ভিতরে অতিরিক্ত গণিত।
বাইরে পাঁচ খাকি উর্দির চেনা অঙ্ক মিলছে না।
বাতাসে বসন্ত। ঘন-ঘন কোকিল ডাকছে। ঘরে-ঘরে সবে শেষে হয়েছে রাজ্যের শিক্ষা আঙিনায় ‘মেগা-শো’ মাধ্যমিক। কিন্তু এ যে ‘শেষ হইয়াও না হইল শেষ...’।
বিরাট স্কুল বর্ধমানের জোতরাম বিদ্যাপীঠ। তার বিরাট দরজা। বিরাট চত্বর। কিন্তু সব ধু-ধু করছে। ২৪ জন শিক্ষক, পাঁচ শিক্ষাকর্মী হাজির। অথচ ক্লাস নেই। যেখানে রোজ প্রায় ৯০০ ছাত্রছাত্রীর পাত পড়ে, সেখানে বুধবার মিড-ডে মিলের উনুনও জ্বলেনি।
রোজকার মতোই স্কুল গেটের সামনে হাজির পাঁচ পুলিশ কর্মী। ঠিক সময়ে গাড়ি চেপে এলেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্ধমান আঞ্চলিক কেন্দ্রের দুই কর্মী। হাতে দশটি প্রশ্নপত্র, খাতা একটিই। পরীক্ষার্থী যে এক জনই শক্তিগড় গার্লস হাইস্কুলের এলিজা লায়লা। বাড়ি বড়শূলে। বিষয় অতিরিক্ত গণিত। |
বাইরে থাকা পুলিশকর্মীরা তো প্রথমে থতমতই খেয়ে গিয়েছিলেন। বলছে বটে মাধ্যমিক, কিন্তু কই আজ তো অন্য দিনের মতো পিলপিল করে পরীক্ষার্থীরা ঢুকল না? মঙ্গলবারই তো জীবন বিজ্ঞান পরীক্ষা দিতে এসেছিল ৪৬১ জন। খটকা লাগায় ফের নিজেদের ডিউটি কোথায় ঠাহর করতে হাতে ধরা ‘কমান্ড সার্টিফিকেট’ (সিসি) উল্টেপাল্টে দেখে নেনে তাঁরা। তাতে স্পষ্ট লেখা, ‘মাধ্যমিক ডিউটি!’ তবে হলটা কী?
হকচকিয়ে গিয়েছেন শিক্ষকেরাও। প্রধান শিক্ষক অক্ষয়প্রসাদ রায় বলেন, “আমি টানা ছ’বছর এখানে রয়েছি। এমন কাণ্ড কোনও দিন দেখিনি!” পাশ থেকে তাঁর মুখের কথা কেড়ে সহ-শিক্ষক রবীনকুমার দাস বলেন, “আরে! আমি তো টানা ১৫ বছর এই স্কুলে রয়েছি। মাত্র একজনের জন্য একটা কেন্দ্র চলছে, পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে, আমার তো মনে পড়ে না!”
রহস্য ভাঙেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আঞ্চলিক কেন্দ্রের সহ-সচিব সন্তোষ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “আসলে আগের মতো মাধ্যমিকে প্রাপ্ত মোট নম্বরে ঐচ্ছিক বিষয়ের নম্বর যোগ হয় না। তাই ঐচ্ছিক বিষয়ে পরীক্ষার্থী নেই বললেই চলে। তবে যেখানে যত জন ঐচ্ছিক বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন, আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই নিয়েছি।”
এলিজার বাবা লুতুব আলি বলেন, “ঐচ্ছিক বিষয়ের প্রাপ্ত নম্বর স্নাতক স্তরে ভর্তির সময়ে কাজে লাগে। তাই মেয়ে পরীক্ষাটা দেবে বলে স্থির করে ফেলেছিলাম।” একা ঘরে স্বেচ্ছায় তিন ঘণ্টা অঙ্ক কষে ক্লান্ত এলিজা বলে, “ঘরে শুধু আমি আর নজরদার স্যার! কেমন যেন ভয়-ভয় করছিল। কোনও মতে শেষ করেছি।”
বিকেলে ফের মধ্যশিক্ষা পর্ষদের গাড়ি আসে। এলিজার অঙ্কের খাতা নিয়ে ফিরে যায়। হাঁফ ছেড়ে বাড়ির পথ ধরেন শিক্ষকেরা। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে থানার পথে ফেরে পুলিশভ্যান। |