|
|
|
|
বরাদ্দে বঞ্চিত জেলা |
পিছিয়ে পড়া গ্রামের উন্নয়নে ব্যর্থ প্রশাসন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
খরচ করতে না পারায় পরপর দু’বছর বরাদ্দ মেলেনি। আগামী আর্থিক বছরেও একই আশঙ্কা দেখা দিল পিছিয়ে পড়া গ্রামের উন্নয়নের ক্ষেত্রে। গত অর্থবর্ষে তো ব্লক স্তর পর্যন্ত বরাদ্দ অর্থ পৌঁছনোই যায়নি। ফলে, একটি টাকাও খরচ হয়নি। এক মাসের মধ্যে কতটা হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আর তা না হলে আগামী আর্থিক বছরের বরাদ্দ থেকেও বঞ্চিত হবে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা।
যদিও প্রশাসনিক কর্তাদের দাবি, ২০১১-১২ সালের পরিকল্পনা তৈরি। চলতি মাসের মধ্যেই টাকা ব্লক স্তরে নামিয়ে দেওয়া হবে। শুরু করে দেওয়া হবে। তারই সঙ্গে ২০১২-১৩ সালের জন্যও রাজ্যের কাছে অর্থ চাওয়া হবে। কিন্তু ২০১১-১২ সালের বরাদ্দ অর্থ কেন ২০১২-১৩ সাল শেষ হতে চললেও খরচ করা যায়নি? কেনই বা তা ব্লক স্তরে নামানো যায়নি? এর কোনও সদুত্তর মেলেনি প্রশাসনিক কর্তাদের কাছ থেকে।
জেলার ২৯০টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ৭ হাজার ৫৮০টি গ্রাম রয়েছে। জেলার ১৮টি ব্লক পিছিয়ে পড়া বলে চিহ্নিত। আবার তার মধ্যে সব থেকে পিছিয়ে পড়া গ্রামের সংখ্যা হল ৬৩১টি। এই গ্রামগুলির জনসংখ্যা ২ লক্ষ ৭ হাজার ৫০৮ জন। সরকারি ভাবে সমীক্ষা করেই পিছিয়ে পড়া গ্রাম চিহ্নিত করা হয়েছিল। গ্রামীণ এলাকার উন্নয়নে রাজ্য ও কেন্দ্রের নানা প্রকল্প রয়েছে। এই সব প্রকল্প ছাড়াও পিছিয়ে পড়া গ্রামগুলির উন্নয়নে অতিরিক্ত বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। ২০০৭-০৮ আর্থিক বছর থেকে ওই বরাদ্দ দেওয়া শুরু হয়। ওই অর্থবর্ষে জেলা পেয়েছিল ১ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা। ২০০৮-০৯-এ বরাদ্দ হয় ১ কোটি ৭ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা। ২০০৯-১০ ও ২০১০-১১ আর্থিক বছর গড়িয়ে গেলেও যে টাকা খরচ করতে পারেনি প্রশাসন। প্রথম বরাদ্দের ৭ লক্ষ ৭ হাজার ও দ্বিতীয় বরাদ্দের ৫ লক্ষ ৯ হাজার টাকা এখনও পড়ে রয়েছে। ফলে ২০০৯-১০ ও ২০১০-১১ আর্থিক বছরে এই খাতে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কোনও বরাদ্দও পায়নি!
২০১১-১২ সালের জন্য নতুন করে পরিকল্পনা তৈরি করেছিল প্রশাসন। ১ কোটি ২৭ লক্ষ টাকার প্রকল্প ছিল। তার মধ্যে ১ কোটি ১৫ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা বরাদ্দ করেছিল সরকার। ২০১২-১৩ আর্থিক বছরের মাঝামাঝি সময়ে সেই টাকাও মিলে যায়। কিন্তু মার্চ মাস পড়ে গেলেও সেই টাকা খরচ করা দূর ব্লক স্তরেই নামানো যায়নি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি আর্থিক বছরের মধ্যে খরচের হিসাব না দিলে চলতি আর্থিক বছরের জন্য বরাদ্দও মিলবে না। ফলে আরও একটি বছর বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত হবে জেলা! পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েও কেন প্রশাসন অর্থ খরচে ব্যর্থ। অভিযোগ, প্রশাসনিক উদাসীনতার কারণেই অর্থ খরচ করা যায়নি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, ওই টাকায় পিছিয়ে পড়া গ্রামগুলির মানুষকে গরু, ছাগল, মুরগি কিনে দেওয়া হবে। ধান রোপণ, ধান ঝাড়াই, আলু-বাদাম লাগানোর যন্ত্র কিনে দেওয়া হবে, কিছু সেচবাঁধ, ঢলবাঁধ তৈরি করে দেওয়া হবে, পানীয় জলের নলকূপ বসানো হবে।
পরবর্তীকালে প্রাণী পালনের বিষয়টি বাতিল করা হয়। কারণ, ২০০৮ সালে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় বার্ড ফ্লু হয়েছিল। বার্ড ফ্লু-র পর জেলায় প্রাণী পালনের উপর জোর দেয় সরকার। জঙ্গলমহল সহ জেলার বিভিন্ন পিছিয়ে পড়া ব্লকে গরু, ছাগল, মুরগি, শুয়োর কেনার জন্য পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জন্য ৩ কোটি ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু তার মধ্যে গত ৪ বছরে মাত্র ১ কোটি ৭৬ লক্ষ ৮২ হাজার ৯৮৮ টাকা খরচ করতে পেরেছিল প্রাণী সম্পদ বিকাশ বিভাগ। কেন বাকি টাকা খরচ করতে পারেনি? প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে দিকে ওই টাকায় যে ছাগল, মুরগি কিনে গ্রামবাসীকে দেওয়া হয়েছিল তা অতি নিম্নমানের। ফলে গ্রামবাসীর হাতে তুলে দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই তা মরে যেতে থাকে। তারপরই ওই প্রকল্প থমকে যায়। যার টাকা এখনও খরচ করা যায়নি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি রাজ্য সরকার ওই অর্থ দ্রুত খরচের নির্দেশ দিয়েছে। তার জন্য পরিকল্পনাও তৈরি হয়ে গিয়েছে। ৪ বছর আগের টাকা খরচ করতেই প্রাণিসম্পদ বিকাশ বিভাগ হিমশিম খাচ্ছে। নতুন করে ফের এই প্রকল্পেও কাজ দিলে তা কতটা বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। তাই ওই বিষয়গুলি বাদ দিয়ে বেশি করে কৃষি সরঞ্জাম কেনা, সেচবাঁধ, ঢলবাঁধ ও নলকূপ তৈরির জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে প্রশাসন। যত বেশি সম্ভব কৃষকদের হাতে কৃষি যন্ত্র তুলে দেওয়া যায় সেই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন একটাই, হাতে আর দেড় মাসও সময় নেই। এর মধ্যে কি এই অর্থ খরচ করা সম্ভব? প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মার্চ মাসের মধ্যেই এই অর্থ খরচ করে নতুন পরিকল্পনা পাঠিয়ে টাকা চাইতে হবে রাজ্যের কাছে। নাহলে ২০১২-১৩ আর্থিক বছরের বরাদ্দ থেকেও বঞ্চিত হতে হবে জেলাকে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সব থেকে পিছিয়ে পড়া গ্রামের সাধারণ মানুষ। |
|
|
|
|
|