ও পার বাংলার আন্দোলনে সামিল এ পার বাংলা। শাহবাগ চত্বরে আন্দোলনে যোগ দিতে আগামী রবিবার বাংলাদেশে যাচ্ছে জলপাইগুড়ির এক প্রতিনিধি দল। শাহবাগ আন্দোলনে সমর্থনে জলপাইগুড়ি শহরে বিলি করা হচ্ছে লিফলেট। পাশে থাকার বার্তা নিয়ে শনিবার গানে, কবিতায় মিছিল হল জলপাইগুড়িতে। শহরের সমাজপাড়া মোড় থেকে মিছিল এলাকা পরিক্রমা করে। মিছিলে ছিল শাহবাগ চত্বরের স্লোগান ‘ধর্ম যাঁর যাঁর, রাষ্ট্র সবার।’
গত মঙ্গলবার জলপাইগুড়িতে আসেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সৈনিক তথা সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নাজিমুল হক প্রধান। জলপাইগুড়িতে শাহবাগ সংহতি মঞ্চের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেন। শাহবাগ আন্দোলনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কট্টরপন্থী জামাতের হিংসার রোষের মুখেও পড়তে হয়েছে তাঁকে। জানা গিয়েছে, তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে যে গাড়িটি চ্যাংরাবান্ধা সীমান্তের দিকে আসছিল, সেই গাড়িতে জামাতের হামলা হয়েছে রবিবার। তাতে ভীত নন নাজিমুল। |
সম্প্রতি শহরের কদমতলার একটি হোটেলে বসে নাজিমুল বললেন, “একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। তার পরে দেশে সামরিক আইন, ধর্মকে সংবিধানে অর্ন্তর্ভুক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন করে ১৮ বার জেল খেটেছি।” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রাক্তন এই গবেষক জানান, তিনি এবার ব্যক্তিগত কাজে দিল্লি গিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, “জলপাইগুড়ির সচেতন এবং পরিচিত মানুষেরা শাহবাগ আন্দোলনের সমর্থনে মঞ্চ গড়েছেন শুনে, সমগ্র বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়েই স্বাগত জানাতে এসেছি। এখানে এসে মনে হচ্ছে শাহবাগ থেকে জলপাইগুড়ি একই স্রোত বইছে। ওঁরা বাংলাদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওঁদের স্বাগত জানানোর ব্যবস্থা করা হবে।”
কট্টরপন্থী শক্তির বিরুদ্ধে শাহবাগ আন্দোলন, পাল্টা হামলায় অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ, শাহবাগ চত্বরকে সমর্থন জানিয়ে ফেসবুক, ব্লকে দেদার বার্তা ছড়িয়ে পড়ছে এপার বাংলা থেকেও। ‘নেট প্রতিবাদ’ থেকে আরও এক ধাপ এগিয়ে পথে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জলপাইগুড়ির বিদ্বজ্জনেরা। তৈরি হয়েছে শাহবাগ সংহতি মঞ্চ। আজ, রবিবার বাংলাদেশে রওনা হওয়ার জন্য জরুরি ভিসাও করিয়েছেন মঞ্চের কয়েকজন সদস্য। তবে মঞ্চ সূত্রে জানা গিয়েছে, একসঙ্গে অনেকজন যাওয়ার ক্ষেত্রে অনুমতি মেলার সমস্যা থাকায় প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে।
বাংলাদেশ যাচ্ছেন মঞ্চের সদস্য গৌতম গুহরায়। তিনি বলেন, “শুধু বার্তা দিলেই দায়িত্ব শেষ হয় না। কট্টরপন্থীদের বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজের আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে আমাদের পাশে থাকা দরকার। সে কারণে আমাদের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ যাচ্ছে। আমাদেরও শিক্ষা নিতে হবে। আমাদের আন্দোলনের কথা শুনে নাজিমুল সাহেব জলপাইগুড়ি এসেছেন। এতে আমরা অনুপ্রাণিত। ওঁকে অভিনন্দন জানিয়েছি।”
গবেষক উমেশ শর্মাও শাহবাগ সংহতি মঞ্চে বলেন, “বাংলাদেশ যদি রাজনীতি সরিয়ে রেখে কট্টরপন্থীদের মোকাবিলা করতে পারে, তবে কেন দলমত নির্বিশেষে একজোট হয়ে সেই আন্দোলনকে সমর্থন জানাতে পারব না? মঞ্চ তৈরি হয়েছে। প্রচার চলছে। শাহবাগ চত্বর যে শুধু আর বাংলাদেশের মানচিত্রেই সীমাবদ্ধ নেই, সেই বার্তা পাঠাতেই এই উদ্যোগ।” |