ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড-১ (র্যামোস-নিজ গোল)
রিয়াল মাদ্রিদ-২ (মডরিচ, রোনাল্ডো) |
রাত জেগে টিভিতে ম্যাচটা দেখার পর একটা প্রশ্নই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে পরের বার ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলারের ট্রফিটা কি রোনাল্ডোর হাতে যাচ্ছে?
মেসি বনাম রোনাল্ডো নিয়ে বিশ্ব ফুটবলের কচকচির মধ্যে ঢুকছি না। কারণ দু’জনের খেলার স্টাইল দু’রকম। মেসির স্কিল যেমন ঈশ্বরপ্রদত্ত। তেমনই রোনাল্ডোর গতি গবেষণার বিষয় ফুটবল বিশেষজ্ঞদের কাছে। কিন্তু ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড ম্যাচের পর রোনাল্ডোর আরও একটা গুণ চোখে পড়ল। অসহ্য চাপের মুখেও মাথা বরফের মতো ঠান্ডা রেখে ম্যাচ বার করার ক্ষমতা। ভাবুন, ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের এই মাঠ থেকেই ম্যাঞ্চেস্টার কোচ ফার্গুসনের হাত ধরে বিশ্ব ফুটবলে পরিচিতি পাওয়া রোনাল্ডোর। সেই মাঠে তিন-তিন বছর পর অন্য ক্লাবের জার্সিতে ভাল খেলার বিরাট প্রতিবন্ধকতা যে আবেগ, সে কথা ফুটবলার মাত্রই জানে। সেই তুমুল প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এক গোলে পিছিয়ে থেকেও রিয়াল মাদ্রিদকে ২-১ জেতানোর অন্যতম নায়ক রোনাল্ডো। প্রথম লেগে রিয়ালের ঘরের মাঠ বের্নাবৌয়ে দুরন্ত হেডে গোল করেছিল। তার পর পাঁচ দিনের মধ্যে বার্সেলোনাকে দু’বার হারানোর ক্লান্তি সামলে মঙ্গলবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ম্যান ইউয়ের বিরুদ্ধে রোনাল্ডোর জয়ের গোল দেখার পর বলতেই হচ্ছে, টাটকা ফর্মের বিচারে মেসির চেয়ে এই মুহূর্তে এগিয়ে ও-ই। |
ম্যাঞ্চেস্টারের গোলে বল ঢুকিয়ে সিআর সেভেন। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে। ছবি: এএফপি |
রোনাল্ডো-ক্যারিশমা বাদ দিলে কিন্তু ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের চরম উত্তেজনার লড়াইটা আমার মতে কার্যত গলা টিপে হত্যা করেছেন রেফারি। নিজের ফুটবল অভিজ্ঞতা থেকে মনে হল, যে দোষে ৫৬ মিনিটে নানিকে লাল কার্ড দেখিয়ে ম্যান ইউকে দশ জন করে দিলেন রেফারি, সেটা দিব্যি হলুদ কার্ড হতে পারত। ওটা ইচ্ছাকৃত ফাউল ছিল বলে মনে হয়নি আমার। আর ঠিক ওখান থেকেই ম্যাচটা পকেটে পুরে ফেলল রিয়াল। আমার বিচারে ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট এটাই। বরং নিজের বক্সে ম্যান ইউয়ের রাফায়েলের হাতে বল লাগানোর ঘটনা রেফারির চোখ এড়িয়ে গেল। রাফায়েল লাল কার্ড দেখলে অবাক হতাম না। তবে দশ জনে হলেই কি ম্যাচ হেরে বসতে হবে? নানি বেরিয়ে যাওয়ার পরেও তো ৩৪ মিনিট সময় পেয়েছিলেন ফার্গুসন। ফর্মেশন পালটে, ঠিকঠাক পরিবর্ত নামিয়ে ম্যাচটা ধরার জন্য যথেষ্ট সময়। উলটে ম্যাঞ্চেস্টার পরের ১২ মিনিটে দু’গোল খেয়ে বসল।
আগে প্রতিপক্ষকে বুঝে নিয়ে পরে আক্রমণএই নীতিতে ৪-২-৩-১ ছকে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে নেমেছিলেন মোরিনহো-ফার্গুসন দুই কোচই। তবে খেলার শুরুতে বোঝা যাচ্ছিল নিজের পুরনো মাঠে নেমে রোনাল্ডো আবেগ থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারছে না। মনে হয় ফার্গুসন প্রথম দলে রুনির মতো অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ডকে না রাখায় মানসিক ভাবে কিছুটা হলেও সুবিধা হয়েছিল রিয়ালের। ৪৮ মিনিটে র্যামোসের আত্মঘাতী গোলে ম্যাঞ্চেস্টার এগিয়ে গেলেও তাদের কোচ আরও একটা সুবিধা করে দিলেন প্রতিপক্ষকে। ঘরের মাঠে এগিয়ে থেকেও ফার্গুসন কেন যে রক্ষণাত্মক স্ট্র্যাটেজি আঁকড়ে ধরলেন বোঝা গেল না। মোরিনহোর মতো ধুরন্ধর কোচ যেন এই সুযোগটাই খুঁজছিলেন। মডরিচকে নামিয়ে উইং দিয়ে খেলাটা ছড়িয়ে দিয়ে, ছোট ছোট ওয়াল পাসে ম্যান ইউ রক্ষণে চাপ বাড়াল রিয়াল। যেটা শেষমেশ ধরে রাখতে পারেনি ফার্দিনান্দদের রক্ষণ। ১-১ করল মডরিচ। তার তিন মিনিটের মধ্যে ওজিল-ইগুয়াইন ওয়ান-টু খেলে যে বল বাড়িয়েছিল, সেটাকে নিজের অসাধারণ স্পিডে তাড়া করে ২-১ করল রোনাল্ডো।
আট দিনের মধ্যে রোনাল্ডো-ম্যাজিকে মেসির বার্সাকে দু’বার আর ফান পার্সি-রুনির ম্যান-ইউকে তাদের ঘরের মাঠে হারিয়ে মোরিনহো বুঝিয়ে দিলেন, স্প্যানিশ লিগে না হোক, ইউরোপ সেরার দৌড়ে রিয়াল এখন ফেভারিট।
|
পুরনো ঘরে রোনাল্ডো |
ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড ছাড়ার তিন বছর পর প্রথম বার ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে খেলতে নেমে
গোল ১
গোলের ভেতর শট ১০
গোলের বাইরে শট ১
পাস দিয়েছেন ৪২
সঠিক পাস ৫৯.৫%
‘‘ধন্যবাদ। আমাকে বিশাল আর অবিশ্বাস্য অভ্যর্থনা জানানোর জন্য।
ম্যাচটা রিয়াল
মাদ্রিদ জেতায়
আমি খুশি। কিন্তু ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের হারে আমি দুঃখিতও।”
—
টুইটারে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো |
|
|