ড্রাগনের ঘাড়ে পাল্টা নিঃশ্বাস ফেলার জন্য তৈরি হচ্ছে নয়াদিল্লি। আগামিকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে ভিয়েতনামের সঙ্গে ভারতের জাহাজ চলাচল সংক্রান্ত চুক্তি ছাড়পত্র পেতে চলেছে। দক্ষিণ চিনা সাগর নিয়ে বেজিংয়ের সঙ্গে হ্যানয় ও দিল্লির চলতি কূটনৈতিক যুদ্ধের প্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
ভারতের সাম্প্রতিক উদ্বেগের কারণ, সমুদ্রপথে চিনের ক্রমবর্ধমান সক্রিয়তা। তাদের বহু আলোচিত ‘স্ট্রিং অব পার্লস’ নীতির মূল কথা, ভারতকে চার দিক থেকে ঘিরে ক্রমশ কৌশলগত চাপ বাড়িয়ে যাওয়া। পাকিস্তানের গদর বন্দরের উন্নয়নের জন্য চুক্তি সই, বঙ্গোপসাগরের দ্বীপগুলিতে গোয়েন্দা-ঘাঁটি গড়া, তাইল্যান্ডে খাল তৈরি, কম্বোডিয়ার সঙ্গে সামরিক চুক্তি, মায়ানমারের কোকো দ্বীপে বিরাট নৌ-ঘাঁটি গড়ার পরিকল্পনা, বাংলাদেশের চট্টগ্রামে বন্দর তৈরিতে সহযোগিতা করা, হাম্বানতোতায় চিন এবং শ্রীলঙ্কার যৌথ উদ্যোগে বন্দর-কেন্দ্রিক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়া সমস্ত প্রকল্প চাপে রেখেছে সাউথ ব্লককে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই বেশির ভাগ চিনা (বকলমে) ঘাঁটিই ভৌগোলিক ভারতের খুব কাছে।
সুতরাং এই পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লির ভিয়েতনাম-তাস যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত বলে মনে করছেন কূটনীতির কারবারিরা। কাল মন্ত্রিসভায় দু’দেশের মধ্যে জাহাজ চলাচল সংক্রান্ত চুক্তির যে নোটটি আনা হবে, সেখানে বলা হয়েছে ‘চুক্তির ফলে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক এবং অন্যান্য জাহাজ চলাচল বাড়বে। ফলে দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক পোক্ত হবে।’ সমস্ত আন্তর্জাতিক আইন মেনেই যে এই চুক্তি করা হবে সে কথাও বলা হয়েছে।
গত বছর দক্ষিণ চিনা সাগরে ভিয়েতনামের তিনটি ব্লক থেকে ভারতীয় সংস্থার তেল উত্তোলন নিয়ে তীব্র আপত্তি তোলে বেজিং। বিতর্কের জেরে পিছিয়ে আসতে হয়েছে সংশ্লিষ্ট ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে। ভিয়েতনামকে রীতিমতো হুমকি দিয়ে চিনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘দক্ষিণ চিনা সাগরের বিতর্কিত এলাকায় কোনও ধরনের তৈল উত্তোলন এবং উন্নয়ন প্রকল্পের চূড়ান্ত বিরোধিতা করে বেজিং।’ এখানেই না থেমে ‘প্রাসঙ্গিক দেশগুলির’ প্রতি চিনের সাবধানবাণী, বেজিং-এর সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংহতিতে যেন তারা আঁচ না ফেলে।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় চিন পাশে দাঁড়ালেও গত চার দশকে এই দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের যথেষ্ট অবনতি হয়েছে। ১৯৭৯ সালে চিন এবং ভিয়েতনামের মধ্যে পুরোদস্তুর সীমান্ত যুদ্ধে যে তিক্ততা তৈরি হয়, তা এখনও কাটেনি। বরং দক্ষিণ চিনা সাগরে গতিবিধি এবং বাণিজ্যিক লেনদেন নিয়ে দু’দেশের সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়ে উঠেছে। তাই এমতাবস্থায় ভিয়েতনামের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে চিনের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলা সাউথ ব্লকের কৌশলের অঙ্গ বলেই মনে করা হচ্ছে। |