|
|
|
|
|
|
|
সিনেমা সমালোচনা... |
|
অক্সিজেন দিলেন কৌশিক |
ও পার বাংলার নায়িকা জয়া আহেসানও বেশ ভাল। লিখছেন সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায় |
অরিন্দম শীল একজন প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা।
‘আবর্ত’ তাঁর পরিচালনায় প্রথম ছবি। সে দিক থেকে বলতে গেলে সিনেমা মাধ্যমটিকে ব্যবহার করার রীতি, প্রকরণ, কলাকৌশল যথেষ্ট আয়ত্ত করেই তিনি প্রথম ছবি তৈরিতে হাত দিয়েছেন। এবং খুব বেশি দ্বিধা না করেই বলে ফেলা যায় যে কার্যত তিনি সফল হয়েছেন।
যদিও মূল গল্পটি নিয়ে খুব উচ্ছ্বসিত হওয়া গেল না। কারণ এই রকম গল্প বাংলা সিনেমার বিষয় হিসেবে বহু অতীত থেকে নানা ভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। এমনকী বলিউডও এই বিষয় নিয়ে বেশ কিছু ছবি তৈরি করেছে। টাইটেল কার্ডের শেষে সত্যজিৎ রায়কে পরিচালক ‘আলোর দিশারী’ বলে উল্লেখ করেছেন। ছবির মূল গল্পের সঙ্গে সত্যজিৎ পরিচালিত ‘সীমাবদ্ধ’র একটা বাহ্যিক মিল আছে তো বটেই, এ ছাড়াও ‘দুই পৃথিবী’ নামক ছবিটির কথা মনে পড়ছে, যেখানে উত্তমকুমার এক স্নেহময় দাদা এবং ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষী দুর্বিনীত ভাই।
‘আবর্ত’র নায়ক টোটা রায় চৌধুরী (শ্যামল) এই গল্পে আশৈশব জীবনের সিঁড়ি বেয়ে অনেক ওপরে উঠতে চেয়েছেন। সেই আরোহণের পথে তিনি পারিবারিক মূল্যবোধ থেকে শুরু করে আরও অনেক আবেগই নির্দয় ভাবে ছেঁটে ফেলেছেন। ছোটবেলায় টোটা দাদাকে ঈর্ষা করে দাদার সব মার্কশিট পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর ‘রুথলেস’ হয়ে ওঠার সেই শুরু। তার পর তিনি স্ত্রীর অনাগত সন্তানকে ভ্রূণ অবস্থাতেই নষ্ট করে ফেলেন। কারণ সফলতার পথ তিনি আরও মসৃণ করতে চান। এই প্রক্রিয়ায় অভ্যস্ত হতে হতে তিনি তাঁর কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে ওঠার পিচ্ছিল লড়াইয়ে শামিল হন যেখানে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় (রুণু সান্যাল) এবং ঠিক এই জায়গাটাতেই চিত্রনাট্য অত্যন্ত দুর্বল হয়ে ওঠে। |
|
আবর্ত
টোটা, শাশ্বত, জয়া, আবির, কৌশিক |
কারণ লড়াইটার কোনও বাস্তবসম্মত গ্রহণযোগ্যতাই তৈরি হয় না। এবং কর্পোরেট পলিটিক্স কী, পদের জন্য লড়াইয়ে কোন চালে কে কাকে মাত করেছে, কিংবা বোর্ডরুমের মধ্যে এই ভাবে এক জন বাইরের কাউকে ডেকে আনা যায় কি না, এ সব বিষয় অগভীর লাগে ও অযৌক্তিক মনে হয়। কিন্তু এই অংশটাকে বাদ দিলে টোটার ব্যক্তিগত জীবনের পরিসরে গল্প যে ভাবে টানাপোড়েনটা দেখায় তা যথেষ্ট সত্যনিষ্ঠ। যেমন সত্যিই মনকে স্পর্শ করে দাদার চরিত্রে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিনয়। যত বার তিনি পর্দায় এসেছেন তত বার অতি সবুজ এক বিশাল গাছের মতো বিশুদ্ধ অক্সিজেন ছড়িয়ে দিয়ে গিয়েছেন দর্শক হৃদয়ে। একটি দৃশ্যের কথা না বললেই নয়, যেখানে কৌশিক বাচ্চাদের ‘খোকাকে ঘুম পাড়ানোর’ কবিতা পড়ছেন। আর কক্ষচ্যুত শ্যামল পেছনে এসে দাঁড়িয়েছেন। তার পর ভাই ও দাদার বৃষ্টি ও অশ্রুভেজা আশ্চর্য এক মিলন।
ছবিতে শুধু কৌশিক নন, ভাল অভিনয় করেছেন টোটা রায় চৌধুরী, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। আবির চট্টোপাধ্যায়, তাঁর ছোট্ট চরিত্রে বেশ সাবলীল। অবশ্য ক্রিকেটার হিসেবে তাঁকে কেমন মানাল সেটা বোঝা গেল না। খ্যাতনামা ক্রিকেটার শুধু নেট প্র্যাকটিস করছেন দেখলে দর্শক ঠোঁট ওল্টাবেই। বলছি না, যে চিত্রনাট্যের দুর্বল দিক এইটাই। কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ শুধু মৌখিক হয়েই রয়ে গেল ছবিতে।
‘আবর্ত’র নায়িকা জয়া আহেসান। তিনি ও পার বাংলার অভিনেত্রী। তাঁর স্থির, শান্ত, অভিনয় দিয়ে জয়া ছবিটির কেন্দ্রীয় দায়িত্ব বহন করেছেন। তাঁর কণ্ঠস্বরটিও চাপা ও নিঃশঙ্ক। জয়ার অভিনয় বেশ ভাল। তাঁর অভিনীত চারু চরিত্রটিকে দর্শকের আপন মনে হয়। এবং তাঁর প্রতি এক ধরনের ‘মরাল সাপোর্ট’ ও শ্রদ্ধা তৈরি হয়। কিন্তু এটা বোঝা যায় না চারুর মতো দৃঢ়চেতা ও স্পর্শকাতর মেয়ে কেন তার স্বামীর ভুলত্রুটিগুলো শুধু পুতুলের মতো দেখে যায়। কেন কোনও প্রতিবাদ করতে পারে না। এবং স্বামীর অন্য নারী গমন, ভুল পথে পা বাড়ানো এ সব সে এত সহজে ক্ষমাই বা করে দেয় কী ভাবে?
সব মিলিয়ে এ সব প্রশ্ন ঠান্ডা পানীয়র গ্লাসের বিজবিজে ফেনার মতো ‘আবর্ত’ ছবিটার উপরিতলে উঠে আসেই।
গ্লোব সিন এন্টারটেনমেন্ট, সিনেমাইন ও মেপল প্রযোজিত এ ছবির আবহ, ক্যামেরা, সম্পাদনার বিষয়গুলি সন্তোষজনক। একটা আইটেম সং-এ স্বস্তিকাকে দেখতে বেশ ভাল লাগে। ভাল লাগে বরুণ চন্দকে শ্যামলেন্দুর ভূমিকায়। দুলির চরিত্রে রেশমী ঘোষের অভিনয়ও বেশ সপ্রতিভ। |
|
|
|
|
|