রবিবাসরীয় প্রবন্ধ ১...
খিলাওয়ারি
ভেরুলাল আর সুরেখার তিন নম্বর মেয়ে জন্মেছে। আত্মীয়-প্রতিবেশীদের চোখ ঈর্ষায় লাল! ভেরুলালের পাঠানো গঁদের লাড্ডু মনের জ্বালায় অনেকেরই গলা দিয়ে নামেনি। এক-একটা মেয়ে মানেই তো এক-একটা টাকার গাছ। প্রথমে রোজগার করে সংসার টানবে। পনেরো-কুড়ি বছর পর পাত্রপক্ষের থেকে কমসে কম ৬-৭ লাখ টাকা ‘দহেজ’ নিয়ে বিয়ে দেওয়া হবে। গরিবের হদ্দ ভেরুলাল লাখপতি হয়ে গেল!
ভুল পড়ছেন না। ভারতের কথাই হচ্ছে। কন্যাভ্রূণ হত্যার লজ্জাকর পরিসংখ্যানের এই দেশেই বান্ছ্ড়া জাতি এখনও উল্লসিত হয় মেয়ের জন্মে। তিন দিন ধরে চলে উত্‌সব, খাওয়াদাওয়া। ভাবছেন, কত মহত্‌ সমাজবোধ এঁদের, পিছিয়ে থাকা জনজাতির কত এগিয়ে থাকা মানসিকতা! একটু ভুল হল। মেয়েদের এঁরা খাতির করেন নিশ্চয়ই, কিন্তু তার পিছনের মূল উদ্দেশ্য আর জন্মের পর মেয়েকে আছড়ে মারার মানসিকতার বিশেষ পার্থক্য নেই। কারণ দু’টি ক্ষেত্রেই সন্তানকে মাপা হচ্ছে মানুষের মূল্যে নয়, টাকার লাভ-ক্ষতির হিসেবে।
মধ্যপ্রদেশের মালওয়া এলাকার এই বান্ছ্ড়া-রা মেয়ে চান যৌনকর্মী তৈরি করার জন্য। এটাই তাঁদের পরম্পরা। মেয়েরা ১২-১৪ বছর বয়স থেকে বেশ্যাবৃত্তি করে বাবা-মা-ভাইকে খাওয়াবে, সংসার চালাবে। এটাই তাঁদের সাবেক রীতি। এই মেয়েদের স্থানীয় একটা নামও আছে: ‘খিলাওয়ারি’। মহা-উত্‌সাহে নিজের বাবা-কাকা-দাদারাই খিলাওয়ারির দালাল হিসাবে কাজ করেন, খদ্দেরদের সঙ্গে দরদস্তুর চালান।
দশ-বারো বছর এই ভাবে শরীর নিংড়ে নেওয়ার পর, মেয়ের বিয়ের জোগাড়যন্তর শুরু হয়। তাতেও পরিবারের মহা লাভ। কারণ বিয়েতে মেয়ের বাবা মোটা অঙ্কের পণ পাবেন ছেলের বাড়ি থেকে। এত দিনের রোজগেরে মেয়েকে এমনি এমনি ছেড়ে দেওয়া যায়! ছেলের বাড়ি কম করে ৫০ হাজার টাকা কন্যাপণ না দিলে বিয়ে বাতিল। ১৯৯১ সালের জনগণনা রিপোর্ট বলছে, বান্ছ্ড়াদের অর্ধেকের বেশি মেয়েই অবিবাহিতা। দরিদ্র জনজাতির কত জনের আর ক্ষমতা আছে ৫০ হাজার টাকা পণ দিয়ে বাড়িতে বউ আনার!
তবে একটা ব্যাপারে বান্ছ্ড়া-রা সত্যিই ব্যতিক্রমী। সোনাগাছি থেকে কামতাপুরী সব যৌনপল্লি খুঁজলে ৯৮ শতাংশ এমন মেয়ে মিলবে যাঁরা নিয়মিত দেশের বাড়িতে বাবা-মা-ভাই-সন্তানের জন্য পয়সা পাঠান। সেই টাকায় অরুচি না থাকলেও মেয়েকে স্বীকার করতে পরিবারের আপত্তির শেষ নেই! মেয়ের শরীর বিক্রি করা টাকায় অক্লেশে রুটি ভাত খাব অথচ প্রকাশ্যে তার পরিচয় দিতে মর্যাদায় বাধবে! বান্ছ্ড়াদের সেই ভণ্ডামি নেই। মেয়েকে যেমন তাঁরা যৌন পেশায় নামান, তেমনই যত দিন তাঁর রোজগারে খান তত দিন মাথায় করে রাখেন। বাড়িতে অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গেই সেই মেয়ে থাকেন, খান, বেড়াতে যান। পরিবারের মূল রোজগেরে হিসাবে আলাদা আদরযত্ন পান। পাড়ায়-পরিবারে সমস্ত অনুষ্ঠানে তাঁকে নিমন্ত্রণ করা হয়। তাঁর পেশার জন্য কোথাও তাঁকে এতটুকু অপমানিত হতে হয় না, রাস্তাঘাটে অশ্লীল টিটকিরির সামনে পড়তে হয় না। হবে কী করে? দেড়শো বছর আগে থেকে চলে আসা প্রথার জেরে যৌন পেশা তাঁদের কাছে আর পাঁচটা পেশার মতো ‘স্বাভাবিক’।
প্রশ্ন উঠতে পারে, পরিবর্তিত সামাজিক অবস্থায় মেয়েদের মধ্যে থেকে কোনও প্রতিবাদ ওঠেনি কেন? এক-দু’জন ব্যতিক্রমী প্রতিবাদিনীর ইতিহাস যে নেই তা নয়। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে বান্ছ্ড়া মেয়েদের জীবনের সঙ্গে এই প্রথাকে এমন ভাবে গেঁথে ফেলা হয়েছে, এমন ভাবে ছোটবেলা থেকে তাঁদের মগজধোলাই হয়েছে যে প্রতিবাদটা সে ভাবে দানা বাঁধতে পারেনি। এই অপ্রতিবাদে আরও ইন্ধন জুগিয়েছে দারিদ্র ও অল্পশিক্ষা।
প্রচলিত তথ্য অনুযায়ী, প্রায় দেড়শো বছর আগে ব্রিটিশ সরকার মালওয়া প্রদেশের নীমচ এলাকায় তাদের ‘গ্যারিসন’ তৈরি করে। সেনাদের শারীরিক চাহিদার জন্য মেয়ে দরকার। বুদ্ধিমান ব্রিটিশ সরকার পাশের রাজস্থান থেকে যাযাবর বান্ছ্ড়াদের নিয়ে এসে নীমচ, মান্ডসোর, রতলামের মতো কয়েকটা জায়গায় স্থায়ী বসতি তৈরি করে দেয়। যাযাবররা ঘর পেল, আর ব্রিটিশ সৈন্যরা মেয়ে। ব্রিটিশভোগ্যা বান্ছ্ড়া মেয়েরা মোটা টাকা নজরানা পেত। লোভ আর আলসেমি বেড়ে গেল ওই জনজাতির পুরুষের। মুফতে এত টাকা বাড়িতে এলে আর কষ্ট করে খেতি-বাড়ির দরকার কী? বরং মেয়েটাকে বাড়িতে রেখে যত্নআত্তি করা ভাল। সোনার ডিম দেওয়া হাঁস হাতের মুঠোয় রইল। যৌন পেশাই সামাজিক পরম্পরা হয়ে গেল বান্ছ্ড়া মেয়েদের। সরকারি হিসাবে মান্ডসোর-নীমচ-এর ৬৩টি গ্রাম আর রতলাম জেলা মিলিয়ে এখনও প্রায় ১২০০ বান্ছ্ড়া মেয়ে এই পেশার সঙ্গে জড়িত।
মান্ডসোর-এ ‘কন্যা উত্‌কর্ষ শিক্ষা কেন্দ্র গার্লস হস্টেল’-এর ওয়ার্ডেন বছর বাহান্নর শ্যামাদেবী মালভি বান্ছ্ড়া জনজাতিরই মেয়ে। আট ভাইবোনের সবচেয়ে বড়। পঁয়ত্রিশ-ছত্রিশ বছর আগে বাড়ি থেকে তাঁকেও প্রথা মেনে যৌন পেশায় নামার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। বিদ্রোহ করেছিলেন শ্যামা। পালিয়েছিলেন শহরে, এক ছোটবেলার বন্ধুর বাড়ি। তার পর নিজের চেষ্টায় উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে সরকারি কেরানির চাকরি জুটিয়েছিলেন এই সরকারি হস্টেলে। কাজ করতে করতেই বিএ পাশ করেন। এখন মালওয়া-র এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়ান এই পরম্পরার বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য।
শ্যামার কাছেই জানা গেল বান্ছ্ড়া ‘খিলাওয়ারি’দের খুঁটিনাটি। মোটামুটি সব বাড়িতেই একটা ‘আউট-হাউস’ থাকে। খালি ঘর, মেঝেতে চাটাই পাতা। এটাই খদ্দের মনোরঞ্জনের ‘ডেরা’। খদ্দের মানে মূলত নীমচ-মান্ডসোর হাইওয়ে আর মুম্বই-জয়পুর হাইওয়েতে যাতায়াতকারী ট্রাক-ড্রাইভারেরা। এখন অবশ্য আশপাশের গেস্টহাউস-হোটেলেও মেয়েদের ডাক পড়ে। রাস্তাচলতি অনেক গাড়িও মেয়েদের তুলে নেয়। সন্ধে নামার আগেই হাইওয়ের দু’পাশে দাঁড়াতে শুরু করেন খিলাওয়ারিরা। প্রায় প্রত্যেকের হাতেই একটা করে টর্চ। অন্ধকার হাইওয়েতে ছুটন্ত ট্রাক, ম্যাটাডর, গাড়ির উপর এসে পড়ে টর্চের আলো। ওটাই ইঙ্গিত: এখানে পরিষেবা মিলতে পারে। খদ্দের-প্রতি মোটামুটি ২০০-৮০০ টাকা। খদ্দেরকে বাড়ির ডেরায় নিয়ে গেলে দর ঠিক করেন বাড়ির বাবা-দাদারাই।
খিলাওয়ারির ট্রেনিং-এর ব্যাপারটাও জবরদস্ত। মেয়েদের দশ-বারো বছর বয়স হতে না হতে তাঁদের তৈরি করতে শুরু করে দেন পরিবার বা পাড়ার কোনও পুরনো খিলাওয়ারি। এতে কোনও রাখঢাক নেই। খদ্দেরদের মাথা কী করে ঘোরাতে হবে, কী রকম হবে সাজসজ্জা-হাঁটাচলা, গর্ভনিরোধক ব্যবস্থাই বা কী ভাবে নিতে হবে, কী কী যৌন কলাকৌশল জানতে হবে ক্লাস চলে নিয়মিত। কিছু দিন নিজেদের সঙ্গে ‘শিক্ষার্থী’দের হাইওয়ের ধারে নিয়ে যান পোক্ত খিলাওয়ারিরা। তা ছাড়া বাড়ির লাগোয়া ডেরায় দরজা-জানলার ফাঁকফোকরে চোখ লাগিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় হবু খিলাওয়ারিকে। ট্রেনিংয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ এটাও। অন্ধকারে চুপ করে দাঁড়িয়ে ঘরের ভিতর চলতে থাকা যাবতীয় ঘটনা দেখতে হবে!
আপশোস করছিলেন শ্যামা। ‘এখন ছেলেমেয়েরা এত বেশি স্কুল-কলেজে যাচ্ছে, টেলিভিশন দেখছে, খবরের কাগজ পড়ছে, তাও এই প্রথা থেকে বেরোতে পারছে না। আসলে বান্ছ্ড়া-রা অন্য কাজ করতে ভুলে গিয়েছে। গরিবি মারাত্মক জিনিস। কাঁচা টাকার লোভ সামলাতে পারছে না কিছুতেই।’ প্রথম-প্রথম নীমচের গীতা বাই-এরও অসহায় লাগত। তার পর পরিস্থিতির চাপে সব সয়ে গেল। পরিবারের ইচ্ছাতেই একের পর এক অপরিচিত পুরুষ তাঁকে ক্ষতবিক্ষত করল বছরের পর বছর। গীতা কী চান, কেউ জানতে চাইলেন না।
বেশ কয়েক বছর পর বাবা-দাদারা গীতার বিয়ের কন্যাপণ রাখলেন ৩ লাখ টাকা। অত টাকা দেওয়ার মতো কোনও বর মিলল না। নীমচের এক প্রান্তে একটা ঝরঝরে কামরায় পঞ্চান্ন বছরের গীতা এখন একা পড়ে রয়েছেন। সারা শরীরে ঘা। মাছি ভনভন করে। এক গ্লাস জল গড়িয়ে দেওয়ারও কেউ নেই। তাঁর সারা জীবনের শরীর-নষ্ট-করা রোজগার পরিবারের লোক খেয়ে উড়িয়ে দিয়েছেন। গীতার বান্ধবী সম্পত দেবী মারা গিয়েছেন বছরখানেক আগে, এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। একা রোগগ্রস্ত জীবনযাপন ছিল তাঁরও।
প্রশাসন-পুলিশ কী করছে? গীতা, রেখা, নিশা-র মতো অনেক খিলাওয়ারির বক্তব্যএকটা গোটা জনজাতি যদি কোনও প্রথাকে সমর্থন করে, আঁকড়ে চলতে ভালবাসে, তা হলে পুলিশ কী করবে? এটা তো মানসিকতার ব্যাপার। বান্ছ্ড়া-রা তাঁদের এই প্রথা সম্পর্কে অসম্ভব স্পর্শকাতর। এ ব্যাপারে কোনও আলোচনাতেই বিশ্বাসী নন। তা হলে পুলিশকে পুরো একটা জনজাতির বিরুদ্ধে যেতে হয়। ভোটব্যাঙ্কের এত বড় ক্ষতি কোন রাজনৈতিক দল চাইবে? কারা পুলিশকে নির্দেশ দেবে?
তবু চেষ্টা একেবারে হয়নি তা নয়। ১৯৯৯ সালে পুলিশ ‘নির্মল অভিযান’ চালু করল। বান্ছ্ড়া মেয়েদের এই পেশা থেকে বার করে স্কুল-কলেজে ভর্তি করা শুরু হল। গণবিবাহ আসর বসিয়ে অনেককে বিয়ে দেওয়া হল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উদ্যোগও ফিকে হয়ে এল। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে আর এক বার এগোনো হয়েছিল। অভিযান চালিয়ে হাইওয়ে থেকে ধরা হল ৮৮ জন খিলাওয়ারিকে। পুলিশ তাঁদের প্রস্তাব দিল: হয় জেলে চলো, নয়তো বিয়ে করো। নিজের পছন্দের ছেলে থাকলে ভাল, নয়তো পুলিশই ভাল ছেলে খুঁজে দেবে, যৌতুক হিসাবে দেবে ৬ হাজার টাকা। ৪৪ জন খিলাওয়ারি বিয়েতে রাজি হয়েছিলেন। বাকিদের ‘জবালি’ প্রকল্পে পুনর্বাসন দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছিল। এক বছর কাটতে-না-কাটতে সেই প্রকল্পও মুখ থুবড়ে পড়েছে। নীমচ-মান্ডসোর হাইওয়ের ধারে আবার মেয়েদের ভিড় জমছে।
খিলাওয়ারিদের সঙ্গে কোথায় যেন মিল পাচ্ছিলাম দেবদাসীদের। দেবদাসী প্রথায় শুধু বাড়তি একটা দেবীমাহাত্ম্যের ককটেল রয়েছে। প্রকাশ্যে দেখানো হচ্ছে এঁরা ঈশ্বরের সেবিকা। আর আড়ালে এঁদের ভোগ করছেন রাজা বা জমিদার শ্রেণী। শতাব্দীর পর শতাব্দী, বংশানুক্রমিক ভাবে দেবদাসীরা তাঁদের ভোগ্যা হয়ে রইলেন।
খিলাওয়ারিদের চার পাশেও তো সমাজ-পরিবার সম্মানের বৃত্ত অটুট। ঐতিহ্যের মহিমাও রয়েছে। কিন্তু ভিতরে যুগ-যুগ ধরে বহতা আদিম পেশা। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ২০০৪ সালের রিপোর্টের ২০০ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা আছে দেবদাসী প্রথা সরকারি ভাবে বিলুপ্ত হওয়ার পর তাঁরা বেশির ভাগই পুনর্বাসন পাননি। ফলে কাছাকাছি শহরে সরাসরি যৌন পেশায় নামতে বাধ্য হয়েছেন। ঠিক এই জায়গাতেই দেবদাসীদের সঙ্গে একাকার হয়ে যায় নতুন করে মান্ডসোর-নীমচ হাইওয়ের ধারে দাঁড়ানো বান্ছ্ড়া মেয়েগুলো।
শুধু এ দেশের মধ্যেই বা তাকাচ্ছি কেন? বছর ছ’সাত আগে চমকে দিয়েছিল মার্কিন ছবি: ‘মেময়ার্স অব আ গেইশা’। ‘গেইশা’ মানে জাপানি ঐতিহ্যবাহী নারী ‘এন্টারটেনার’, শিল্পী। নাচ, গান, বাজনা, আদবকায়দা, ফ্লার্টিংয়ে তুখড়। আর অবশ্যই যৌনতায়। এ-ও জাপানের ‘পরম্পরা’। বাইরে এঁদেরও ভরপুর সামাজিক সম্মান। রাজকীয় জীবনযাপন।
এখানেও প্রশিক্ষণপর্ব রয়েছে। এ ক্ষেত্রেও ৮-৯ বছর বয়স থেকে শুরু হয় মেয়েদের শেখা। পুরোদস্তুর গেইশা হওয়ার আগের ধাপে থাকা নাবালিকাকে বলা হয় ‘মাইকো’। নাচ-বাজনার তালিমের পাশাপাশি কেমন ভাবে মুখে বিখ্যাত সাদা মেক-আপ করতে হবে, কেমন হবে চুল বাঁধা বা কিমোনো পরার স্টাইল, কী ভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলে মোহিত করতে হবে পুরুষকেসব কিছুর টানা, কষ্টসাধ্য ট্রেনিং হয়। তবে মাইকো-র উত্তরণ হয় গেইশা-তে।
কিন্তু আজকের জাপানের গেইশারা ধাপে ধাপে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছেন আজকের ভারতের খিলাওয়ারিদের থেকে। জাপানের ফুলেফেঁপে ওঠা অর্থনীতি, বিপুল শিল্পোন্নতি এবং পরিচ্ছন্ন পুনর্বাসন নীতি গেইশাদের নতুন প্রজন্মের সামনে জীবনধারণের অনেক সরণি খুলে দিয়েছে। তাঁরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পার হচ্ছেন। কম্পিউটার চালাচ্ছেন, কলকারখানায়-শিল্পসংস্থায় চাকরি পাচ্ছেন। অন্য পেশা বেছে নিচ্ছেন। কিছু শহর কিংবা রিসর্ট টাউনে কিছু গেইশা এখনও রয়ে গিয়েছেন। তাঁরাও কাজ করেন নিজেদের শর্তে, নিজেদের তৈরি নিয়মে, কারও যৌনদাসী হয়ে থাকেন না। যৌন পেশা চালাবেন না শুধু ‘এন্টারটেন’ করার কাজ করবেন, সেটা আধুনিক গেইশা নিজে ঠিক করেন। বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের নিজস্ব ইউনিয়ন অফিস রয়েছে। কোনও গেইশাকে ক্লাব বা পার্টির জন্য ভাড়া করতে হলে, স্টেজ পারফর্ম্যান্সের জন্য চাইলে বা পর্যটন কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হলে কাছাকাছি ইউনিয়ন অফিসে যোগাযোগ করে তাদের বেঁধে দেওয়া রেট ও সময় মেনে চুক্তি করতে হয়। লেখিকা লিজা ডালবি তাঁর গেইশা-বিষয়ক বইয়ে বলেছেন, ‘আধুনিক জাপানে এক গেইশার সেক্স লাইফ একান্ত ভাবে তার আপনার।’
এই জায়গাতে গেইশা আর খিলাওয়ারির একাত্মতার সুতোটা ছিঁড়ে যায়। তাঁদের চার পাশে সমাজের বুনে দেওয়া ঐতিহ্য-মর্যাদার মিথটাকে বাস্তবে পরিণত করতে পেরেছেন গেইশা-রা। উলটো দিকে, খিলাওয়ারিদের ঘিরে তৈরি হওয়া সামাজিক স্বীকৃতির আস্তরণ ফুঁড়ে প্রকট হচ্ছে শুধু তাঁদের যৌন পরিচয়টুকু। অন্ধকার নীমচ-মান্ডসোর হাইওয়েতে টর্চ হাতে নিজেদের আলাদা অস্তিত্ব খুঁজে পাচ্ছেন না খিলাওয়ারিরা।

ছবি: সুমন চৌধুরী



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.