শাহবাগ চত্বরে নারী দিবসের বিশেষ সমাবেশে বোমা ফাটাল দুষ্কৃতীরা। স্থানীয় সময় বিকেল পৌনে পাঁচটা নাগাদ পাশের শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজের পাঁচতলা থেকে পর পর দুটি হাতবোমা সমাবেশ লক্ষ্য করে ছোড়া হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)-এর এক সদস্য বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন। তবে মিনিট পনেরো বিরতি দিয়ে ফের সমাবেশ শুরু হয়। চলে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত। নারায়ণগঞ্জে গণজাগরণ মঞ্চের এক সংগঠকের কিশোর ছেলেকে দু’দিন আগে অপহরণ করা হয়েছিল। আজ দেহ মিলেছে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ শাহবাগে বিশেষ সমাবেশে মহিলা-শিশুদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সমাবেশ শুরুর অনেক আগে থেকেই আশপাশের প্রায় দু’কিলেমিটার রাস্তা মানুষে মানুষে ভরে যায়। লাউড স্পিকারে বাজতে থাকে গণসঙ্গীত। হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে, মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে ছোটরাও রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দেয়। অনুষ্ঠানে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতী নারীদের সম্মাননা দেওয়া হয়। ছিলেন বিদেশমন্ত্রী দীপু মণিও। প্রায় ৪০ মিনিট সমাবেশে ছিলেন তিনি। বিদেশমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল বৈষম্যহীন সমাজ গঠন। আজ তরুণ সমাজ জাগ্রত হয়ে সেই চেতনা ফিরিয়ে এনেছে।
দ্বিতীয় বক্তা হিসেবে শাহবাগ সংগঠনের এক নেত্রী কানিজ ফতেমা যুথি বক্তৃতা দেওয়ার সময়েই হাসপাতালের বারান্দা থেকে বোমাগুলি ছোড়া হয়। সমাবেশের একটি অংশে ছুটোছুটি শুরু হলে বক্তৃতা থামিয়ে সকলকে শান্ত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে বোমা হামলায় না দমে সমাবেশের মেয়েরাই দুষ্কৃতীদের ধরতে হাসপাতালের পাঁচতলায় উঠে যান। এক মহিলা নাট্যকর্মী জানান, তিনি পাঁচতলার বারান্দায় এক জোড়া চটি পড়ে থাকতে দেখেন। কিন্তু কে এই কাজ করেছে, তা কেউই বলতে সাহস করেননি। এর পরে শাহবাগ থানার পুলিশ পাঁচতলা থেকে ১৫ জনকে আটক করে। তাদের মধ্যে ক্যান্টিনের কিছু কর্মীও রয়েছেন।
এর আগে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ঢাকায় থাকার সময়ে তাঁর হোটেলের সামনে একটি পটকা ফাটানো হয়। পুলিশের অভিযোগ, জামাতে ইসলামির ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবিরের কর্মীরা এই কাজ করেছিল। কিন্তু এ দিনের বোমাগুলির আওয়াজ তার চেয়ে বেশি ছিল। জামাতের পাশাপাশি প্রধান বিরোধী দল বিএনপি-ও শাহবাগের আন্দোলনের বিরোধিতা করে একে ভারতের চক্রান্ত ও ইসলাম-বিরোধী বলে অভিহিত করেছে। ইতিমধ্যেই আন্দোলনের এক প্রধান সংগঠক রাজীব হায়দরকে দুষ্কৃতীরা গলা কেটে খুন করেছে। প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে রোজই চিঠি পাঠানো হচ্ছে ইমরান, লাকি ও অন্য সংগঠকদের। শাহবাগের সমর্থনে অন্য শহরগুলিতে যে সব গণজাগরণ মঞ্চ হয়েছে, মাঝে মাঝেই সেগুলি ভাঙচুর করছে জামাত ও বিএনপি-র কর্মীরা। নারায়ণগঞ্জে গণজাগরণ মঞ্চের প্রধান সংগঠক রফিউর রাব্বির ছেলে তনভির দু’দিন আগে অপহৃত হয়। আজ শীতলক্ষ্যা নদীর ধারে তার মরদেহ মেলে। পুলিশ জানিয়েছে, শ্বাসরোধ করে তাকে খুন করা হয়েছে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এই খুলের প্রতিবাদে কাল নারায়ণগঞ্জে হরতাল ডেকেছে।
শাহবাগের এ দিনের সমাবেশে আন্দোলনকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ১০ মার্চ উত্তরার পরে ১৩ মার্চ চট্টগ্রামে দু’টি সমাবেশে শাহবাগের তরুণ নেতৃত্ব অংশ নেবেন। ১৬ মার্চ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সম্প্রীতি সমাবেশ করারও ডাক দেওয়া হয়েছে। |