• নৃত্যশিল্পী ঝিনুক চক্রবর্তী প্রতিষ্ঠিত ‘নট নিক্কন আর্ট অ্যান্ড ডান্স কালচারাল সোসাইটি, জলপাইগুড়ির আয়োজনে ২-৩ ফেব্রুয়ারি জলপাইগুড়ি সরোজেন্দ্র দেব রায়কত কলাকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হল উত্তর-পূর্বাঞ্চল লোকনৃত্য উৎসব। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্রীমতী দীপ্তি দত্ত ও জলপাইগুড়ি মহকুমা তথ্য সংস্কৃতি আধিকারিক শ্রী ধীমান চক্রবর্তী। নট নিক্কন ও স্পর্শ (ইম্ফল)-এর শিল্পীদের মণিপুরী নৃত্যানুষ্ঠান দিয়ে উৎসবের উদ্বোধন। প্রথম দিন মণিপুরের ইম্ফল থেকে এসেছিল লোকনৃত্যের দল ‘স্পর্শ’। তাদের প্রথম নিবেদন ‘পুঙ্গচলম’-এ মুগ্ধ করেছে দর্শকদের। পরে তারা উপস্থাপন করলেন ‘লাইহারাওবা’ ও ‘মৈতৈ’-র সংমিশ্রণে ‘লেইসাম’, যার অর্থ সৃষ্টি। ময়নাগুড়ির ‘তুকখা অ্যাকাডেমি অফ পারফর্মিং আর্ট’-এর দীনেশ রায় ও দীপ্তি রায়ের পরিচালনায় পরিবেশন করে রাজবংশী লোকনৃত্য। ৩রা ফেব্রুয়ারি বেলা ৩টেয় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের লোক নৃত্য বিষয়ক সেমিনারে বোড়ো মেচ রাভা জনজাতির লোকনৃত্য বিষয়ে বক্তব্য রাখেন দারেন্দ্র ঈশ্বরারী। সাঁওতাল, ওঁরাও প্রভৃতি আদিবাসী নৃত্য প্রসঙ্গে বলেন বিমলেন্দু মজুমদার। অসমের মিরি, মিকির, বাসলা, কার্বি প্রভৃতি বিভিন্ন জনজাতি ভিত্তিক বিহু নৃত্যের রকমফের নিয়ে বক্তব্য রাখেন বিহু শিল্পী ও গবেষক রঞ্জুমনি শইকিয়া। সন্ধ্যায় নটনিক্কনের নিজস্ব অনুষ্ঠান ‘ফ্লেভার অফ ফোক’।
• ভাষা দিবস উপলক্ষে সাহিত্য সভার আয়োজন করেছিল ভারতীয় সাংস্কৃতি পরিষদ ও সুরধুনী সাহিত্য পত্র। জলপাইগুড়ির সুভাষভবনে তাঁদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতি ছিলেন প্রবীণ সাহিত্যিক-সাংবাদিক দেবাশিস ঘোষ। অনুষ্ঠান শুরুর আগে ভাষা শহিদ এবং স্থানীয় নাট্য ব্যক্তিত্ব বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। নগেন্দ্রনাথ বর্মনের উদ্বোধনী সঙ্গীতের পর ভাষা দিবস সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন পরিষদের সভাপতি অসীম সরকার। অন্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন সুভাষ কর্মকার, সপ্তার্শ্ব ভৌমিক, রিনা রায়, শ্যামল সরকার। স্বরচিত কবিতা পাঠ করলেন শাওনি দে, বেলা দে, পূর্ণপ্রভা বর্মন, মহুয়া চক্রবর্তী, মানিক সান্যাল, বিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রণব ভৌমিক, গোপাল দে সরকার এবং প্রসেনজিৎ রায়। সঙ্গীত পরিবেশনার দায়িত্ব নেন চন্দনা চক্রবর্তী, রণজিৎ চক্রবর্তী, মলয় কুমার ধর, সন্তোষ কুমার বর্মন ও রাজেশ সরকার। শেষে সভাপতির স্বরচিত কবিতাপাঠ। সঞ্চালনাটা সুরধুনী সাহিত্য পত্রের সম্পাদক লক্ষ্মণ কর্মকার চমৎকার সামলান। সব মিলে অন্য বিকেল।
• জলপাইগুড়ির নাট্যদলগুলোর মধ্যে বান্ধব নাট্য সমাজ একটি উল্লেখযোগ্য নাম। ১৯২৪-এ তার পথ চলা শুরু শহরের প্রাণকেন্দ্র কদমতলায়। তার নিজস্ব রঙ্গমঞ্চ। এক সময় নিয়মিত তাদের অনুষ্ঠান ছাড়াও নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত। সপ্তাহের ফাঁকা দিনগুলোতে দীপ্তি টকিজকে প্রেক্ষাগৃহটি ভাড়া দেওয়া হয়। বর্তমানে বয়সের ভারে ও অনাদরে জরাজীর্ণ অবস্থা এটির। সংস্থার সদস্য বরুণ ভট্টাচার্য বলেন, “ষাট-সত্তরের দশকে তাদের রাজদর্শন, নহবত, ত্রিংশ শতাব্দী, শ্রীমতী ভয়ঙ্করী, তুঘলক, চিচিং ফাঁক, দুর্যোধন বেশ সাড়া ফেলে। এ শহরের কথা প্রসঙ্গে উঠে এল এই সংস্থার রবীশ্বর ভট্টাচার্য, সত্য সান্যাল,সন্তু মুখোপাধ্যায়, শরণ চট্টোপাধ্যায়, প্রীতি মুখোপাধ্যায়, রুণু চক্রবর্তী প্রমুখ নাটকের প্রবীণ গুণিজনের কথা। ৩রা মার্চ মঞ্চে অভিনীত হল তাদের নতুন নাটক ‘গদ্য পদ্য প্রবন্ধ’। নাটকটি উৎসর্গ করা হল সংস্থার প্রয়াত অভিনেতা গৌতম চক্রবর্তীকে। চল্লিশ বছর আগে জোছন দস্তিদার রচিত এই নাটক এই সময়ে প্রাসঙ্গিক বলে মনে করেন নাটকের মুখ্য অভিনেতা ও নির্দেশক বরুণ ভট্টাচার্য। এ নাটকে প্রাপ্তি হল পুরানোদের সঙ্গে উপল, পুরঞ্জয়, প্রীতম, শুভাশিস, মৃত্যুঞ্জয়, পৌলমীদের মত একঝাঁক তরুণ-তরুণীর সাবলীল অভিনয়।
• ১৭ ফেব্রুয়ারি শিলিগুড়ি দীনবন্ধু মঞ্চে মঞ্চস্থ হল ‘ঋত্বিক’ প্রযোজনায় ভিন্ন স্বাদের নাটক ‘শিকড়ের খোঁজে মরিচঝাঁপি’। অনেকে ‘ডকুমেন্টারি থিয়েটার’ বলে মন্তব্য করেছেন। নাটকের শুরু দেশভাগ ১৯৪৭ সাল। শেষ ১৯৭৯ সাল সুন্দরবনের মরিচঝাঁপিতে। দেশভাগের পরে পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রচুর মানুষ এ পারে চলে আসতে বাধ্য হয়। তাঁদের নিয়ে শুরু হয় রাজনৈতিক টানাপোড়েন। অবশেষে কেন্দ্রীয় সরকার উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের জন্য দন্ডকারণ্যকে বেছে নেয়। কমিউনিস্ট দলের নেতৃত্ব আশ্বাস দেন রাজ্যে ক্ষমতায় এলে পশ্চিমবঙ্গে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করবে। উদ্বাস্তুরা আশায় বুক বাঁধেন। ১৯৭৭ সালে রাজ্যে পালবদল ঘটে। সুদিন এল ভেবে উদ্বাস্তুরা আসে এই রাজ্যে। সুন্দরবনের মরিচঝাঁপিতে গড়ে তোলে বসতি। এর পরের ইতিহাস শুধুই বিশ্বাসঘাতকতার। নির্মমভাবে গুলি চালিয়ে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে উচ্ছেদের কাহিনি। কলা রসিকের অভিমত, নাট্যকার মলয় ঘোষ যথাসম্ভব নিখুঁত প্রযোজনা উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন।
• তিন মার্চ,২০১৩ উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র-ভানু মঞ্চে শম্ভু মিত্র স্মৃতি পুরস্কার ও সম্বর্ধনা পেলেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক দিলীপ কুমার রায়। ১৯৮৬ সালে উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার কলেজে শিক্ষকতায় যোগ দেন তিনি। ৩৬টিরও বেশি বই লিখেছেন তিনি। উত্তরবঙ্গের জনজাতি বিষয়ে তাঁর বই রয়েছে। অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লেখক অমর মিত্র। |