সম্পাদকীয় ১...
আবার কানাগলিতে
ত সপ্তাহে হায়দরাবাদে কাশ্মীরি তরুণের মৃত্যু পুলিশের মতে আত্মহত্যা, পরিচিতদের ধারণা: হত্যা। এই ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার উত্তর কাশ্মীরের বারামুল্লায় বিক্ষোভ, সেনাবাহিনীর গুলি, আর এক তরুণের মৃত্যু সেনাবাহিনীর মতে তাহারা শূন্যে গুলি চালাইয়াছিল, তাহা ওই তরুণের মৃত্যুর কারণ হইতে পারে না, পুলিশের ধারণা অন্য রকম। এই মর্মান্তিক মৃত্যুর প্রতিবাদে কাশ্মীর উত্তাল। ঘটনার পরম্পরা একটি সত্য স্পষ্ট করিয়া দেয়। অবিশ্বাসের সত্য। কিংবা বিশ্বাসহীনতার। আফজল গুরুর ফাঁসির পর প্রায় এক মাস অতিক্রান্ত। এই এক মাসে কাশ্মীরে উদ্বেগের পারদ ক্রমশ চড়িয়াছে। গত কয়েক দিনে সেই উদ্বেগ সত্য প্রমাণিত। বিক্ষোভ, পাথর ছোড়া, সেনাবাহিনী, গুলি, মৃত্যু, জনজীবনে বিপর্যয় চেনা পরম্পরা। রাজ্যের দশটি জেলায় কার্ফু জারির ঘটনা বুঝাইয়া দেয়, প্রশাসন কতটা সন্ত্রস্ত। সেই সত্যই প্রতিফলিত হইয়াছে রাজ্য বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার বক্তৃতায় ও আচরণে। বারামুল্লার ঘটনার প্রতিবাদে বিরোধী দল পিডিপি’র বিধায়করা কক্ষ ত্যাগ করিলে ওমরের আবেগকম্পিত ঘোষণা, বিরোধী জনপ্রতিনিধিদের হৃদয়ে যে ক্রোধ, তাঁহার হৃদয়েও সেই ক্রোধ কোনও অংশে কম নয়, কিন্তু তিনি যে আসনে বসিয়া আছেন তাহার দাবি তাঁহাকে মিটাইতে হয়, তাই তিনি দায়িত্ব অস্বীকার করিয়া কক্ষ ত্যাগ করিতে পারেন না। অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী কার্যত সেনাবাহিনী তথা পরোক্ষে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি তাঁহার তীব্র ক্ষোভের কথা বিধানসভায় দাঁড়াইয়া জানাইয়া দিয়াছেন।
ওমর রাজনীতিক। তদুপরি প্রশাসনের কর্তা। তাঁহার আবেগ কতটা আন্তরিক এবং কতটা কৌশল, সেই প্রশ্ন থাকিবেই। কিন্তু তাহার আলোচনায় না গিয়াও একটি কথা স্বচ্ছন্দে বলা চলে। কাশ্মীরের মানুষ কেন্দ্রীয় সরকারের উপর এবং তাহার নিয়ন্ত্রণাধীন সেনাবাহিনীর নিকট ন্যায়সঙ্গত আচরণের ভরসা রাখিতে অপারগ। ওমরের আবেগ যদি আন্তরিক হয় তাহা হইলে এ কথা স্বপ্রকাশ। কিন্তু উহা যদি তাঁহার আত্মরক্ষার কৌশল হয়, তাহা হইলেও বুঝিতে হইবে, তিনি কেন্দ্র ও সেনার প্রতি রাজ্যবাসীর বিরূপতা বুঝিয়াই নিজেকে আড়াল করিতে চাহিতেছেন। এই বিরূপতার মূলে রহিয়াছে গভীর অবিশ্বাস।
অথচ কাশ্মীর উপত্যকার পরিবেশ পরিস্থিতির ক্রমশ উন্নতি হইতেছিল। দুই দশকের মধ্যে ২০১২ সালের মতো ‘ঘটনাবিহীন’ বছর আর পাওয়া যায় নাই, অর্থাৎ অশান্তির মাত্রা সর্বনিম্নে নামিয়াছিল। পর্যটকদের সংখ্যাস্ফীতি তাহার অভ্রান্ত প্রমাণ। আফজল গুরুর মৃত্যুর পরে এই ধারায় ছেদ পড়িবার আশঙ্কা ছিল প্রবল। কিন্তু আশঙ্কা ছিল বলিয়াই প্রশাসনের অতিমাত্রায় সতর্ক থাকা উচিত ছিল, বিশেষত কেন্দ্রীয় সরকার ও সেনাবাহিনীর, কারণ উপত্যকায় ক্ষমতা তাঁহাদেরই হাতে, রাজ্য সরকার নিধিরাম সর্দার মাত্র। সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন-এর (আফস্পা) অন্তত আংশিক প্রত্যাহারের দাবি এখনই না মানিতে পারুক, কেন্দ্র এই বিষয়ে বিবেচনা করিবার একটি আন্তরিক উদ্যোগ করিতে পারিত। সেনাবাহিনী জনবিক্ষোভের মোকাবিলায় বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করিতে পারিত। দিল্লির কর্তারা সামরিক কর্তাদের কাশ্মীরের রাজ্য প্রশাসনের সহিত অনেক বেশি সমন্বয় সাধন করিয়া চলিবার নির্দেশ দিতে পারিতেন। ইহার কোনওটিই যে তাঁহারা করিয়াছেন, এমন কোনও সংকেত নাই। বরং প্রতিটি ক্ষেত্রেই কাশ্মীরকে উপনিবেশ বলিয়া গণ্য করিবার মানসিকতা প্রকট। এই মানসিকতাই উপত্যকার বিরাগ এবং বিরূপতায় ইন্ধন জোগাইয়া আসিতেছে, যে বিরাগ এবং বিরূপতার সুযোগ লইয়া জঙ্গি বিচ্ছিন্নতাবাদ আপন শক্তি বৃদ্ধি করিয়া চলে এবং সীমান্ত-পারের সুযোগসন্ধানীরা আপন পরিকল্পনা রূপায়ণে তৎপর হয়। কাশ্মীরের দুই প্রধান দল ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং পিডিপিকে সঙ্গী করিয়া নাগরিকদের মন জয় করিতে পারিলেই কেন্দ্রীয় সরকার দীর্ঘমেয়াদি স্থিতির ভিত তৈয়ারি করিতে পারিত। বাস্তব ইহাই যে, দুই প্রধান দল কার্যত একমত কেন্দ্রীয় সরকার তথা তাহার সামরিক বাহিনীর প্রতি বিরূপ মনোভাবে। কাশ্মীর প্রশ্নকে নেহরু ভারতীয় গণতন্ত্রের অগ্নিপরীক্ষা হিসাবে দেখিতেন। এখনও তাহা গণতান্ত্রিক ভারতের অগ্নিপরীক্ষা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.