কাজাকস্তানের রাজধানী আলমাটি বিষয়ে বিশ্বদুনিয়ার বিশেষ কৌতূহল নাই। তাহার খবরাখবর বিষয়ে (সম্ভবত রাশিয়া ছাড়া) আর কোনও বড় দেশই তেমন ওয়াকিবহাল নহে। তবে গত সপ্তাহে এই অনুল্লেখযোগ্য শহরটিতে যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটিয়া গেল, তাহার পর অন্তত পরমাণু-রাজনীতির ইতিহাসে আলমাটি পাকাপোক্ত আসন করিয়া লইল বলিয়াই মনে হয়। ইরান এবং পি-৫+১ (ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, চিন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানি), এই কয়েকটি দেশের একত্র বৈঠকের পর দেখা গেল উভয় পক্ষের প্রতিনিধিরাই হাস্যমুখে বাহির হইয়া আসিতেছেন ও বৈঠক ‘সফল’ বলিয়া স্বীকার করিতেছেন। ইরানিরাও। শুনিতে যত অদ্ভুতই হউক, ইরানি এবং মার্কিন মুখে একই সঙ্গে ‘সফল’ আলাপের বার্তা পাওয়া মঙ্গলগ্রহে জল মিলিবার মতো বৃহৎ সুসংবাদ। ইতিপূর্বে এই পি-৫+১ গোষ্ঠীর সহিত ইরানের যত বার বৈঠক ঘটিয়াছে, প্রতি বারই আলোচনার পর তিক্তবিরক্ত মুখে প্রতিনিধিরা বাহির হইয়াছেন, সাফল্য তো মেলেই নাই, বরং পরিস্থিতি মন্দতর হইয়াছে। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারির এই সুঘটনায় তাই নূতন আশা ও উদ্যমের সঞ্চার হইয়াছে, পশ্চিম এশিয়ায় ইরানকে ঘিরিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশ যে প্রবল চাপপ্রদানের রাজনীতি করিয়া যাইতেছে, এবং ফলে সেই অঞ্চলের সামগ্রিক পরিবেশ যে ভাবে বিষায়িত হইতেছে, তাহার কিঞ্চিৎ উপশম হইতেও পারে, এই সম্ভাবনার প্রথম স্ফুরণ গোচর হইতেছে।
ইরানের প্রতিনিধি সাইদ জালিলি ও বিদেশমন্ত্রী আলি আকবর সালেহি এই বৈঠকের মধ্যে যে আশা দেখিতেছেন, তাহার প্রধান ভিত্তি, পি-৫ গোষ্ঠীর পক্ষ হইতে কয়েকটি শর্তের প্রত্যাহার। পরিবর্তে একটি প্রধান শর্তের উপর জোর দিতে চায় তাহারা, আপাতত ফোর্দো পরমাণু-আগারের কার্যক্রম বন্ধ রাখা, এবং উন্নত ইউরেনিয়াম নির্মাণের পরিমাণ ২০ শতাংশ হ্রাস করা। তেহরান নীতিগত ভাবে রাজি। তাহাদের পাল্টা দাবি, পরিবর্তে যেন গৌণ শর্তগুলি লাঘব হয়: নিষেধাজ্ঞার পরিমাণ কমে।
চুক্তির বিশদ ব্যাখ্যা বা বিবরণের অপেক্ষা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এই বারের চুক্তিটির পিছনের মনোভাবটি। ওয়াশিংটন কি শেষ পর্যন্ত বুঝিতেছে যে, কেবলমাত্র আলোচনার মাধ্যমেই বিষয়টির সমাধানসূত্র সন্ধান জরুরি? অন্যান্য সব পথই তো পরীক্ষিত হইয়াছে। নিষেধাজ্ঞা, হুমকি, কূটনৈতিক চাপ কোনওটিতেই লাভ হয় নাই। এমনকী প্রেসিডেন্ট ওবামা যখন তুরস্ক-ইরানের মধ্যে পরমাণু আদানপ্রদান আটকাইয়া দেন, ফল দাঁড়ায়, তুরস্কের ইউরেনিয়াম আমদানির পরিবর্তে ইরান নিজেই ওই ইউরেনিয়াম উৎপাদন করিয়া লয়। সুতরাং কোনও নিষেধাজ্ঞাই যথেষ্ট নয়, আলোচনাই একমাত্র পথ। দেরিতে হইলেও ওবামা এখন সে দিকেই অগ্রসর হইতেছেন। ইরান বিষয়ে অপেক্ষাকৃত নরমভাবাপন্ন রিপাবলিকান সেনেটর চাক হেগেলকে নূতন মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব হিসাবে নিয়োগের মধ্যেও সেই ইঙ্গিত। আশা করা যাক, ওয়াশিংটনের তেহরান-দর্শন পাল্টাইতেছে। |