|
|
|
|
সৌজন্যেই বাঁধা রইল আশরফের সফর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
জয়পুরের রামবাগ প্যালেসে মধ্যাহ্নভোজনের পর দীর্ঘ করমর্দন হল। কিন্তু কূটনৈতিক সৌজন্যের বাইরে গড়াল না ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের চাকা।
সৌজন্যের খাতিরে পাক প্রধানমন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরফের অজমের সফরে জল না ঢাললেও, যথাসম্ভব নিচু তারেই বাঁধা হয়েছিল এর স্বর। কেন্দ্রের তরফে তাঁকে নয়াদিল্লি আসার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়নি এক বারও। জয়পুরে আশরফকে স্বাগত জানাতে পাঠানো হয়েছিল শুধু বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদকে।
আজ নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় ৫০ মিনিট পর রাজস্থানের মাটি ছোঁয় রাজা পারভেজ আশরফের বিমান। সেখান থেকে খুরশিদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ সারেন বাষট্টি বছর বয়সী পাক প্রধানমন্ত্রী। একেবারে এলাহি
রাজস্থানি কায়দায় - ডাল বাটি
চুরমা, মেথি সব্জি, মকাই শাহ্জাদি, মিসসি রোটি, পাঁঠার মাংস, শেষ পাতে রসমালাই সাজিয়ে আপ্যায়ন করা হয় এই ভিভিআইপি অতিথিকে। এর পরই হেলিকপ্টারে চড়ে অজমের শরিফের উদ্দেশে রওনা হন আশরফ ও তাঁর সঙ্গীরা। |
|
আশরফের সঙ্গে খুরশিদ। শনিবার জয়পুরে। ছবি: পিটিআই |
মৈনুদ্দিন চিস্তির দরগার প্রধান কালই জানিয়েছিলেন, নিয়ন্ত্রণরেখায় পাক সন্ত্রাসের প্রতিবাদে রাজা পারভেজকে স্বাগত জানাবেন না তিনি। এ দিন দরগার দিওয়ান অনুপস্থিত থাকলেও বাদ যায়নি প্রথামাফিক আপ্যায়নের বহর। রীতিমতো ঢাক-ঢোল পিটিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান দরগা কমিটির সদস্যরা। প্রার্থনার পর চাদর ও ফুল উপহার দিয়েছেন আশরফও। নিয়ন্ত্রণরেখা যতোই উত্তপ্ত হয়ে উঠুক না কেন, দরগার ‘ভিজিটর’স বুকে’ কিন্তু বিশ্বশান্তির কথাই লিখে এসেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী।
সৌজন্যের আবহ অবশ্য এ দিন চিড়ও খেয়েছে এক বার। দরগার ভিতরে যখন চলছে অতিথি আপ্যায়ন, বাইরে তখন প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন রাজস্থানের আইনজীবীরা। দরগা থেকে হেলিপ্যাড গ্রাউন্ডে যাওয়ার পথে তাঁকে কালো পতাকা দেখাতে জড়ো হয়েছিলেন তাঁরা। তবে বিদেশি অতিথির নিরাপত্তা যাতে এতটুকু বিঘ্নিত না হয়, তাই সেখানে হাজার খানেক পুলিশ মোতায়েন করে রেখেছিল প্রশাসন।
পাক প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগত সফরে আসছেন জানানো হলেও গত দশ দিন ধরে ইসলামাবাদের তরফে এ নিয়ে কার্যত চাপ তৈরি করা হয়েছিল সাউথ ব্লকের উপরে। পাকিস্তান চেয়েছিল একেবারে ঘরোয়া স্তরে হলেও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে একটা বৈঠক সারতে। গত বছর পাক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি যে ভাবে তীর্থ-কূটনীতি করেছিলেন, ঠিক সেই ধাঁচে এ বারও পাক নেতৃত্ব রথ দেখা এবং কলা বেচা একসঙ্গেই
করতে চেয়েছিলেন।
আসলে ভোট যে বড় বালাই। সে ভারত হোক কি পাকিস্তান। দু’ক্ষেত্রে পরিস্থিতি অবশ্য দু’রকম। ভারতের কাছে লোকসভা ভোটের দোরগোড়ায় যেমন পাকিস্তান-বিরোধী অবস্থান নিয়ে জাতীয়তাবাদের হাওয়া তোলাটা জরুরি, তেমনই পাকিস্তান আবার চায় তাদের দেশে ভোটের আগে কাশ্মীরকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসতে। নয়াদিল্লিকে আলোচনায় রাজি করাতে। পাকিস্তানে ভোট মে মাসে। আর এক সপ্তাহ বাদেই পদত্যাগ করবেন প্রধানমন্ত্রী পারভেজ আশরফ। তার ঠিক আগে ভারতকে আলোচনার টেবিলে (হোক না সেটা ঘরোয়া) টেনে নিয়ে এসে, কাশ্মীর, বালুচিস্তানের সন্ত্রাসে বিদেশি মদতের মতো বিভিন্ন প্রসঙ্গ তোলার উদ্দেশ্য ছিল জারদারি সরকারের। ভারতকে চাপে রাখতে পারলে পরবর্তী নির্বাচনে পিপিপি-র কিছুটা লাভ হতে পারে, এমন অঙ্কই কষছেন জারদারি।
অন্য দিকে মনমোহন সরকারের পক্ষেও এই ভোটের কারণেই পাকিস্তানের সঙ্গে কাঁধ মেলানো সম্ভব হচ্ছে না এই মুহূর্তে। আগামী বছরে লোকসভা নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে। গুজরাতের নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীর জয়ের পর বিজেপিকে ঠেকাতে জাতীয়তাবাদের টোটকাই দরকার কংগ্রেসের। তাই নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারতীয় সেনার মাথা কেটে নেওয়ার পর, যথেষ্ট আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিয়েছে কেন্দ্র। সম্প্রতি সংসদের দু’টি কক্ষেই পাকিস্তানের উদ্দেশে কঠোর বার্তা পাঠিয়েছেন মনমোহন সিংহ। তাঁর বক্তব্য, এই ধরনের ‘বর্বরোচিত’ ঘটনা প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্কে অবশ্যই ছায়াপাত করবে। মুম্বই সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা না করলে পাকিস্তানের সঙ্গে কথা বলা যে অর্থহীনএমনটাই বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
তাই আজ আশরফের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে অজমেরের হেলিকপ্টারে তুলে দিয়েই সঙ্গে সঙ্গে দিল্লি ফিরলেন বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে খুরশিদ জানান, কোনও ধরনের কূটনৈতিক বিনিময়ই হয়নি তাঁদের মধ্যে। তাঁর কথায়, “খোজাই পাক প্রধানমন্ত্রীকে এখানে টেনে এনেছেন।” তাই কূটনীতি আলোচনার সময় এটা নয়। |
|
|
|
|
|