রাতের টহলদারিতে পুলিশের হাতে পাকড়াও নাবালক বর-কনে
ন্ধকারে বেশ জোরেই চলছিল বসিরহাট থানার জিপ। চালকের আসনে রাতের টহলদারিতে বের হওয়া স্বয়ং আইসি। সম্প্রতি বসিরহাট থানা এলাকায় যে ভাবে চুরির উপদ্রব, দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে সে জন্যই এই ব্যবস্থা।
চালকের আসনে বসেই রাস্তার দু’পাশে নজর রাখছিলেন আই সি। বার বারই পুলিশের জিপকে ওভারটেক করার চেষ্টা করছিল পিছনের একটি গাড়ি। বার তিনেকের চেষ্টায় যখন তা সফল হতেই গাড়িটার দিকে তাকালেন আইসি। দেখলেন গাড়ির ভিতরে কনের সাজে একটি মেয়ে আর তাকে ঘিরে রয়েছে বেশ কয়েকটা ছেলে। মুখ দেখে বুঝলেন সকলকেই কমবয়সী। পুলিশের সহজাত প্রবৃত্তিতে উঁকি দিল সন্দেহ। এত রাতে কোথায় যাচ্ছে ওরা? ততক্ষণে গাড়িটি অনেক দূর চলে গিয়েছে। তাতে কি? অগত্যা গাড়িকে তাড়া পুলিশের। শেষ পর্যন্ত ‘চোর-পুলিশ’-এর লড়াই থামল কালীমন্দিরে। ধরা পড়ল গাড়ির আরোহীরা। তবে ‘চোর’ নয়, বিয়ের উদ্দেশ্য বাড়ি পালানো দুই কিশোর-কিশোরী। সঙ্গে অবশ্য ছিল কয়েকজন বন্ধুও। ছিল পুরোহিতও।
মঙ্গলবার রাত ২টো নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে বসিরহাটের সংগ্রামপুরে একটি কালীমন্দিরে। সকলকেই আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। খবর দেওয়া হয় ছেলে ও মেয়ের বাড়িতে। আই সি শুভাশিস বণিক বলেন, “নাবালিকাকে ফুঁসলে নিয়ে বিয়ের চেষ্টার অভিযোগে নাবালক বর ও তার বন্ধু, গাড়ির চালক ও পুরোহিত-সহ ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
কি ঘটেছিল যে অত রাতে বিয়ের জন্য ওই নাবালিকাকে মন্দিরে নিয়ে এসেছিল তার প্রেমিক ও বন্ধুরা?
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই নাবালিকার বাড়ি স্বরূপনগর থানা এলাকায়। বাবা ব্যবসায়ী। নবম শ্রেণির ওই ছাত্রীর সঙ্গে পাশের গ্রামের বাসিন্দা একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রের প্রণয়ের সম্পর্ক তৈরি হয়। তার বাবা কর্মসূত্রে কলকাতার বাইরে থাকেন। প্রায় এক বছর ধরে প্রেম চলার পরে দু’জনে ঠিক করে তারা বিয়ে করবে। কিন্তু এও বুঝরে পারহে যে তাদের দু’জনের বিয়ের বয়স না হওয়ায় কারও বাড়িই এই বিয়ে মেনে নেবে না। অগত্যা দু’জনেই পালিয়ে বিয়ে করবে ঠিক করে। সেই মতোই বন্ধুদের সাহায্যে ওই দিন গভীর রাতে দু’জনে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। সঙ্গে ছিল কয়েকজন বন্ধুও। তারাই পুরোহিতের ব্যবস্থা করে। রাস্তায় যাতে কারও সন্দেহ না হয়, সে জন্য গাড়িতে উঠেই প্রেমিকার কপালে সিঁদুর লাগিয়ে দেয় ওই কিশোর। কিন্তু সবরকম চেষ্টা সত্ত্বেও ধরা পড়ে যেতে হল পুলিশের কাছে।
বুধবার বসিরহাট থানায় ওই নাবালক-নাবালিকার দাবি, তারা পরস্পরকে ভালবাসে। বাবা-মা মত দেবে না জেনেই তারা পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। থানায় এসেছিলেন বরের বাবা ও কনের মাও। তাঁদের কথায়, “আমরা চাইনি এখনই ওরা বিয়ে করুক। বুঝিয়েছিলাম পড়াশোনা করে সাবালক হয়ে তার পর বিয়ে করতে। কিন্তু ওরা কোনও কথাই শুনল না। ফলে সকলকেই অপমানিত হতে হল।” বুধবার ধৃতদের বসিরহাট এসিজেএমের আদালতে তোলা হলে বিচারকের আদেশে ওই কিশোর ও কিশোরীকে তাদের বাবা-মায়ের রাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। বাকিদের আর এ ধরনের ঘটনায় জড়িত না থাকার জন্য সতর্ক করে দেন বিচারক।
তবে এ সবের মাঝে ভীষণই বেকায়দায় পড়ে গিয়েছেন পুরোহিতমশাই। ভেবেছিলেন নাবালক নাবালিকা বিয়ে দেওয়ার জন্য ভাল দক্ষিণা নেবেন। কিন্তু তা করতে গিয়ে যে পুলিশের হাতে পড়তে হবে ভাবেননি। এ দিন থানায় বসে বারবারই স্বগতক্তি করছিলেন, “কয়েকটা টাকার লোভেই এই পরিণতি। গ্রামে ফিরে মুখ দেখাব কেমন করে?’’



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.