কারবার চলছেই হ্যালো হ্যালো... জেল
থেকে আসে ফোন
হাইকোর্ট উজিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েও জামিন হল না?
কুছ পরোয়া নেহি।
পুলিশকে নজরানা দিয়েও বড়বাবুর বেইমানিতে শেষমেষ জেলে?
কোই বাত নেহি।
আদালতের বারবার শুনানির তারিখ পড়ছে?
তাতে কী? মোবাইল আছে না!
জেলের অন্দরমহলে ঢুকে পড়া মোবাইল-ই এখন দাগী অপরাধীদের তুরুপের তাস। তার জোরেই জেলের ভিতর থেকে দিব্যি রাজ্যপাট সামলে যাচ্ছে তারা। শ্রীঘরে ‘সোনার চাঁদ’দের দাপটে বাইরে থানার দুঁদে দারোগাদের মাথার ঘাম পায়ে পড়ে যাচ্ছে।
স্বাভাবিক ভাবেই, পুলিশ দোষ দিচ্ছে কারা দফতরকে। আইজি (কারা) রণবীর কুমারের কথায় পরিষ্কার, বিষয়টি তাঁর অজানা নয়। অপরাধীদের সঙ্গে জেলকর্মীদের মাখামাখির প্রসঙ্গটিও তিনি এড়িয়ে যাননি। কিন্তু কেন বহাল তবিয়তে এই সব চলছে, কবে কী ভাবেই বা বন্ধ হবে, তার কোনও স্পষ্ট উত্তর মেলেনি।
কারা দফতরের চোখের নীচে কী কাণ্ড চলছে, তার দু’একটা বরং একটু দেখে নেওয়া যাক।
হুগলির ত্রাস রমেশ এখন হাওড়া জেলে। তো কী? তা বলে কি কাজ থেমে থাকবে? জেলের মধ্যে থেকেই সে চালিয়ে যাচ্ছে সাম্রাজ্য। স্রেফ মোবাইলেই নির্দেশ দিচ্ছে চেলাদের। জমির দালালি থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীদের কাছে তোলাবাজি শুধু একটি ফোন পাওয়ার অপেক্ষা বসের। ব্যাস! কাজ উদ্ধার।
কলকাতার প্রেসিডেন্সি, আলিপুর, দমদম-সহ অন্য জেলে মাঝে-মধ্যেই ‘রেড’ করেন জেল কর্তৃপক্ষ। তাতে কয়েদিদের কিছুটা সতর্ক হতে হলেও মোবাইলের বাবহার কিন্তু চলছেই। কিন্তু কলকাতার গণ্ডি ছাড়িয়ে জেলার জেলগুলিতে কোনও নিয়ন্ত্রণই নেই। জেল কর্তৃপক্ষও এইসব নিয়ে মাথা ঘামানোর দায় অনুভব করেন না। তার ফলে জেলের মধ্যে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রমেশরা। এক শ্রেণির কারারক্ষীর পূর্ণ মদতে পুরো বিষয়টি কার্যত হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।
পুলিশের সঙ্গে দুষ্কৃতীদের মাখামাখি পরিস্থিতি আরও গুলিয়ে দিচ্ছে। উৎসবের দিনগুলিতে বাড়াবাড়ি আরও যেন একটু বেশি। অনেক সময়ে দুষ্কৃতীদের তোল্লা দিতে গিয়ে গাড্ডায় পড়ে যাচ্ছে পুলিশ, অনুযোগ জেলা প্রশাসনের এক কর্তার।
গত রাখী পূর্ণিমার দিন শ্রীরামপুর কোর্টে হাজিরা ছিল রমেশের। ‘বস’ আসবে, আহ্লাদে আটখানা হয়ে গেল চ্যালারা। একে রমেশ, তার পরে উৎসব। আর দেখে কে? রমেশের দিদি শ্রীরামপুর কোর্ট হাজতে হাজির প্রচুর মিষ্টি, রাখী, আরও কত কী সব নিয়ে। কোর্ট হাজতের মধ্যেই জমিয়ে চলল খাওয়া-দাওয়া। ঘন-ঘন মোবাইল বেজে উঠল। ডেকে নেওয়া হল প্রিয়জন সব্বাইকে।
এই গোটা ঘটনাই কিন্তু ঘটেছে পুলিশের চোখের সামনে। সত্যি বলতে, পুলিশের কয়েক জন এই অনুষ্ঠানের অংশ বলেও রীতিমতো অভিযোগ ছিল। কোর্ট হাজত চত্বর এক্কেবারে চাঁদের হাট। বিষয়টি জানাজানি হতে বেশি সময় লাগেনি। জেলায় পুলিশের বড়কর্তাদের কানে গেল ঘটনার কথা। আসামীদের সঙ্গে মাখামাখির অভিযোগে সাসপেন্ড হয়ে গেলেন শ্রীরামপুর কোর্টবাবু স্বপন দাস।
হাওড়া-হুগলির ত্রাস রমেশ মাহাতোও অবাধে রাজ্যপাট চালাচ্ছে হাওড়ার জেল থেকে। সৌজন্যে মোবাইল। তার দাপটে তিতিবিরক্ত এক পুলিশ অফিসারের অভিযোগ, “রমেশ জেলের মধ্যে এক সঙ্গে পাঁচ থেকে ছ’টা মোবাইল ব্যবহার করছে। তার সঙ্গে ১২ থেকে ১৪টা সিম কার্ড। পুলিশ যেই জানতে পারছে, দ্রুত নিখুঁত নেটওয়ার্কে সিম বদলে অন্যটা ব্যবহার করছে।” কিন্তু জেলের মধ্যে মোবাইল যাচ্ছে কী ভাবে? একটা ব্যাপার নিশ্চিত, আত্মীয়স্বজন বা শাগরেদরা হাতে-হাতে পৌঁছে দিচ্ছে। কেউ ধরছে না? জবাব: বহু কারারক্ষীই এদের প্রতি ‘সদয়’। কোনও অসুবিধা নেই বললেই চলে। জেল ওয়ার্ডেনদের নজরদারি টেরল পাওয়া ভার। তাই ধরা পড়ার কোনও ভয়ও নেই। খাবার-পোশাকের সঙ্গেই জেলের একেবারে কোণে কোণে সেঁধিয়ে যাচ্ছে মোবাইল।
রমেশের শাগরেদ গ্যাটিস কোন্নগর অঞ্চলে দাপিয়ে বাড়াচ্ছিল কিছু দিন। জেলের মধ্যে থেকে ‘বস’-এর নির্দেশ পেয়ে সে অবাধে চালাচ্ছিল কারবার। শেষ পর্যন্ত পুলিশ ফাঁদ পাতে। প্রচুর গাঁজা-সহ সে গ্রেফতার হয় সম্প্রতি। জেরায় সে সব স্বীকারও করেছে বলে পুলিশের দাবি। জাল পেতে পুলিশ একে-একে পেটো, গুজিয়া-সহ অন্য দুষ্কৃতীদেরও গ্রেফতার করে। পুলিশ জেলের বাইরে থাকা রমেশের জাল গুটিয়ে নেয়। পুলিশি জেরায় তারা সকলেই জেলের মধ্যে মোবাইল ব্যবহারের কথা স্বীকার করেছে।
আইজি (কারা) অবশ্য বলেন,“রমেশ জেল থেকেই সরাসরি মোবাইলে কথা বলছে, এমন কিছুর নির্দিষ্ট প্রমাণ আমাদের হাতে নেই। তবে আদালতে হাজিরার সময়ে ওর পরিচিতদের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে তোলাবজি চালাচ্ছে, এমন অভিযোগ রয়েছে।” হুগলির জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা আবার সরাসরি বলেন, “কোনও নজরদারি নেই জেলে। কিছু দিন আগেই হুগলি জেল থেকে আসামি পালিয়ে গেল। মোবাইল ব্যবহার হলে আমাদের অপরাধ দমনে খুবই অসুবিধা হয়। কিন্তু যেহেতু জেল আলাদা দফতরের নিয়ন্ত্রণে, তাই সরকারি ভাবে বিষয়টি জানানোর পরিস্থিতিও নেই।”
জেল থেকে যে দুষ্কৃতীরা মোবাইলে নানা অপরাধমূলক কাজ-কারবার চালাচ্ছে, আইজি (কারা) রণবীর কুমার তা উড়িয়ে দেননি। তাঁর কথায়, “জেলের মধ্যে মোবাইলের ব্যবহার বন্ধে আরও তৎপর ভূমিকা নিতে হবে। কী ভাবে পুরোপুরি বিষয়টি বন্ধ করা যায় তা জেল দফতরকেই দেখতে হবে। তবে জেলকর্মীরা সরাসরি অপরাধীদের সঙ্গে নানা ভাবে যুক্ত, এমন অভিযোগ বা তথ্যপ্রমাণ আমাদের হাতে নেই। তেমন কিছু পেলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” জেনে-শুনে চোখ বুজে থাকলে কী ভাবে ‘তথ্যপ্রমাণ’ মিলবে, তার কোনও ব্যাখ্যা কিন্তু মেলেনি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.