বিকেলে বসিরহাট স্টেশন লাগোয়া এলাকায় সে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে গিয়েছিল। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ দাদার সঙ্গে সাইকেলে বাড়ি ফিরছিল সে। সেই সময় বসিরহাট স্টেশন থেকে কয়েক জন দুষ্কৃতী তাদের পিছু নেয়। সেই সঙ্গে চলতে থাকে কিশোরীর প্রতি কটূক্তি। ভয় পেয়ে ওই কিশোরী ও তার দাদা জোরে সাইকেলে চালালে দুষ্কৃতীরাও তাদের তাড়া করে। |
বসিরহাট টেলিফোন ভবনের কাছে একটি চায়ের দোকানের সামনে দুষ্কৃতীরা তাদের ধরে ফেলে। ওই কিশোরীর কথায়, “ওরা আমাদের উদ্দেশ্যে বাজে বাজে কথা বলছিল। আমার হাত ধরে টানাটানি করে। দাদা বাধা দিলে ওর মুখে ঘুসি মারে। একজন চায়ের দোকান থেকে চেলাকাঠ এনে দাদাকে মারতে গেলে ওই চায়ের দোকানি এক মহিলা এসে তাকে আটকায়।” দাদা বলেন, “বোনের হাত ধরে টানতে দেখে বাধা দিলে ওরা আমাকে মারতে শুরু করে। ইতিমধ্যে ওই দোকানি এসে পড়লে ওরা তাঁকেও মারধর শুরু করে। সেই ফাঁকেবোনকে নিয়ে কোনও মতে ওখান থেকে পালিয়ে যাই।”
চোখের সামনে একটি মেয়ের হাত ধরে কয়েকজন যুবককে টানতে দেখে ও তার দাদাকে মারধর করতে দেখে চুপ করে থাকতে পারেননি চায়ের দোকানি ইতু কর্মকার। তিনি বলেন, “ওদের ওই কাণ্ড দেখে কিছুদিন আগে বারাসতের ঘটনা মনে পড়ে যাচ্ছিল। দোকান থেকে বেরিয়ে গিয়ে ওদের বাধা দিই। ওরা তখন উল্টে আমাকে মারতে থাকে। শুধু আমাকে মেরেই ক্ষান্ত হয়নি। দোকান লাগোয়া ঘরে ঢুকে অসুস্থ স্বামী ও ছেলেকেও মারে। জানলা, দরজা ভেঙে দেয়। পুলিশের কাছে গেলে গ্রামছাড়া করা হবে বলে হুমকি দিয়ে চলে যায়।” ইতুদেবীর স্বামী সুভাষবাবুর কথায়, “অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলে এমন মারধর খেতে হবে, কল্পনাও করিনি।” তবে একই সঙ্গে তিনি বলেন, “এ ভাবে রুখে না দাঁড়ালে এ সব বন্ধ করা যাবে না। তাই ওরা হুমকি দিয়ে গেলেও পুলিশকে সব জানিয়েছি।”
সমস্ত ঘটনা পুলিশকে জানিয়ে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন কিশোরীর বাবা। তাঁর কথায়, “বারাসতের ঘটনা থেকে কেউ যে শিক্ষা নেয়নি, আমার মেয়ের ঘটনাই তার প্রমাণ। তবে ওই দোকানদার রুখে দাঁড়ানোয় দুষ্কৃতীরা আর কিছু করতে পারেনি। ওঁদের মতোই সকলের এগিয়ে আসা উচিত। না হলে এ সব বন্ধ হবে না।” |