ইটভাটার জন্য বেআইনি মাটি কাটা রুখতে উদ্যোগ
টভাটার বেআইনি মাটি কাটার দাপট ঠেকাতে পথে নামল প্রশাসন। গত মাসে ধরপাকড় চালিয়ে ১৭ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা জরিমানাও আদায় করেছে ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর। জঙ্গিপুরে সরকার অনুমোদিত ইটভাটা রয়েছে ৩০টি। আর গোটা মহকুমা জুড়ে বেআইনি ভাবে চালু রয়েছে অন্তত ৪৫টি ভাটা। গত কয়েক বছর ধরেই মহকুমা জুড়ে কৃষিজমি নষ্ট করে মাটি কাটছে ইটভাটার মালিকেরা। দু’বছর থেকে সামশেরগঞ্জ ও সুতির বিভিন্ন এলাকার গ্রামবাসীরা প্রশাসনের কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগও জানিয়েছেন। কিন্তু তা নিয়ে এত দিন কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্তারা। নতুন মহকুমাশাসক আসার পরেই অভিযোগ নিয়ে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। ২ জানুয়ারি পুলিশ, ইটভাটার মালিক ও ভূমি দফতরের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পরে প্রশাসনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, কৃষিজমি-সহ কোনও জমি থেকেই অনুমতি ছাড়া মাটি কাটা যাবে না। কিন্তু ভাটা মালিকেরা প্রশাসনিক নির্দেশকে উপেক্ষা করেই মাটি কাটা চালিয়ে যাওয়ায় পথে নামেনখোদ মহকুমাশাসক অরবিন্দকুমার মিনা। তিনি বলেন, “অনুমতি ছাড়া মাটি কাটতে দেওয়া হবে না। ধরপাকড় অভিযান চলবে।”
ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের মহকুমা আধিকারিক রফিকুদ্দিন আহমেদ বলেন, “শেষ পর্যন্ত ১০টি ইটভাটার বিরুদ্ধে এফআইআর রুজু হয়েছে। মাটিবোঝাই লরি আটকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ১৭ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা। মহকুমায় ৩০টি ইটভাটার অনুমতি থাকলেও বেআইনি ভাবে চলছে এর দ্বিগুণ। সেগুলিতেও ধরপাকড় চালিয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রে ১ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা করে রাজস্ব আদায় করা হয়েছে।”
মাঠ খুবলে তুলে নেওয়া হয়েছে মাটি। সুতিতে তোলা নিজস্ব চিত্র।
জঙ্গিপুর মহকুমার ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক রফিকুদ্দিন আহমেদ বলেন, “প্রতিটি ইটভাটায় আইনগত ভাবে ৩ একর জমি থাকার কথা। কিন্তু বহু ভাটাই চলছে কয়েকশো একর জমি নিয়ে। সবটাই কৃষিজমি নষ্ট করে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন এলাকায় কৃষিজমি কিনে তা থেকে পুকুর সমান মাটি কেটে নিয়ে জমা করা হচ্ছে ইটভাটায়। ফলে ওই সব জমি লাগোয়া কৃষিজমিগুলি ধসে পড়ছে। এমনকী কৃষিজমির মধ্যে দিয়ে ইটের পাঁচিল তুলে দেওয়ায় বহু জমিতেই সেচ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। প্রতিনিয়ত জমি হস্তগত করছে ইটভাটা মালিকেরা।”
তিনি আরও জানান, ইটভাটা মালিকেরা বহু এলাকায় নদীর পাড়, বাঁধের ধার থেকেও মাটি কাটছেন। সামশেরগঞ্জের কাঁকুড়িয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় নদীর ধারে যে ভাবে মাটি কাটা হয়েছে তাতে এলাকার জনজীবন বিপন্ন হতে বাধ্য। কিছু স্থানীয় দুষ্কৃতীর মদত নিয়ে কোথাও কোথাও ধরপাকড় এড়াতে রাতভর মাটি কাটা চলছে বলে খবর মিলছে। এগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হবে।
ইটভাটা মালিক সমিতির জঙ্গিপুর মহকুমার সভাপতি সমীর রায় অবশ্য বলেন, “নদী বা বাঁধের ধার থেকে কোথাও মাটি কাটা হলে তা বন্ধ করা উচিত। কিন্তু ইটভাটা চালাতে গেলে মাটির দরকার। সে মাটি কোথায় মিলবে?” সমীরবাবু বলেন, “মহকুমা প্রশাসনের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলাম সেকেন্দ্রায় ‘টুটিগঙ্গা’, খড়খড়ি নদী, কৃষ্ণশাইল, বংশবাটি বিল-সহ অন্তত ২০টি নদীতে বর্তমানে পলি জমেছে। প্রশাসন অনুমতি দিলে ইটভাটা মালিকেরা সেই মজে যাওয়া নদীর মাটি কেটে গভীর করে দেবে। এর ফলে নদীগুলিতে জলধারণ ক্ষমতাও বাড়বে। সেচের ব্যবস্থাও হবে। মাটি কাটার জন্য ‘রাজস্ব’ও দিতে রাজি ভাটা মালিকেরা। কিন্তু প্রশাসন তাতে রাজি না হওয়ায় মাটির সঙ্কটে পড়েছে ইটভাটাগুলি।”
ভূমি আধিকারিক বলেন, “যে সব নদীনালা কেটে ওরা মাটি নিতে চাইছেন, সেখানে মাটি কাটার অনুমতি দেওয়ার এক্তিয়ার জেলা প্রশাসনের নেই। ইটভাটা মালিকদের বলা হয়েছে, তারা যে জমির মাটি কাটবেন, সে জমির পরিচয় দিয়ে আবেদন করলে ভূমি দফতর তার অনুমতি দেবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.