বিধবা প্রৌঢ়া মাকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠল এক শিক্ষক আর তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বোলপুর শহরের ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম সুনন্দা চৌধুরী (৫৫)। তাঁর বাড়ি শহরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের হরগৌরীতলায়। এই ঘটনায় শুক্রবার ভাগ্নে-সহ চার জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন সুনন্দাদেবীর ভাই তুষারকান্তি সাঁতরা। এসডিপিও (বোলপুর) প্রশান্ত চৌধুরী বলেন, “তুষারবাবুর অভিযোগের ভিত্তিতে সুনন্দাদেবীর ছেলে মৃণ্ময় চৌধুরী ও পুত্রবধূ স্বরূপা চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” ঘটনায় মৃন্ময়বাবুর
|
সুনন্দাদেবী |
শ্বশুর তাপস দালাল ও শাশুড়ি সবিতা দালালের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের করেছেন সুনন্দাদেবীর ভাই। প্রশান্তবাবু জানিয়েছেন, সুনন্দাদেবীর মৃত্যুর ঘটনায় তাঁদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিয়ের পর থেকেই ছেলে ও পুত্রবধূর সঙ্গে বাবা-মার বনিবনা হত না। মাস খানেক আগে রহস্যজনক ভাবে মারা গিয়েছেন সুনন্দাদেবীর স্বামী মলয় চৌধুরীও। তারপর থেকে তিনতলা বাড়ির দোতলার একটি ঘরে একাই থাকতেন সুনন্দাদেবী। একতলায় থাকেন ভাড়াটে। আর সুনন্দাদেবীর ছেলে, ইলামবাজারের একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক মৃন্ময়বাবু পরিবার নিয়ে থাকেন তিনতলায়। অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাত বারোটা নাগাদ ঘটনার সময় অগ্নিদগ্ধ মায়ের চিৎকার শুনে ছেলে বা পুত্রবধূ কেউই নীচের ঘরে নেমে আসেননি। সুনন্দাদেবীর চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরাই তাঁকে ঘর থেকে বের করেন। সঙ্কটজনক অবস্থায় তাঁকে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। স্থানীয় বাসিন্দা গোপাল ভট্টাচার্য বলেন, “নীচের তলার ভাড়াটেই প্রথমে সুনন্দাদেবীর চিৎকার শুনতে পান। ভাড়াটের চিৎকার শুনে আমরা পাড়া-প্রতিবেশীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছই। কিন্তু সেখানে তখনও সুনন্দাদেবীর ছেলে বা পুত্রবধূ কেউই উপরের ঘর থেকে নেমে আসেননি। আমরা দেরি না করে সুনন্দাদেবীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই।” বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার সুদীপ মণ্ডল বলেন, “অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় সুনন্দাদেবীকে আনা হয়েছিল। ভর্তির কিছু ক্ষণের মধ্যেই তিনি মারা যান। শুক্রবার তাঁর দেহ ময়না-তদন্ত করে পুলিশকে দেওয়া হয়েছে।” |
এ দিকে, ঘটনার খবর পেয়ে বর্ধমান থেকে ছুটে আসেন সুনন্দাদেবীর ভাই। তুষারবাবুর দাবি, “দিদি আমাকে ফোনে জানিয়েছিলেন, ছেলে তাঁকে মাসে দশ দিনও খেতে দিত না। বেশ কিছু দিন ধরে ভাগ্নে আর তার স্ত্রী দিদিকে মারধরও শুরু করেছিল। ভাগ্নের শ্বশুরবাড়ির লোকজনও দিদির উপরে মানসিক নির্যাতন চালাত।” এ দিনই চার জনের বিরুদ্ধে দিদিকে খুন করার অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। ভাগ্নের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে বলেন, “জামাইবাবুকে ওরা আগেই ষড়যন্ত্র করে খুন করেছে। আমি নিশ্চিত, শ্বশুরবাড়ির লোকেদের সঙ্গে পরিকল্পনা করে আমার ভাগ্নে আর তার স্ত্রী-ই দিদিকে পুড়িয়ে মেরেছে।”
এই ঘটনায় মৃন্ময়বাবু কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে না চাইলেও তাঁর স্ত্রী বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমরা কিছুই জানি না। প্রতিবেশীরা আসার পরেই ঘটনার কথা জানতে পারি। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।” অন্য দিকে, মর্গ থেকে দিদির দেহ সৎকার করতে নিয়ে যাওয়ার পথে দৃশ্যতই ভেঙে পড়েন তুষারবাবু। শ্মশান যাওয়ার পথে তিনি বলেন, “দিদি বারবার ফোন করে বর্ধমানে নিয়ে যেতে বলছিল। আমি তাড়াতাড়ি আসব বলেছিলাম। কিন্তু ভাগ্নে আসার সেই সময়টুকুও দিল না। দোষীদের কড়া শাস্তি হোক।”
|
ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী। |