গ্রামের সবাই শোলা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও পেয়েছেন মঙ্গলকোটের বনকাপাশি গ্রামের তিন জন শোলা-শিল্পী। তা সত্ত্বেও নিজেদের শিল্প বাজারে বিক্রি করতে ‘দালাল’দের উপর ভরসা করতে হত এই শিল্পীদের। তাই লাভ বিশেষ হত না। নিজেদের শিল্পপণ্যের বিক্রির জন্য দীর্ঘদিন ধরে একটি স্থানীয় বাজারের দাবি করে আসছিলেন এই শিল্পীরা। অবশেষে মিটতে চলেছে তাঁদের সেই দাবি। কাল, রবিবার বনকাপাশি গ্রামের স্কুলের সামনে ‘শোলার হাট’-এর শিলান্যাস করবেন রাজ্যের ক্ষুদ্র, কুটির, বস্ত্র ও ভূমি দফতরের প্রতিমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ।
বর্ধমান জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বনকাপাশি গ্রামে শিল্পী রয়েছেন ৬০০ জন। তাঁরা ছাড়াও গ্রামের প্রায় দু’হাজার মানুষ পরোক্ষে যুক্ত এই শিল্পের সঙ্গে। বাংলায় তো বটেই, দেশ বিদেশেও বহু জায়গায় কদর রয়েছে এখানকার শোলা শিল্পের। রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী আশিস মালাকার বলেন, “বিভিন্ন সময়ে আমেরিকা, ফ্রান্স-সহ বিভিন্ন দেশে শোলা শিল্পের উপর প্রশিক্ষণ দিয়ে এসেছি আমরা। আমাদের গ্রামের শিল্পীদের কাজ বিভিন্ন প্রদেশে ছড়িয়ে রয়েছে।” প্রসঙ্গত, কিছু দিন আগেই লক্ষ্মৌ গিয়েছে এ গ্রামের শোলার সরস্বতী। |
গ্রামের শিল্পী অরূপ পাল, কাশীনাথ পালেরা বলেন, “আমাদের এখানে কোনও বাজার নেই। সে কারণে পুজো উদ্যোক্তারা দালালের পাল্লায় পড়ত। আমরাও দালালদের উপর নির্ভর করতাম। আমাদের লাভের অনেকটা অংশই যেত দালালদের পকেটে।” মিলানকান্তি পাল, নরহরি ঘোষেরা বলেন, “এটাই আমাদের জীবিকা। কিন্তু কোনও স্থায়ী বাজার না থাকায় কেবলমাত্র বরাতের উপর ভরসা করে আমাদের শোলার জিনিস তৈরি করতে হত। আশিসবাবু বলেন, “বাজার হলে শোলার মডেল তৈরির প্রবণতা এ বার বাড়বে।” আশিসবাবুর বাবা আদিত্যবাবু ও ঠাকুমা কাত্যায়ণী দেবী রাষ্ট্রায়ত্ত পুরস্কার পেয়েছেন। ২০০৯ সালে ‘শিল্পগুরু’ উপাধি পান তিনি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কাত্যায়ণী দেবী ও আদিত্যবাবুর হাত ধরেই বনকাপাশি গ্রামের শোলা শিল্পের প্রসার বেড়েছে। ‘শোলা পীঠ’ বলে পরিচিতি পেয়েছে বনকাপাশি গ্রামের।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বনকাপাশির স্কুলের সামনে প্রায় ১.৯৪ একর জমিতে ওই হাট তৈরি করতে খরচ হবে এক কোটি টাকা। ইতিমধ্যেই ব্লক অফিসে এসে গিয়েছে সেই টাকা। জেলাশাসক ওঙ্কারসিংহ মিনা বলেন, “ওখানে আমরা শোলার বিপণন কেন্দ্র গড়তে চাইছি। এ ছাড়াও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে।” ওই হাটে স্টল, ব্যাঙ্কিং পরিষেবা ও বিপণন ব্যবস্থা থাকবে বলে জানা গিয়েছে। স্বপনবাবু বলেন, “বিপণনের ব্যবস্থা থাকলে শোলা শিল্পীদের আর্থিক নিশ্চয়তা বাড়বে। বিভিন্ন জায়গার মানুষ শোলার তৈরি জিনিস কিনতে বনকাপাশিতে আসবেন। তবে ‘শোলার হাট’ তৈরির প্রকল্পকে ‘চমক’ বলেই মনে করছেন সিপিএমের ভাগীরথী-অজয় জোনাল কমিটির সম্পাদক দুর্যোধন সর। তিনি বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ‘শোলার হাট’ প্রকল্পের শিলান্যাস করে চমক তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে।” তৃণমূলের ব্লক সভাপতি (মঙ্গলকোট) অপূর্ব চৌধুরীর পাল্টা জবাব, “রাজ্য সরকার শোলার হাট তৈরি করে সত্যিই চমকে দেবে।” |