শুধু আয়-ব্যয়ের শুকনো পরিসংখ্যান কিংবা সাধারণ কর-প্রস্তাব নয়। শিল্প চেয়েছিল, অন্তত লগ্নিকারীদের কাছে আশ্বাসের ইঙ্গিতটুকু বয়ে আনুক রাজ্য বাজেট। থাকুক এমন কিছু, যাতে সামান্য হলেও হাঁফ ছাড়তে পারে জমি-জটে জেরবার শিল্প। কিন্তু দিনের শেষে তাদের আক্ষেপ, এ বারও পাতে পড়ল না আস্থাবর্ধক ‘টনিক’। সবেধন প্রাপ্তি বলতে কিছু সামাজিক খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি আর ক্ষুদ্র ও ছোট শিল্পের চালু উৎসাহ প্রকল্প বহাল থাকা। তাই এক সময়কার শিল্প মহলের প্রতিনিধির পেশ করা বাজেটে মোটের উপর এ বার হতাশই হল শিল্পমহল।
বাজেট সম্পর্কে শিল্পের পর্যবেক্ষণ, বিভিন্ন সামাজিক খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি ভালো কথা। কিন্তু রাজ্যে শিল্পায়ন বা আর্থিক উন্নতির চাকা ঘোরানোর দিশা বাজেটে নেই। বরং যুক্তমূল্য করের (ভ্যাট) হার বাড়ায় চাপ পড়বে আমজনতার পকেটে। একই কারণে বাড়বে কাঁচামালের দাম। তাই বাড়বে শিল্পের খরচও। অথচ শিল্পকে উৎসাহিত করতে পারে এমন কোনও ঘোষণা (যেমন, পরিকাঠামোয় জোর, নতুন উৎসাহ প্রকল্প ইত্যাদি) চোখে পড়েনি এ বারের বাজেটে।
বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বারের প্রেসিডেন্ট অমিত সেনের দাবি, শিল্পের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধিই যথেষ্ট নয়। বেঙ্গল চেম্বারের প্রেসিডেন্ট কল্লোল দত্ত এবং ফ্যাক্সি-র প্রেসিডেন্ট হিতাংশু গুহও মনে করেন, বাজেট-বরাদ্দের কতটা কোথায় খরচ হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। পরিকাঠামো গড়তে কী ব্যবস্থা হবে, স্পষ্ট নয় তা-ও।
কল্লোলবাবুর অভিযোগ, রাজ্যের শিল্পায়নে অন্যতম অন্তরায় পরিকাঠামো। অথচ তার উন্নয়নের দিশা নেই বাজেটে। গরহাজির লগ্নি টানতে উৎসাহ-নীতির ইঙ্গিতও। ফলে, এর দৌলতে রাজ্য সম্পর্কে লগ্নিকারীদের আস্থা কতটা ফিরবে, তা নিয়ে সন্দিহান শিল্প কর্তারা। বাজেটে ভ্যাটের নিম্ন ও ঊর্দ্ধসীমা ১% করে বাড়ানোর সুপারিশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। বণিকসভাগুলির আশঙ্কা, এতে আমজনতার পকেটে চাপ পড়বে। বাড়বে পণ্য উৎপাদনের খরচও। ফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা মহেশ সিংহানিয়ার আশঙ্কা, ভিন্ রাজ্যে পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে সমস্যায় পড়বে শিল্প সংস্থা ও ব্যবসায়ীরা। ভ্যাটের হার বৃদ্ধি এবং গত বার চাপানো প্রবেশ করের দরুন উৎপাদন খরচ চড়তে থাকার আশঙ্কা করছেন ভারত চেম্বারের প্রেসিডেন্ট অশোক আইকতও। রাজ্যের সামনেও খুব বেশি রাস্তা খোলা ছিল না বলে তাঁর ধারণা। তাঁর কথায়, “আমরা হতাশ। কিন্তু অবাক নই। বিপুল ঋণের বোঝা ঘাড়ে থাকায় রাজ্যকে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে।”
প্রত্যাশিত ভাবেই ছোট-মাঝারি শিল্পের জন্য উৎসাহ প্রকল্প আরও এক বছর বজায় রাখার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে ফসমি, ফ্যাক্সি ও ফ্যাসির মতো সংশ্লিষ্ট শিল্পের সংগঠনগুলি। |