কিছু দিন আগে দক্ষিণ কলকাতার এক অভিজাত আবাসনে কয়েক জনের মরণঝাঁপ এবং আত্মহননের ঘটনার পর অল্প কিছু দিন শোরগোল হয়েছিল শহরে। ঢিলেঢালা নিরাপত্তা সম্পর্কিত প্রশ্ন উঠেছিল। তার পর যথারীতি সে সব কথা স্তিমিত হয়েছে। প্রশ্নগুলো কিন্তু যায়নি।
কলকাতার কাছেই একটি আবাসনে থাকি। পুরনো আবাসিক। বিশ বছর অতিক্রান্ত। নিত্যদিনের যাতায়াতের হাজারটা ঝুঁকি সামলেও এখানেই থিতু আমি এবং আমরা। দিবাবসানে এখানে প্রবেশের পর মনের শান্তি, প্রাণের আরাম পাই।
এই অভিজ্ঞতা থেকে কয়েকটি কথা বলি।
ক) মাসান্তে এক বার রক্ষণাবেক্ষণ খরচটুকু দিয়ে সমস্ত সুবিধা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাটা আবাসিকদের মজ্জাগত।
খ) পরিচালন সমিতিতে ঢুকলেই তো আবাসিকদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুনতে হবে। কে-ই বা অন্যের হ্যাপা নিজের কাঁধে চাপাতে চান? কেনই বা বোর্ডে যাবেন? বার্ষিক বা অর্ধবার্ষিক সভায় বরং একক বা সমবেত ভাবে পরিচালন-কর্তৃপক্ষকে সামান্য বা অসামান্য ক্ষোভের কারণে তুলোধোনা করার চান্স নেওয়াটা সুবিধাজনক।
গ) ক্ষোভগুলো এ রকম:
১) ফ্ল্যাটের সিঁড়িগুলো ক্রমেই অপরিচ্ছন্ন হয়ে উঠছে (যদিও ‘সুইপার নিয়মিত আসে’ এমন কিছু বলা যেন নিষিদ্ধ)।
২) এলাকার কুকুর ঘোরাফেরা করছে (নিজেরা তাড়াতে পারবেন না। বোর্ডকেই দায়িত্ব নিতে হবে)।
৩) মাসের মধ্যে এক-দু’দিন অনুপস্থিত হওয়ায় বর্তমান সুইপার হয়তো আবর্জনা নিল না (ব্যস, দোষ অবশ্যই বোর্ডের। তাঁরাই তো সমস্ত আবাসিকের সুস্থতা বজায় রাখবার জন্য মুচলেকা দিয়ে বসে আছেন। অথচ একটু দূরেই স্থায়ী এবং অস্থায়ী ভ্যাট...)।
৪) প্রতিটি ফ্ল্যাটের বাইরের রক্ষণাবেক্ষণ, সারাই বোর্ড করবে নিয়ম মোতাবেক। কিন্তু বহু আবাসিক নিজের ফ্ল্যাটটি সুরম্য শোভায় শোভিত করার জন্য প্রায়শই মেরামতি করেন। অনেকে বোর্ডকে জানাবারও প্রয়োজন বোধ করেন না। অতএব, মেরামতির শব্দে অতিষ্ঠ প্রতিবেশী আবাসিক লম্বা চিঠি নিয়ে হাজির বোর্ডের কাছে। অন্যের শান্তি বিঘ্নিত করে এই সব কার্যকলাপ রুখতে বোর্ড যদি আইনি পথে পদক্ষেপ নেয়, তবে সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিবাদের সম্মুখীন হতে হবে। অথচ কতিপয় আবাসিক কিছুই শুনতে-বুঝতে নারাজ। ভাবখানা এমন, ফ্ল্যাটটা আমি কিনেছি, অতএব যা খুশি করতে পারি।
আবাসনের নিরাপত্তা যদি সম্পূর্ণ ভাবেই নিরাপত্তারক্ষীদের উপর নির্ভরশীল হয়, তবে ঢিলেঢালা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে বাধ্য। যে-এজেন্সি সুঠাম দক্ষ নিরাপত্তারক্ষী জোগান দেবে, তারা টাকার অঙ্কটাও বেশি ধার্য করবে। রক্ষণাবেক্ষণ মিনিমাম রেখে, ম্যাক্সিমাম নিরাপত্তা পাওয়ার লোভ যদি থাকে, তবে বিপদকে এড়ানো অসম্ভব। প্রয়োজনে সশস্ত্র রক্ষী স্থানীয় প্রশাসনের নজরে রেখে বহাল করা প্রয়োজন। যাদের দেখলে সমীহ করতে ইচ্ছা হয়। যারা টহল দিলে বহিরাগতরা হুটহাট আবাসনে অনুপ্রবেশের আগে একটু চিন্তা করবে। অভিজাত আবাসনগুলোতে অনুপ্রবেশকারীকে লিখিত ভাবে অনুমতি নিতে হয়। নিজের পরিচিতি প্রমাণ করতে হয়। অথচ অন্যত্র এ সবের বালাই নেই। তাই কোনও কোনও ফ্ল্যাটের শিক্ষক বা আধাশিক্ষক আবাসিকের কাছে টিউশন নিয়ে যখন এক-একটা ব্যাচ বের হয় গার্জিয়ান পরিবেষ্টিত হয়ে, তখন স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগে, এমন কাঁচা অব্যবস্থা দেখেও কেন টনক নড়ে না আবাসিকদের? আমরা সুবিধাবাদী, এই সত্যই বারংবার প্রমাণিত হয়।
ফেরিওয়ালা, যখন-তখন বিভিন্ন আইটেম বিক্রয় কোম্পানির লোকজন ঢুকে পড়েন। প্রতিরোধ হলেই সেই সমবেত রোষের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। আবাসনের আবাসিকদের গতিবিধি, ফ্ল্যাটে বা বাড়িতে কে কখন থাকেন সমস্ত খবরাখবর সংগ্রহের লোকজনও আছে। কে আটকাবে?
উচ্চকোটির বসবাসস্থল আবাসনগুলোতে আইন-কানুন কড়া। সবাই মানতে বাধ্য। হয়তো, কোনও গা-জোয়ারিও চলে না। কিন্তু মধ্যবিত্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ আবাসনগুলোর সমস্যা ভিন্ন। ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর একটা দল আছে বা থাকে। যাঁরা ঘুরেফিরে বোর্ডের হাল ধরেন। হারাধনের দশটি ছেলে আছে যাঁরা বরাবর পুজো করতে বাধ্য। তাঁরাই চাঁদা তুলবেন। সুষ্ঠু ভাবে শারদোৎসব সম্পন্ন করবেন। অন্যরা উপস্থিত থেকে দ্বিপ্রাহরিক ভোজন সম্পন্ন করে পুজো আয়োজকদের ধন্য করবেন।
সমবায় আবাসনের অলিখিত নির্দেশ/নিয়ম মোতাবেক একটা চিন্তাভাবনা থাকা প্রয়োজন প্রত্যেকের তরে প্রত্যেকে আমরা। কেবল আমি, তুমি এবং আমার সন্তান নয়। এই শুভবোধ উদ্দীপ্ত হলে কেবল মাত্র পরিচালন সমিতিকে দুষবার মানসিকতা জাগ্রত হবে না। বোর্ডের মুখাপেক্ষী না-হয়েও প্রচুর কাজ করা যায়। আবাসিকদের সচেতনতা, আবাসনকে সুস্থ নিরাপদ রাখার মানসিকতাটা ভীষণ ভাবে জরুরি।
ধ্রুবজ্যোতি বাগচী। কলকাতা-১২৫
|
কর্পোরেট মা নীলষষ্ঠী করলে নিন্দে কেন? |
সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লিখিত ‘সেক্টর ফাইভ’ (রবিবাসরীয় ১৩-১) শীর্ষক রচনাটি সম্পর্কে কিছু বলতে চাই। লেখক সেক্টর ফাইভ তথা বর্তমান কর্পোরেট পৃথিবীকে ব্যাপক হারে আক্রমণ করেছেন। পৃথিবীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়া বাজে, নিজের উন্নতি চাওয়া, ব্যাঙ্কে কিছু বেশি টাকা থাকা বাজে। এই হল লেখকের অভিমত। একজন মধ্যবিত্ত ছেলে বাবার তিল তিল করে সঞ্চিত অর্থের সাহায্যে উচ্চশিক্ষা নিয়ে সেক্টর ফাইভে কাজ জোগাড় করে। কয়েক বছর পর নিজের সঞ্চিত অর্থ ঠিকঠাক ইনভেস্ট করে কিছু বাড়তি অর্থের মালিক হয়, তাতে ক্ষতিটা কোথায়?
একটা মেয়ে কর্পোরেট জগতের ভীষণ চাপ সামলেও যদি সন্তানের মঙ্গল কামনায় নীলষষ্ঠী ব্রত করে, তবে তাকে প্রশংসা করা উচিত। না হলে লেখক হয়তো বলবেন, এ কেমন মা! শুধু টাকার পিছনে ছুটছে! সব এম এন সি-তে গলায় আই ডি কার্ড ঝোলাতে হয়। নিরাপত্তার কারণে। তাকে বকলস বলে অপমান করার অধিকার লেখককে কে দিয়েছে? |
কর্পোরেট জগতের একটি মেয়ে নিজের উপার্জিত অর্থে কেনা ফ্ল্যাটে থাকে, নিজের গাড়িতে অফিসে যায়, নিজের অর্থে কেনা ব্র্যান্ডেড পোশাক পরে, নিজের উপার্জিত অর্থে বাবা-মাকে সেকেন্ড হনিমুনে পাঠায়।
লেখক আধুনিক যুগের সব কিছু খুব খারাপ বলেছেন। মাননীয় লেখকের বাড়িতে কি উনুনে রান্না হয়? তিনি কি ধুতি পাঞ্জাবি আর কালো পাম্প-শু পরেন? তিনি কি মাটিতে আসন পেতে কাঁসার থালায় খই আর চুনো মাছের টক খান? তিনি কি দাড়ি কামিয়ে ফটকিরি লাগান?
পল্লবী মিত্র। বর্ধমান
|
আমার বয়স ৭০। গত ১ মার্চ সন্ধ্যায় আমি এসপ্ল্যানেড ইস্ট রাজভবনের গেটের ট্র্যাফিক পয়েন্টে বাস থেকে পড়ে যাই। কয়েক মিনিট জ্ঞান ছিল না। কারা আমাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে এল, তা জানা নেই। সম্বিৎ ফিরতে দেখলাম, একজন পুলিশ-বন্ধু আমার হাত ধরে আছেন, আর একজন আমার বাঁ চোখের পাশে রুমালে বরফ নিয়ে ঘষে চলেছেন। সামনেও দু’জন পুলিশের মধ্যে একজন পদস্থ অফিসার। আমার জামা ছেঁড়া, রাস্তার নোংরা এবং রক্তের দাগ। রক্ত বন্ধ হলে তাঁরাই বললেন, হাসপাতালে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়ে নিলে ভাল হয়। অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে এসে আমাকে মেডিক্যাল কলেজের ইমার্জেন্সিতে নিয়ে গেলেন। অল্পবয়স্ক দু’জন ডাক্তার আমার ক্ষতস্থানে স্টিচ এবং ড্রেসিং করে ওষুধ লিখে দিলেন। মেডিক্যাল কলেজ থেকে বেরিয়ে আসতে সাদা পোশাকের একজন পুলিশ-বন্ধু ট্যাক্সি ডেকে তুলে দিলেন। কলকাতা পুলিশের এই মানবিকতা বোধ এবং আন্তরিকতায় আমি মুগ্ধ। প্রসঙ্গত, মেডিক্যাল কলেজের মতো নামী হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে স্টিচ করার সুতো ও সুচ পাওয়া যায়নি। টাকা দিতে চাইলেও কিনে আনার মতো লোক নেই। আমাকেই রাস্তা পার হয়ে দোকান থেকে সুচ ও সুতো এনে দিতে হয়েছে।
সুব্রত দাশগুপ্ত। কলকাতা-৫৫
|
জিগলো নিয়ে কুণাল বসুর উপন্যাস লেখার বিষয়ে একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন ও ‘বইকথা’ কলামে তিনখানি জিগলো-কেন্দ্রিক গ্রন্থের উল্লেখ করা হয়েছে। (আনন্দ প্লাস, ৬-২) এই প্রসঙ্গে জানাই, ২০০৮-এর শারদীয় ‘সানন্দা’য় আমি এই বিষয়ে ‘অন্য আমি’ উপন্যাস লিখেছিলাম। ২০০৯-এর কলকাতা বইমেলায় ‘আনন্দ পাবলিশার্স’ থেকে উপন্যাসটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
বিনতা রায়চৌধুরী। কলকাতা-৩৭ |