একে হাসপাতাল চত্বর, তার উপরে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য শব্দ-বিধির নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু সে সবের পরোয়া না করে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে সোমবার মাইক এবং সাউন্ড-বক্স বাজানোর অভিযোগ উঠল এক নির্মাণ সংস্থার বিরুদ্ধে। এ জন্য পুলিশ বা প্রশাসনের কাছ থেকে তারা কোনও অনুমতি নেয়নি বলেও অভিযোগ। পরে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে মাইক বাজানো বন্ধ হয়।
আইন ভাঙার প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে ওই নির্মাণ সংস্থার আধিকারিকদের দাবি, এক সঙ্গে অনেক কর্মীকে নিরাপত্তা বিধি শেখাতে ওই আয়োজন করা হয়েছিল। ‘সামান্য সময়’ মাইক বা বক্স বেজেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিষেধ করার ‘সঙ্গে সঙ্গে’ সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ক্ষুব্ধ পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। হাসপাতালের এক চিকিৎসক হীরক দাস ফোন করে বহরমপুর থানায় এ ব্যাপারে অভিযোগ জানান। তাঁর ক্ষোভ, “অভিযোগ পেয়েও বহরমপুর থানা থেকে কোনও পুলিশকর্মী আসেননি। কেন এমন হল তা খোঁজ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, “যারাই করুক, হাসপাতালে মাইক-বক্স বাজিয়ে অন্যায় করেছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।” |
২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে চলছে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবন নির্মাণের কাজ। ওই ভবন নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, এ দিন বিকেল ৩টে থেকে পৌনে ৫টা পর্যন্ত হাসপাতাল চত্বরে মাইক ব্যবহার করে ‘সুরক্ষা সপ্তাহ’-এর অনুষ্ঠান পালন করে ওই নির্মাণ সংস্থা।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, মাইকের আওয়াজে অস্বস্তিতে পড়েন রোগীদের একটা বড় অংশ। রোগীর আত্মীয়দের মধ্যে শুরু হয় মুখ চাওয়াচাওয়ি। কয়েকজনকে বলতে শোনা যায়, “দীর্ঘক্ষণ ধরে মাইক বাজছে। রোগীদের অসুবিধা তো রয়েছেই। তা ছাড়া, হাসপাতালে রোগীর আত্মীয়দের ডাকতে যে মাইক ব্যবহার করা হচ্ছে, তার আওয়াজও এই মাইক-বক্সের আওয়াজে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। হচ্ছেটা কী!” দৃশ্যতই বিরক্ত দেখায় বহু চিকিৎসক-নার্স এবং স্বাস্থ্যকমীদের।
প্রশাসনের তরফে সভা-সমাবেশে মাইক ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে থাকেন মহকুমাশাসক। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বহরমপুর মহকুমা প্রশাসনের কাছে হাসপাতাল চত্বরে মাইক ব্যবহারের জন্য কোনও অনুমতি চাওয়া হয়নি। মহকুমাশাসক অধীর বিশ্বাস বলেন, “হাসপাতাল চত্বরে এমনিতেই মাইক ব্যবহার বেআইনি। ফলে, সেখানে মাইক ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নই নেই। আর মাইক ব্যবহারের জন্য আমার কাছে কেউ কোনও আবেদনও করেননি।” তিনি বলেন, “আগামী বুধবার (১৩ মার্চ) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হবে। তার আগে নোটিস দিয়ে গত ৮ মার্চ থেকে মাইক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ দিন অনুমতি ছাড়া কারা ওই মাইক ব্যবহার করেছেন তা খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গোটা ব্যাপারটা পুলিশ-প্রশাসনকেও দেখতে বলছি।”
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার কাজলকৃষ্ণ বণিক বলেন, “হাসপাতাল চত্বরে মাইক বাজানোর স্পর্ধা দেখানোর জন্য ওই সংস্থার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।” অধ্যক্ষ প্রদীপকুমার সাহা বলেন, “হাসপাতাল চত্বরে মাইক ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি। মাইক ব্যবহার করার জন্য ওই নির্মাণ সংস্থাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। আগামী দিন এ ধরনের বেআইনি কাজ করলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ওই নির্মাণ সংস্থার পক্ষে সহকারী বাস্তুকার হাফিজুর রহমান বলেন, “সংস্থার তরফে সুরক্ষা সপ্তাহ পালন করা হচ্ছিল এ দিন। এখানে আমাদের প্রায় তিনশো কর্মী রয়েছেন। এক সঙ্গে তাঁদের সবাইকে নিরাপত্তাবিধি শেখানোর উদ্দেশ্য ছিল আমাদের। তা-ই সামান্য সময় মাইক ও সাউন্ড বক্স বাজানো হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের নির্দেশ পাওয়ামাত্র সে সব বাজানো বন্ধ করেছি আমরা।” |